একদিকে ঘর হারিয়ে দিশেহারা, আরেক দিকে মামলা আর হামলার আতঙ্ক; গতকাল মঙ্গলবার আসাদগেট নিউ কলোনি থেকে উচ্ছেদ হওয়া নিবাসীদের অবস্থা এখন এমনই।
যাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন নিজেদের আবাস বাঁচাবার আশায়, তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে সেই শঙ্কা আছে। সূত্র বলছে, বারবার দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যারা ঘর থেকে উচ্ছেদ করেছে তাদের হিংস্রতার আশঙ্কায় গা ঢাকা দিতে হচ্ছে নিবাসীদের। কেউ কেউ এ দুঃসময়ে স্বজনদের সঙ্গে থাকার সাহসটুকুও পাচ্ছেন না।
গত ডিসেম্বরেই নিউ কলোনির চার নারীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করা হয়েছে বলে থানাসূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিবাসী বলেন, আমরা এখন এটা নিয়ে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছি। কাল যেভাবে আমাদের বের করে দেওয়া হলো তা আমাদের ভাবনার মধ্যেও ছিল না। তিনি বলেন, মামলা হয়েছে কিনা আমরা জানি না, তবে যারা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ওরা যেকোনও কিছু করে বসতে পারে।
এদিকে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন মীর বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত মাসে মামলা হয়েছে। তারা সেসময় পরিত্যক্ত ভবনগুলো ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে এ মামলা হয়।
নিম্নবিত্তদের জন্য বানানো আসাদগেট নিউ কলোনি আগে থেকেই একটু একটু করে ভাঙছিল। এখানকার নিবাসীরা চেয়েছিলেন কোনওভাবে যদি এই উচ্ছেদ ঠেকানো যায়। গত মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে মামলা নিরসনের আগেই বের করে দেওয়া হলো শেষ ৩০টি পরিবারকে। ঘরহীন এই পরিবারগুলোর সামনে একদিকে নতুন করে ঘর বাঁধার লড়াই, আরেকদিকে মামলা হামলার ভয়।
উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা আলীম চৌধুরীর পরিবারও আছে। তারা কোথায় আছেন তা জানাতে চান না। জানালে হামলার শিকার হওয়ার শঙ্কা আছে বলে জানান।
সূত্র জানায়, ১১৪ পরিবারের মধ্যে সাহসের সঙ্গে যে ৩০টি পরিবার আন্দোলন করে আসছিল তাদের পেছনে ছিল বাকিরা। তবে কেন সবাই একসঙ্গে থাকতে পারলেন না এমন প্রশ্ন করা হয় একজনকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমার পরিবারে ছোট সন্তান আছে। আমার সামর্থ নেই তাদের নিয়ে অন্য কোথাও ভাল জীবন কাটানোর। আবার গুন্ডাবাহিনীর সামনে দাঁড়ানোর সাহসও নেই। আমরা ভেবেছিলাম আইনিভাবে যারা আন্দোলন করছিলেন সেই পরিবারগুলোকে সমর্থন দিয়ে যদি কিছু করা যায়। সেটাও হবে না ভেবে কয়েকদিন আগে কলোনি ছাড়ি।
আগাম জানান না দিয়ে উচ্ছেদ শুরু করলে মঙ্গলবার প্রথমে বিহ্বল হয়ে পড়লেও শেষ চেষ্টা করেছিলেন আসাদগেট নিউ কলোনির বাসিন্দারা। ভবন ভাঙার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতেও গিয়েছেন তারা। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তের আগেই হঠাৎ উচ্ছেদ শুরু হওয়ায় সব হারানোর কষ্ট তাদের মুখে। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা শুধু বলেছিলাম যে আজকের জন্য অন্তত বন্ধ রাখেন। কেউ কোনও কথাই শুনলো না। যে গুন্ডারা দিনের পর দিন আমাদের আন্দোলন করতে দেখেছে তারা এখন আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে। আমরা এখন প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় আছি ।’
/এফএ/