মাত্র আট মাস পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করা মো. জসীম উদ্দনকে লম্বা ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম। এদিকে নতুন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামকে বিবেচনা করছে সরকার। তবে বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা হওয়ার কারণে পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণে কিছুটা বিলম্ব হবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন পররাষ্ট্র সচিব কে হবেন— এ সংক্রান্ত একটি সামারি প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার (২১ মে) ফেরত এসেছে। ওই সামারিতে পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং এদের মধ্যে আসাদ আলম সিয়ামের নামটি বিবেচিত হয়েছে।’
আসাদ আলম সিয়াম
১৯৮৭ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের পরে বুয়েঠে আর্কিটেকচার বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৫ ব্যাচ বিসিএস পরিক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পর সিয়াম ১৯৯৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।
প্রথম বিদেশ পোস্টিং ছিল ইন্দোনেশিয়া এবং এরপর ব্যাংকক। ঢাকায় ফিরে এসে ফরেন সেক্রেটারি অফিসের ডাইরেক্টর হিসাবে কাজ করেন। ২০০৭-০৮ সালে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরির পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অফিসের ডাইরেক্টর হিসাবেও কাজ করেছিলেন তিনি।
প্রথম পোস্টিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হলেও পরের দুটি পোস্টিং ছিল ইউরোপে। প্রথম ম্যানচেষ্ঠার মিশন এবং পরে মিলানে মিশন প্রধান হিসাবে কাজ করেন। এরপর ঢাকায় ফিরে এসে ইউরোপ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এবং পরে চীফ অফ প্রটোকল হিসাবে কাজ করেন। রাষ্ট্রদূত হিসাবে প্রথমে ম্যনিলায় কাজ করার পরে ফিরে আসেন মন্ত্রণালয়ে। ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ মিশন হিসাবে কাজ করার পরে অস্ট্রিয়াতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সিয়ামকে। গত বছর আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত হিসাবে পাঠানো হয় তাকে।
বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রথমে সুপিরিয়র সিলেকশনে বোর্ডে তাকে সচিব পদমর্যাদা দেওয়া হবে। এরপর তিনি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এজন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
কেন ছুটিতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন মো. জসীম উদ্দিন। পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর প্রধান উপদেষ্টার দফতর খুশি থাকলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে দূরত্ব তৈরি হয়। গত এপ্রিলে রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমানকে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগকে কেন্দ্র করে এই দূরত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ মে মাসে জাপানের সঙ্গে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) স্থগিত করার জন্য পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সিদ্ধান্তে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে প্রধান উপদেষ্টার দফতর।