X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

শুভ নববর্ষ: মঙ্গল করো হে

উদিসা ইসলাম
১৪ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০০আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৪৪

‘জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক’। মাভৈ রবে জেগে উঠুক সকল ভীত প্রাণ, নতুন ভোরে আলোকিত হোক নতুন বছর ১৪২৯। করোনা মহামারি পেরিয়ে ১৪২৮ সনের দুঃখ-কষ্ট-মৃত্যুশোক যতই কষ্টের হোক, তাকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে নতুন আশা-উদ্দীপনার মধ্যে আবাহন জানাবে বাংলার মানুষ।

পঞ্জিকার পালাবদলে আজ বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখের দিন। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে যা ছিল খাজনা উপলক্ষ, তা এখন একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদযাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান।

একাত্তরে শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি দেশ গড়তে যে মুক্তির যুদ্ধ হয়েছিল, তার অন্যতম লক্ষ্যই ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি ধর্মনিরপেক্ষতার একটি চারা বাংলাদেশে রোপণ করেছি। এ চারা যদি কেউ উপড়ে ফেলতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।’ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল অসাম্প্রদায়িকতার মূলমন্ত্র ধারণ করে।

আর সেই পথ ধরেই প্রতিবছর বাঙালির জীবনে বৈশাখ একটি অনন্য বার্তা নিয়ে আসে। বিগত জীবনের দীনতা, হীনতা ও জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে উদ্যমী হওয়ার আহ্বান জানায় বৈশাখ। দুঃখ-কষ্ট, বেদনাকে মুছে ফেলে নতুন করে বাঁচার নির্দেশনা দেয়। বৃক্ষের পাতা ঝড়ে পড়ার পরে সেখানে নতুন পাতার আগমন যেমন বৃক্ষকে সাজিয়ে তোলে, তেমনই বৈশাখ নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করে মননে।

ঢাকা শহরে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের নতুন বছরের সূর্যবন্দনা। দুই বছর পর আবারও সেখানে মিলিত হবে নগরবাসী। প্রথম দিনের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে, বাদ্যযন্ত্রের তালে বছরকে আহ্বান জানান। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা। ছায়ানটের আয়োজনের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এবারে নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত পরিসরে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। তারপরেও দুই বছর পর আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত শিল্পী, কর্মী, শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রায় সব শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করবে। মাসব্যাপী কাজ করে শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করে রঙ-বেরঙের মুখোশ। ধারণা করা হয়, যা কিছু অমঙ্গলজনক তা বিসর্জন দেওয়া হয় শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে।

নববর্ষ উদযাপন বাংলাদেশের একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব উল্লেখ করে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারোয়ার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৬৭ সালে নগর জীবনে বর্ষবরণের যে আয়োজন, তার বড় লক্ষ্য ছিল বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনকে জোরদার করা। আর স্বাধিকার আন্দোলনের মুখ্য বিষয় ছিল— বাংলাকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করা। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার স্থান হবে না। ৭২ এর সংবিধানে বলা আছে— বাংলা রাষ্ট্রের চরিত্র কী হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বারবার তার ওপর আঘাত হানার চেষ্টা হয়েছে। সম্প্রতি  পরপর তিনটি ঘটনায় ধর্ম বিদ্বেষ দেখা যচ্ছে। সবগুলো ঘটনাতেই বানোয়াটভাবে ধর্মকে  অপব্যবহার করে তিন জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রশাসন তার ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। এটা অশনি সংকেত।’

 তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতার স্বপক্ষের শক্তি কিছু মানুষের মনোজগতে আস্তানা গেড়েছে। যারা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়।’ সাংস্কৃতিক আন্দোলন আরও জোরদার করা উচিত কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সাংস্কৃতিক চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। এর প্রতিকার রাজনৈতিক আন্দোলন দিয়ে হবে না। প্রতিকারের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, লালন শাহ ও আবদুল করীমের কাছে ফিরতে হবে। রাজনৈতিক নেতার বক্তৃতার চেয়ে সংস্কৃতির চর্চার শক্তি বেশি। সংস্কৃতিক কর্মীরা যদি সোচ্চার হন, অগ্রসর হন, তবে প্রতিকার আসবে ও অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের অনুষ্ঠান। সবচেয়ে বড় অসম্প্রদায়িক উৎসব। আমরা আজকে নিজেদের বাঙালি বলে দাবি করছি, তার পেছনে রয়েছে সংস্কৃতির শেকড়। বাঙালিত্ব দাবি করতে হলে এই বাংলা নববর্ষ বরণ এড়ানো যাবে না। কোনও কোনও মহল রাজনৈতিক কারণে বাংলা নববের্ষের বিরোধিতা করছে, সেটা অগ্রহণযোগ্য। যত বেশি সংস্কৃতি চর্চার প্রচার করতে পারবো, তৃণমূলে ছড়ানো যাবে, তত অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবো।  কোনও অবস্থাতে সংস্কৃতি চর্চাকে সংকীর্ণ করে, সত্য সুন্দর কল্যাণের আদর্শ, প্রগতির ধারণা ও চর্চা করা যাবে না। যেকোনও পরিস্থিতিতে সংস্কৃতি চর্চাকে অব্যাহত রাখতে চাই। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার মধ্যে থাকতে চাই।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
রমনা বটমূলে বোমা হামলা: হাইকোর্টের রায় ৮ মে
‘পহেলা বৈশাখে আগের মতো ফুল বিক্রি হয় না’
মীরসরাইয়ে বলী খেলা দেখতে দর্শকদের ভিড়
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১ জুলাই, ২০২৫)
বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে
বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে
দুর্ঘটনায় ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৪২২ শ্রমিক
দুর্ঘটনায় ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৪২২ শ্রমিক
৪০ শতাংশ কৃষক পান না ন্যায্য মজুরি: জরিপ
৪০ শতাংশ কৃষক পান না ন্যায্য মজুরি: জরিপ
সর্বাধিক পঠিত
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা          ‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’