X
বুধবার, ২১ মে ২০২৫
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি

সাদ্দিফ অভি
০৮ জুলাই ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২১, ২১:৪০

মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও অক্সিজেন সরবরাহ ছিল স্বাভাবিক হারে। সরবরাহ দিতে হিমশিম খেতে হয়নি অক্সিজেন প্রস্তুতকারকদের। এখন অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে চাপে আছেন উৎপাদনকারীরা। তবে আপাতত অক্সিজেন সংকট নেই বলেও জানিয়েছে দেশের দুই বৃহৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ এবং স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। এই দুটি কোম্পানি দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করে। তারা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। একইসঙ্গে মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন তারা। 

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত এক সপ্তাহে রোগী বাড়ে ৫০ শতাংশের বেশি। তার আগের সপ্তাহে ৩৫ হাজার রোগী শনাক্ত হলেও পরে তা ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার সঙ্গে মৃত্যু বেড়ে যায় ৪৬ শতাংশ। ৩ জুলাই থেকে ৬ দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ৫২৬ জন, আর মারা গেছেন ৮১৫ জন। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে হাসপাতালে খালি বেড আর আইসিইউ’র সংখ্যা। তাছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশের ১৩ হাসপাতালে আছে শয্যা সংখ্যক অতিরিক্ত রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ৬০ শতাংশ বেড রোগীতে ভর্তি এবং মাত্র ২৫ শতাংশ আইসিইউ সারাদেশে খালি আছে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, দেশে অক্সিজেনের চাহিদা একেক সময় একেক রকম। রোগী বাড়লে চাহিদা একরকম থাকে , আর কম থাকলে আরেকরকম। তবে এর আগে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ২০০ -২২০ টনের মধ্যে। রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে সেটি বেড়ে কতো হবে তা এখনও অনুমান করা যাচ্ছে না। শুধু দুটি কোম্পানি লিন্ডে এবং স্পেক্ট্রা বর্তমানে সরবরাহ করছে ১৭০ টন পর্যন্ত। বাকি চাহিদা অন্যান্য কোম্পানি থেকে সরবরাহ করে পূরণ করা যাচ্ছে আপাতত। তবে এই মুহূর্তে সংকট নেই অক্সিজেনের। যদি চাহিদা আরও বেড়ে যায় তাহলে দেশের বিভিন্ন ভারী শিল্প কারখানায় অবস্থিত প্ল্যান্টের মাধ্যমে অক্সিজেনের সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।    

দেশের বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে উৎপাদনের পাশাপাশি ভারত থেকে লিকুইড অক্সিজেন আমদানি করে। তাদের দেশে উৎপাদন সক্ষমতা ৯৫ টন। ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমদানি বন্ধ হওয়ার আড়াই মাস পর আবারও আমদানি শুরু হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত দুই সপ্তাহে ভারত থেকে ৭৭৮ মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৭০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের চাহিদা থাকে। করোনাকালে সেটি আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়েছে এবং রোগী সংখ্যা যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে সেটি সামাল দেওয়া আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।

বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশের মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সায়কা মাজেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চাপ তো আছে বর্তমানে। রোগী বেড়েছে , তার সঙ্গে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়েছে। মাঝে একটু ভালো অবস্থা ছিল, আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে দিতাম। কিন্তু এখন পুরোটাই আমরা হাসপাতালে দিচ্ছি। আর কোথাও যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা মোটামুটি সোর্স করাসহ ম্যানেজ করছি এখন। এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িনি। আমরা হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন দেই, সেটি এখনও কোনও ক্রাইসিসের মধ্যে পড়েনি। বেসরকারি হাসপাতালে আমরা সিলিন্ডার দেই, সরকারি হাসপাতালে এবং বড় হাসপাতালগুলোতে আমরা বেশিরভাগই লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহ করি। আমাদের ৯০ টনের মতো সক্ষমতা আছে, আমরা পুরোটাই দিয়ে দিচ্ছি এখন। আবার কোনও কোনও সময় তার থেকে বেশিও যায়।

ঢাকার বাইরে সরবরাহে কোনও সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজশাহী, খুলনা, যশোরসহ সব সরকারি মেডিক্যালেই আমরা লিকুইড অক্সিজেন দেই। আমাদের সেখানে স্টোরেজ আছে। ট্যাংকার বসানো আছে, এখন যেহেতু ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে গেছে, তাতে আমাদের ম্যানেজমেন্ট আরও ক্রিটিক্যালি করতে হয়। আমাদের সেখানে নির্দেশনা দেওয়া আছে, একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত নামার আগেই আমাদের কাছে তথ্য চলে আসে, আমরা তখনই সাপ্লাই শুরু করে দেই। আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন টিম প্রতিনিয়ত সেটার আপডেট নিতে থাকে। সেই নির্দিষ্ট লেভেলের নিচে নামার আগেই আমরা সেটা রিফিল করে দিয়ে আসি।      

স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের চীফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) খলিলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অক্সিজেন সরবরাহে চাপ বর্তমানে প্রচুর আছে। গত ১৫ দিনে আমাদের কাছে চাহিদা দ্বিগুণের মতো বেড়েছে। গত ২০ জুন যে হারে আমাদের অক্সিজেন যেতো ৪ জুলাই এসে সেটি দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা ২০ জুন দিয়েছি ৪০ টনের মতো লিকুইড এবং গ্যাস আকারে, আর গত ৪ জুলাই দিয়েছি ৮০ টন। এটা দিনে দিনে বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন ঢাকার বাইরে আমাদের সেলস সেন্টার আছে। সারাদেশে বর্তমানে ১৪টি সেলস সেন্টার আছে। আমরা সেখানে সিলিন্ডার পাঠাচ্ছি। সেখান থেকে হাসপাতালে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট প্রডাকশন ইউনিট আছে। যেমন যশোর, বরিশাল, কাঁচপুর ব্রিজের কাছে, মানিকগঞ্জে আমাদের প্ল্যান্ট থাকাতে কিছুটা সুবিধা হয়েছে।

/এমআর/
সম্পর্কিত
হাসপাতালের যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরীক্ষার পরামর্শ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর  
সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ৬
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যালে হবে অক্সিজেন উৎপাদন
সর্বশেষ খবর
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মাছ রফতানি বন্ধ
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মাছ রফতানি বন্ধ
ভোক্তা অধিকারের আব্দুল জব্বার মন্ডলের দাবি করে ছড়ানো ভিডিওটি ভুয়া
ভোক্তা অধিকারের আব্দুল জব্বার মন্ডলের দাবি করে ছড়ানো ভিডিওটি ভুয়া
কৃষককে হত্যা নাতিকে বস্তাবন্দি করে তিন গরু নিয়ে গেলো ডাকাত দল
কৃষককে হত্যা নাতিকে বস্তাবন্দি করে তিন গরু নিয়ে গেলো ডাকাত দল
শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব নাকি সরকারের মুখপাত্র, ব্যাখ্যা চাইলেন নুরুল কবির
শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব নাকি সরকারের মুখপাত্র, ব্যাখ্যা চাইলেন নুরুল কবির
সর্বাধিক পঠিত
ভ্যানচালকের কাছে এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র
ভ্যানচালকের কাছে এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র
মহার্ঘ ভাতা পেতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা: অর্থ উপদেষ্টা
মহার্ঘ ভাতা পেতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা: অর্থ উপদেষ্টা
কে হচ্ছেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব 
কে হচ্ছেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব 
এজলাসের ভিডিও ভাইরাল: বিচারককে আইনের আওতায় আনার দাবি
এজলাসের ভিডিও ভাইরাল: বিচারককে আইনের আওতায় আনার দাবি
স্টারলিংকের সংযোগ কীভাবে পাবেন, কোথায় ব্যবহার করতে পারবেন
স্টারলিংকের সংযোগ কীভাবে পাবেন, কোথায় ব্যবহার করতে পারবেন