X
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫
২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মা দুর্গা যখন সবার হলেন

উদিসা ইসলাম
২৩ অক্টোবর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০৯:০০

দুর্গা পূজা বলা হয়ে থাকে, মা দুর্গা যখন বনেদি ঘর থেকে বেরিয়ে সবার সম্মিলিত  অংশগ্রহণে তৈরি হওয়া মণ্ডপে এলেন, তখন থেকে তিনি সবার হলেন এবং তার এই বারোয়ারি ধরন সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছিল। এই বারোয়ারি পরবর্তীতে এসে সর্বজনীনে রূপ নেয়।
শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা মহোৎসব। আজ (বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর) মহা সপ্তমী। বাংলাদেশে বিশাল আয়োজনে প্রতিবছর দুর্গা উৎসব পালিত হয়। সর্বজনীনতা যেন এখানে ভীষণভাবে দৃশ্যমান। দুর্গাপূজা কবে থেকে বারোয়ারি হয়ে উঠলো, ধরা দিলো, সেই প্রশ্নই বারবারই সামনে আসে। গবেষক ও উদযাপনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা বলছেন, দুর্গা পূজাকে বারোয়ারি পূজা বলার যে প্রচলন, সেই বারোয়ারি বলতে বোঝায় বাঙালি হিন্দুদের সর্বজনীনতা। শব্দটি মূলত পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত।

অভিধান বলছে, ‘বারোয়ারি’ শব্দটির উৎপত্তি ‘বারো’ ও ‘ইয়ার’ (বন্ধু) শব্দ দুটি থেকে। প্রথম দিকে, দুর্গাপূজা কেবল কলকাতার ধনী বাবুদের গৃহেই আয়োজিত হতো। কিন্তু বারোয়ারি পূজা চালু হওয়ার পর ব্যক্তি উদ্যোগে পূজার সংখ্যা হ্রাস পায় এবং দুর্গাপূজা একটি গণউৎসবে পরিণত হয়।

দুর্গাপূজা এখন আর এককভাবে হয় না উল্লেখ করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা তো সকলের উৎসব। একসময় ছিল যখন কিনা এর ব্যয় ভার জমিদারেরা বহন করতেন এবং পুরো বিষয়টি তাদের তত্ত্বাবধানেই থাকতো। কোনও ব্যক্তি যদি আয়োজন করেন, তাহলে সর্বজনীনতা পাবে না সেটাই স্বাভাবিক। ফলে একসময় সেই প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে সকলের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে যখন উৎসবটির আয়োজন করা গেলো, যখন কিনা  কে দরিদ্র কে ধনী তার বিভাজন না করে, সবার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা গেলো, তখন সেটি সর্বজনীন উৎসব হয়ে উঠলো। যেটাকে আমরা বারোয়ারিও বলে থাকি।’

ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, ১৭৯১ মতান্তরে ১৭৬০ সালে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় ১২ জন ব্রাহ্মণ বন্ধু চাঁদা তুলে দুর্গাপুজো করেন, সেই থেকে বারোয়ারি পুজোর চল শুরু। কোনও একটা বাড়ির পুজোয় তাদের অংশ না নিতে দেওয়ায় ক্ষোভে ও প্রতিবাদে তারা এ কাজ করেছিলেন।কলকাতায় এ ধরনের পুজো প্রথম করেন কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ ১৮৩২ সালে। সেই বারোয়ারি পুজো সর্বজনীন পুজোয় পরিণত হয় ১৯১০ সালে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি বলতে গিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বিংশ শতকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে দুর্গা পূজা সমাজের বিত্তশালী এবং অভিজাত হিন্দু পরিবারের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পর এককভাবে পূজা করাটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে। এই সময় অভিজাত এবং বিত্তশালী হিন্দুদেরও প্রভাব-প্রতিপত্তি কমতে শুরু করে। মোটামোটি শতাব্দীর শেষের দিকে দুর্গা পূজা তার সর্বজনীনতার রূপ পায়। ফলে সারা বাংলাদেশে একক দুর্গাপূজা থেকে প্রথমে বারোয়ারি এবং পরবর্তীকালে সর্বজনীন পূজার চল শুরু হয়।

 

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইতিহাস গড়ে লাল দুর্গের রাজত্ব ধরে রাখলেন আলকারেজ
ইতিহাস গড়ে লাল দুর্গের রাজত্ব ধরে রাখলেন আলকারেজ
ঈদের তৃতীয় দিন টিভি পর্দায় যত নাটক
ঈদের তৃতীয় দিন টিভি পর্দায় যত নাটক
সাবেক সংবাদ উপস্থাপক তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু
সাবেক সংবাদ উপস্থাপক তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু
অনুভবের কথাই লিখতে চেষ্টা করেছি : সাম্য রাইয়ান
অনুভবের কথাই লিখতে চেষ্টা করেছি : সাম্য রাইয়ান
সর্বাধিক পঠিত
এবার ৪৪ জন আমলাকে অপসারণের দাবিতে পোস্টার
এবার ৪৪ জন আমলাকে অপসারণের দাবিতে পোস্টার
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক
মহিলা লীগ নেত্রীর কোরবানির মাংস ‘ভিক্ষা করার’ ভিডিও ভাইরাল
মহিলা লীগ নেত্রীর কোরবানির মাংস ‘ভিক্ষা করার’ ভিডিও ভাইরাল
সাবেক সংবাদ উপস্থাপক তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু
সাবেক সংবাদ উপস্থাপক তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু
রোগীর সেলাই-ড্রেসিং করা সেই ওয়ার্ডবয় গ্রেফতার
রোগীর সেলাই-ড্রেসিং করা সেই ওয়ার্ডবয় গ্রেফতার