(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২০ মার্চের ঘটনা।)
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র সমাজের প্রতি দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এবং জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি ১৯৭৩ সালের এদিন সন্ধ্যায় গণভবনে এসএম হলের ছাত্র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলছিলেন। নির্বাচনে বিপুল বিজয়ে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানানোর জন্য ছাত্রদলটি গণভবনে গিয়েছিল। ড. কামাল হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ছাত্ররা বঙ্গবন্ধুকে বিপুলভাবে মাল্যভূষিত করেন। তারা বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ, বঙ্গবন্ধু যেখানে আমরা আছি সেখানে প্রভৃতি স্লোগান দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অবশ্যই সাহায্য করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। দুষ্কৃতকারীদের ও সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রদের অবশ্যই নিজেদের শানিত করতে হবে। তা না হলে আগামীতে তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারবে না।’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল জয়ের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাও এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দিত করেন।
দুষ্কৃতকারীদের ধরিয়ে দিন
এদিন তদন্ত ও পরিদর্শন বিভাগের অধীন ২১ মার্চ থেকে ঢাকার তোপখানা রোডে একটি বিশেষ তথ্যকেন্দ্র খোলার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে সবাই যাতে সক্রিয় সহযোগিতা করতে পারে, সেজন্য এ তথ্যকেন্দ্র খোলা হবে। যারা দুষ্কৃতকারী, চোরাকারবারি, মুনাফাখোর ও বেআইনি অস্ত্র সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে খবর দেবেন, তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিদেশিদের অভিনন্দন
পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর ডক্টর ব্লান্ট স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরাট সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিনন্দন জানিয়ে বাণী পাঠান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে তিনি বাণীতে আশা প্রকাশ করেন। এদিকে ভারতের পরিকল্পনামন্ত্রী ডিপি ধর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে বঙ্গবন্ধুকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠান। বাংলাদেশের জনগণের বিজয়ে তিনি বলেন, ‘যে আদর্শের জন্য তারা সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ করেছেন, সেই আদর্শ প্রার্থনা করি, আপনার ভাগ্য ও যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতি করতে থাকবে।’
শুরু হচ্ছে গণদুশমনদের বিরুদ্ধে অভিযান
২১ মার্চ থেকে শুরু হবে গণদুশমনদের বিরুদ্ধে অভিযান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল এক বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলনে একথা ঘোষণা করেন যে, সরকার মধ্যরাত থেকে দুষ্কৃতকারী সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করবে। তিনি বলেন, ‘চোরাকারবারি, মজুতদার, মুনাফাখোর ও সমাজবিরোধীদের নির্মূল করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। কারণ, এরা জনগণের দুঃখ-দুর্দশার জন্য দায়ী।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে বেআইনি অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়।’ তিনি বলেন যে, থানা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না হলে নিকটবর্তী সরকারি কর্মচারীর কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা দিলেও চলবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ার করে দেন যে, যারা বেআইনি অস্ত্রসমর্পণ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকার কাউকে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করতে দিতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে না যায়, তার নিশ্চয়তা বিধান করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ তিনি বলেন, ‘চোরাকারবারি, কালোবাজারি, মুনাফাখোর ও মজুতদাররা জনগণের শত্রু।’ তাদের দমনে সরকারকে সহযোগিতা করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।