X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতির বিস্ময়কর উত্থান

গোলাম মওলা
১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:০০আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১২:৩৫

স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলছে অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে দ্রুত। এরই মধ্যে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের ক্রমাগত জিডিপির প্রবৃদ্ধি, অর্থনীতিক কাঠামোর রূপান্তর এবং সামাজিক উদ্ভাবনের ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া সরকারি এবং বেসরকারি যৌথ উদ্যোগও এক্ষেত্রে অনেক সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে সরকারের নীতি নির্ধারণী সহায়তা বড় ভূমিকা রেখেছে।

১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন বিশ্বে দেশটির পরিচয় ছিল দুর্যোগপ্রবণ ও ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বলেছিলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে দেশ আজ অনেক উন্নয়নশীল দেশেরও রোল মডেল। এমন প্রবৃদ্ধির নেপথ্য চালিকাশক্তি হলো দেশের কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী ও পোশাক শিল্পের কোটি শ্রমিকের শ্রম। আছে লাখো উদ্যোক্তার অবিরাম প্রচেষ্টাও।

 

১০ বছর পর ২৪তম

দ্য ইকোনমিস্টের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬৬টি উদীয়মান সফল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছিল নবম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ব্যাংক পরিক্রমার তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর দেশের ৭৫ ভাগ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। ৫০ বছরে জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি থেকে বেড়ে ১৭ কোটি হয়েছে। বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। তারপরও দারিদ্র্যের হার নেমে আসে ২০ শতাংশে।

মহামারি করোনার কারণে এ হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫ শতাংশে গেলেও এখন আবার পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১৪০ ডলার, তা ২০২১ সালে প্রায় ১৬ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২২৭ ডলার।

মাথাপিছু আয়

সরকারের বিভিন্ন দফতরের তথ্য ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতার ৫০ বছরে জাতিসংঘের মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচকেও ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এখন এ সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৭৩.২।

 

বাংলাদেশ যখন কেস স্টাডি

১৯৭৪ সালে প্রতি হাজারে ১৫৩ জন শিশু মারা যেতো, ২০১৮ সালে তা নেমে আসে ২২ জনে। একইভাবে, ১৯৯১ সালের ৪.৭৮ শতাংশ মাতৃমৃত্যু হার, ২০২০ সালে ১.৬৯% এ নেমে এসেছে। এ ছাড়া, স্বাধীনতার সময় দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। এখন তা ৭২.৮ বছরে দাঁড়িয়েছে।

শিশুমৃত্যু (প্রতি হাজারে)

২০১৫ সালে এসব অর্জনের ফলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশের পরিবর্তে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে।

অনেকেই বলছেন, বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। নানা আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে এই উন্নয়নের প্রশংসা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ভারত সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুও বাংলাদেশ নিয়ে তার একটি লেখায় লিখেছেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে, যা খুব কম অর্থনীতিবিদই অনুমান করেছিলেন।

গড় আয়ু (বছর)

২০০৬ সালে বাংলাদেশ যখন জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, তখন অনেকেই এটাকে আকস্মিক সাফল্য হিসেবে খারিজ করেছিলেন। কিন্তু তখন থেকে প্রতিবছরই পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এখন ভারতের কাছাকাছি এবং তাত্পর্যপূর্ণভাবে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘এখন আর পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনার দরকার নেই। এখন সময় নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। ১৯৭১ সালে চরম দরিদ্র দেশ হিসেবে জন্ম বাংলাদেশের। এখন সেই দরিদ্র দেশ অসাধারণ অগ্রগতি করেছে। মানবউন্নয়ন সূচক, লাইফ এক্সপেকট্যান্সি, জিডিপির উন্নতি সবকিছুতেই বাংলাদেশ এগিয়ে।’

তিনি উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তারা চলে এসেছে, তারা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছে।

গত ৮ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৫০ বছরের অর্থনীতি নিয়ে বলেছেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে ও সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ভালো কাজ করেছি। সামাজিক অর্থনীতির যে সূচকগুলো আছে, সেগুলোও অনেক ভালো আছে।’

ব্যাংক পরিক্রমার তথ্য বলছে, এক সময়ে বাংলাদেশে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ছিল। সেটা থেকে বেরিয়ে এসে শিল্প ও সেবা খাতমুখীও হয়েছে। শিল্প খাতের অবদান কয়েকগুণ বেড়েছে। বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটেছে কৃষিতেও।

 

ব্যাংকিংয়ে উত্থান

ডিজিটাল ফাইন্যান্সের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে গত দশকে। দেশের সর্বস্তরের জনগণকে আর্থিক সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দিনে দিনে ব্যাংকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে গ্রাহকও। ব্যাংকের গ্রাহক সেবায় যোগ হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। আগে ব্যাংকিং সেবার পরিধি শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়েছে। এখন এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের সেবার আওতায় আনতে ব্যাংকগুলো তৎপর।

স্বাধীনতার পর ব্যাংকের অর্থায়নেও বিশাল উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূলত বঙ্গবন্ধুর চিন্তার ফসল। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। ১৯৭২ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে জাতীয়করণ করা হয়েছিল।

৫০ বছরে যেভাবে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (কোটি ডলার)

ব্যাংক পরিক্রমার তথ্য বলছে, ১৯৭২ সালে ‘স্টেট ব্যাংক অব পূর্ব পাকিস্তান’-এর শাখা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠন করা হয়েছিল। এভাবে ১২টি ব্যাংককে একীভূত করে ছয়টি সরকারি ব্যাংক হয়। ১৯৮২ সাল থেকে ব্যাংকিং খাতে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক যুক্ত হতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালে ব্যাংকের আমানত ছিল ৪৬০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে যা ১২.৯০ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ১৯৭৪ সালে ব্যাংকিং খাতে প্রদত্ত ঋণ ছিল মাত্র ২৮৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালে হয়েছে ১১ লাখ কোটি টাকা। এতে বেসরকারি খাতে বিপুল উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।

১৯৭৫ সালের পর ব্যাংকের সহায়তার ফলেই রফতানি আয় ১৩৩ গুণ বেড়েছে। তাছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠা করা শুরু হয়। এর মাধ্যমে কৃষিখাতে ঋণ বাড়ে। ১৯৮২ সালে ওই ঋণ ছিল ৬৭৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালে এসে দাঁড়ায় ২৪.৫ হাজার কোটি টাকায়।

 

পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে বহুদূর

১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ আক্ষরিক অর্থেই ছিল ধ্বংসস্তূপ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধে শুধু যোগাযোগ খাতেই বাংলাদেশের ২০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছিল। বিগত ৫০ বছরে সেই ক্ষতি কাটিয়ে, অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে এখন পাকিস্তান থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান (জিডিপি-২০২০, কোটি ডলার)

২০২০ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল ৩৩,৮০০ কোটি ডলার। পাকিস্তানের জিডিপি ২৭,৮০০ কোটি ডলার। গত এক দশকে (২০১১-২০) বাংলাদেশের অর্থনীতির জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে (বাংলাদেশ ৬.৭৬ শতাংশ, পাকিস্তান ৩.৯৬ শতাংশ)। অর্থনীতির এমন শক্ত অবস্থানে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে দেশের রফতানি আয়।

২০১৯ সালে বাংলাদেশের রফতানি আয় হয়েছে ৪,৬৫০ কোটি ডলার। অপরদিকে পাকিস্তানের রফতানি আয় ছিল ২,৮১৫ কোটি ডলার। এখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ও সাড়ে তিনগুণ বেশি।

২০২০ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১৪১০ ডলার, বাংলাদেশের ২০৬৪ ডলার। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১,৩২৯ কোটি ডলার, বাংলাদেশের ৪,৬৩৯ কোটি ডলার। পাকিস্তানের বেকারত্বের হারও বাংলাদেশ থেকে বেশি। ২০১৯ সালে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪.১৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ৪.৪৫ শতাংশ।

 

কৃষিতে বিপ্লব

ব্যাংক পরিক্রমার তথ্য বলছে, ৫০ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ বাড়লেও সামগ্রিকভাবে উৎপাদনও বেড়েছে। ৫০ বছরে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণের বেশি, গমের উৎপাদন হয়েছে দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশগুণ।

কৃষিখাতে ঋণ (কোটি টাকা)

আউশ, আমন ও বোরো এই তিন মৌসুমে দেশে ধান হয়। সত্তর দশকে বছরে এই ধানের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২০ লাখ টন, আর এখন উৎপাদন ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন।

বাংলাদেশ দানাজাতীয় খাদ্যশস্যের পাশাপাশি শাকসবজি, ডাল ও মসলা উৎপাদনেও অগ্রগতি দেখিয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৫.৫ লাখ হেক্টর আবাদি জমিতে ভুট্টার উৎপাদন হয়েছে ৫৪ লাখ টন। ওই সময়ে ৮২.১ লাখ টন আলু উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশ প্রায় দুইশ’ জাতের সবজি উৎপাদন করে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০১৯ সালে দেশে মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪৩.৮ লাখ টন। জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশ মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, চাষের মাছের ক্ষেত্রে পঞ্চম। গবাদিপশু উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ।

ব্যাংক পরিক্রমার তথ্য আরও বলছে, বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, ছাগলের সংখ্যা বিবেচনায় চতুর্থ এবং গবাদিপশু উৎপাদনে বিশ্বে দ্বাদশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, গত ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে ১১.৫ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ কাঁঠাল, আম ও পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে যথাক্রমে দ্বিতীয়, সপ্তম ও অষ্টম অবস্থানে আছে।

কৃষিতে বাংলাদেশের এমন অভাবনীয় সাফল্যের মূল কারণ সরকারের নীতি সহায়তার পাশাপাশি প্রযুক্তি বিকাশে সহযোগিতা, কৃষিশিক্ষার আধুনিকায়ন ও মাঠ উপযোগী করা এবং ব্যাপক ভর্তুকি দিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তা অব্যাহত রাখা।

সরকারি খাত ছাড়াও বেসরকারি ব্যবসায়ী যেমন—উপকরণ বা যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী, এগুলোর আমদানিকারক এবং কৃষি ব্যবসায়ী ও গবেষকদের যৌথ প্রয়াস এই উন্নয়নের অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

 

প্রবাসীর আয়

৫০ বছরে জনশক্তি রফতানি

ব্যাংক পরিক্রমার তথ্য বলছে, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি হয়েছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সৌদি আরব, ওমান, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি দেশে কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জনশক্তি পাঠানো শুরু করে। ওই বছর মাত্র ৬,০৮৭ জন বিদেশে কাজ নিয়ে যায়। ১৯৯০ সালের পর থেকে জনশক্তি রফতানি দ্রুতগতিতে বেড়েছে। এখন ৪০টিরও বেশি দেশে বছরে গড়ে প্রায় ৭ লাখ মানুষ কাজের জন্য যাচ্ছে।

সরকারি হিসাবে, এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ বাংলাদেশি কাজের জন্য গেছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১ কোটি মানুষ কর্মরত। যারা ২০২০ সালে ২,২০০ কোটি ডলার বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। ১৯৭৬ সালে যা ছিল মাত্র ২৩০ লাখ ডলার।

প্রবাসী আয়ের কারণে করোনা সংকটেও বাংলাদেশ বড় অর্থনৈতিক বিপাকে পড়েনি। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের জুনে রেকর্ড পরিমাণ ৪,৬৩৯ কোটি ডলারের রেকর্ড করেছে। ১৯৭৪ সালে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৮.৫ কোটি ডলার।

এই রিজার্ভের বিকাশ দেশের এক্সচেঞ্জ রেটকে স্থিতিশীল থাকছে এবং দেশ তার প্রয়োজনমতো আমদানিও করতে পারছে।

 

পোশাকে আশা

ব্যাংক পরিক্রমার তথ্য বলছে, স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্জনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রফতানিমুখী পোশাক খাতের উত্থান। এ খাতে বছরের শুধু হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাই আসেনি, বরং বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানও হয়েছে। মোট রফতানি আয়ের ৮৩ শতাংশ ও ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে এ খাত। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারের রফতানি আয় নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রফতানির দেশ এখন বাংলাদেশ।

৫০ বছরে পোশাক রফতানিতে আয় (কোটি ডলার)

গত চার দশকে এই খাতে ব্যবসা বেড়েছে হাজার গুণ। আশির দশকে (১৯৮৪-৮৫) দেশে পোশাক কারখানা ছিল ৩০০টির মতো। যেখানে ১ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। ২০১৯-২০ সালে নিট এবং ওভেন মিলিয়ে প্রায় চার হাজারটি পোশাক কারখানায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ শুরু করে। এখন পোশাক তৈরি হচ্ছে প্রায় ২৫০টি ক্যাটাগরিতে। স্বল্প মজুরি, উন্নত বিশ্বের বাজার সুবিধা, ক্রমবর্ধমান উৎপাদনশীলতা, সরকারের নানামুখী নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার ফলেই বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বেড়েছে।

পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, আশির দশকে পোশাক শ্রমিকের গড় উৎপাদনশীলতা ছিল ৯৬৮ ডলার। যা ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫,৩৭৮ ডলারের রেকর্ড অতিক্রম করে। শ্রমিকদের বহু বছর কাজ করার ফলে একদিকে কর্মদক্ষতা বেড়েছে, অপরদিকে এ খাতে নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবেও উৎপাদন বেড়েছে।

/এফএ/
সম্পর্কিত
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সর্বশেষ খবর
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত