X
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দরিদ্র জনগণ মান-মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:০০আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:০০

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমি নিশ্চিত যে দুনিয়ার গরিব মানুষ মান-মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে। বিশ্বশান্তি ও দুনিয়ার দরিদ্র জনগণের মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সব সময় কাজ করে যাবে। জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর  শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে এদিন (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে আলজিয়ার্সের পথে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন। সকাল ৮টায় বাংলাদেশ বিমানের ৭০৭ বোয়িং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আলজিয়ার্সের উদ্দেশে যাত্রা করে।

এর আগে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে সংক্ষিপ্ত অনাড়ম্বর সুশৃঙ্খল আন্তরিকতাপূর্ণ বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। প্রিয় নেতাকে সংবর্ধনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন—জাতীয় সংসদের স্পিকার মোহম্মদউল্লাহ, অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিপরিষদের  সাবেক সদস্যরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের  বলেন, ‘জোটনিরপেক্ষতা ও সক্রিয় নিরপেক্ষতার ওপরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়—এই নীতিতে বিশ্বাসী।’ প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য নয়, জনকল্যাণে সম্পদের ব্যবহারের নামে বিশ্বের গরিব জনগণ ক্ষুধা থেকে রক্ষা পাবে। আমরা বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাসী এবং সে জন্যই মানবসমাজকে রক্ষা করার প্রত্যাশী। বিমানে প্রবেশের আগে বঙ্গবন্ধু কিছুক্ষণের জন্য সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দু’ হাত তুলে সমবেত জনতার হর্ষধ্বনি ও বিপুল করতালিতে মুখরিতদের জবাব দেন। এ সময় সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও কালো মুজিব কোট পরা বঙ্গবন্ধুকে বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ বিশ্বের অভিমত শুনতে হবে

ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার তিন জন নেতা টিটো, ইন্দিরা গান্ধী ও সেলাসী বিশ্বব্যাপী সার্বিক নিরস্ত্রীকরণ ও বর্তমান বিশ্বে ভাগ্য নিয়ে কোনও বড় রকমের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণের অধিকারের স্বীকৃতিদানের আহ্বান জানান। এদিন সকালে আলজিয়ার্সের জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রদত্ত তাদের ভাষণে এই তিন নেতা এ বক্তব্য রাখেন। তারা নয়া অর্থনৈতিক অবস্থার দাবি এবং ইসরাইল ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমালোচনা করেন। এই তিন নেতা মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত তাদের জন্য পারস্পরিক সাহায্যদানের ব্যবস্থা করা। তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার নির্দেশ দেন ও সম্পদকে কাজে লাগানোর ও নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার আহ্বান জানান। টিটো প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তগুলো নিজেদের নেওয়ার বিরুদ্ধে বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রবণতার নিন্দা করেন এবং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তনে রাজনৈতিক দায়িত্ব রয়েছে।’ টিটো আণবিক অস্ত্র বিলুপ্তি ও সার্বিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য একটি বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান। ইন্দিরা গান্ধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক করপোরেশনগুলোর তৎপরতার নিন্দা করেন। এরা প্রতিপদে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রগতিতে বাধা দিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর অন্য দেশের আধিপত্য বিস্তারে চিন্তার অবসান না হলে, বিশ্বে প্রকৃত অর্থে প্রগতি আসবে না—এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুমেদীন আলজিয়ার্সে চতুর্থ জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। প্রেসিডেন্ট বুমেদীন এই সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এ দিনের খবরে প্রকাশ, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রগতিতে বাধা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এবং তাদের ওপর পশ্চিমা শক্তিগুলো ও তাদের একচেটিয়া পুঁজির চাপের নিন্দা করেন বুমেদীন।

ডেইলি অবজারভার, ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

সম্মেলনে এশিয়ার পক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমরা জোটনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর দেশগুলো এখনও শোষিত হচ্ছি। শান্তির চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। আমরা যদি আমাদের জনগণের ঠিক অবস্থার উন্নতি করতে না পারি, তাহলে প্রকৃত স্বাধীনতা আসবে না। আমাদের অনেকেরই বহু বাধাবিঘ্নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। আর  এসব দেখছি বলেই আমাদের এই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইউরোপে সমঝোতা ও উত্তেজনা হ্রাস পেলেও এশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে। এখানে আমরা অসহায়, নির্যাতিত এবং নির্যাতন দূরীকরণের মহান লক্ষ্য সাধনের পথে সংগ্রামী জোটনিরপেক্ষ গোষ্ঠী ৬৩টি সদস্য দেশ থেকে তাদের রাজা, সম্রাট, রাষ্ট্রপতি বা সরকার প্রধানরা সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করছেন।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায় চলছে ব্যাপক কর্মব্যস্ততা
ঈদুল আজহায় ট্রেনযাত্রাচট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায় চলছে ব্যাপক কর্মব্যস্ততা
কখন কী হয় এ নিয়ে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে: আসাদুজ্জামান রিপন
কখন কী হয় এ নিয়ে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে: আসাদুজ্জামান রিপন
মিষ্টি বিদেশি আঙুর চাষ হচ্ছে দেশে, রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
মিষ্টি বিদেশি আঙুর চাষ হচ্ছে দেশে, রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
গাজীপুরে মোঘর খাল খনন ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু
গাজীপুরে মোঘর খাল খনন ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু
সর্বাধিক পঠিত
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাসনিম জারা ও উমামার ফেসবুক পোস্ট
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাসনিম জারা ও উমামার ফেসবুক পোস্ট
অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি, মরদেহে ছুরিকাঘাত
অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি, মরদেহে ছুরিকাঘাত
গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ সেনাবাহিনীর
গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ সেনাবাহিনীর
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বিমানবন্দরে নামা মাত্রই আ.লীগ নেতা গ্রেফতার, দাবি স্ত্রীর
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বিমানবন্দরে নামা মাত্রই আ.লীগ নেতা গ্রেফতার, দাবি স্ত্রীর
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: বিশেষ সহকারী
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: বিশেষ সহকারী