X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে যত নিরাপত্তা ব্যবস্থা

রিয়াদ তালুকদার
১৮ জুন ২০২২, ২১:১৮আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ২১:১৮

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সাইবার ওয়ার্ল্ড মনিটরিংসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাজানো হচ্ছে নিরাপত্তা পরিকল্পনা। কোথাও কোনও ধরনের নেতিবাচক তথ্য পাওয়া গেলে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলের ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তাসহ জোরদার করা হবে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে এ সম্পর্কিত ব্যাপক পরিকল্পনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। করোনা মহামারির সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিলেও আবেগের এই সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। যদিও সম্প্রতি তিনি পদ্মা সেতু ঘিরে সব বাহিনীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এরইমধ্যে সরকারের মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে সেতু এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। আগামী শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। তার পরদিন সকাল থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

পদ্মা সেতু নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এদিকে, শেষ হয়েছে পদ্মার দুই প্রান্তে দুটি নতুন থানার নির্মাণ কাজ। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় নির্মিত দুটি থানা ২২ জুন উদ্বোধন করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে নির্মিত ২ থানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর এবং শরীয়তপুর প্রান্তে পদ্মা সেতু দক্ষিণ নামে দুটি থানার নামকরণ করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকাল দশটায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসে উপস্থিত হবেন। মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন ও সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি। পরবর্তীতে সেখান থেকে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুর অংশে দলীয় একটি জনসভায় অংশ নেবেন।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কিংবা পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনও ধরনের গুজব কিংবা অপতৎপরতা করে যেন কেউ ফায়দা লুটতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সাইবার মনিটরিং জোরদার রয়েছে। যখনই কোনও ধরনের নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সেসব তথ্য পর্যালোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

র‍্যাবের ডগ স্কোয়াড দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। থাকবে ইউনিফর্মে এবং সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন পেট্রোলিং ছাড়াও আকাশপথে থাকবে র‍্যাবের হেলিকপ্টারের নজরদারি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নৌ পুলিশ এরইমধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে নদী পার হয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে আসা মানুষদের ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অনুষ্ঠানের আগেরদিন (২৪ জুন) রাত বারোটার পর থেকে বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল। অনুষ্ঠানে আগত অতিথি এবং উপস্থিতিদের বিষয়টি বিবেচনা করে কি ধরনের নৌযান চলাচল করা হবে সে অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় ঘাটের দুই পাশে অতিরিক্ত নৌ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হবে যারা ২৪ ঘণ্টা পদ্মা সেতু নিরাপত্তায় কাজ করবেন।

পুলিশ সদর দফতর বলছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক লোক অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপস্থিতির বিষয়টি সম্পর্কে আগাম ধারণা নিয়ে যেসব রুট দিয়ে তারা আসবেন সেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশ কয়েক দফা নিরাপত্তা তল্লাশি পার হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে হবে আগত অতিথিদের। পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তাদেরকে যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে হবে। কেউ যেন কোনও ধরনের অপতৎপরতা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে থাকবে কঠোর নজরদারি। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌ পুলিশ, র‍্যাবসহ সবাই একযোগে মোতায়েন থাকবে।

পুলিশ সদর দফতরের (অপারেশন্স মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) বিভাগের ডিআইজি হায়দার আলী খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের একটি আবেগের জায়গা। এই সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সেতুর নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মাদারীপুর প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এ অনুষ্ঠান যেন আনন্দ উচ্ছ্বাস ঘেরা হয় সে জন্য বাংলাদেশ পুলিশ এবং বিভিন্ন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। দেশ এবং প্রবাসে সবাই মুখিয়ে আছে পদ্মা সেতু চালুর জন্য।

তিনি বলেন, মাওয়া প্রান্ত এবং জাজিরা প্রান্ত দুদিকেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তায় পুলিশের সোয়াত টিম স্কোয়াড, নৌ পুলিশ হাইওয়ে পুলিশ থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে কেউ যেন এ নিয়ে কোনও ধরনের গুজব সৃষ্টি করতে না পারে। এছাড়াও সারা দেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমরা দেখভাল করছি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান কিংবা পদ্মা সেতুকে ঘিরে কেউ যেন কোনও ধরনের অপপ্রচার কিংবা গুজব সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছি।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ পরবর্তীতে সেতুর নিরাপত্তায় র‍্যাবের নজরদারি থাকবে। থাকবে পেট্রোলিং টিম। এছাড়া পদ্মা সেতুকে ঘিরে কেউ যেনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য বাড়ানো হয়েছে সাইবার মনিটরিং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগেই এখন থেকেই পদ্মা-সেতুর নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে র‍্যাবের সদস্যরা। নিরাপত্তায় বসানো হচ্ছে র‍্যাবের ওয়াচ টাওয়ার। তাছাড়া ফুট পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, বোম স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড থাকবে। স্পেশাল ফোর্স নিয়ে রেডি থাকবে হেলিকপ্টার।

তিনি বলেন, যারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন তাদের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ধাপ পেরিয়ে উদ্বোধনস্থলে যেতে হবে। সেতুকে ঘিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে সাইবার ওয়ার্ল্ডে মনিটরিং। কোথাও কোনো ধরনের নাশকতা বা কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির অপতৎপরতার খবর এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে আমরা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলের বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখা হবে। প্রতিনিয়ত পরিচালনা করা হবে চেকপোস্ট।

নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার ড. আখতারুজ্জামান বসুনিয়া লিটন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাওয়া থেকে শুরু করে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে নৌপথের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন টহল চলমান রয়েছে। নদীর দুই পাড়ে নৌ পুলিশের সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। নৌ ঘাটে যারা আসবেন তাদের পর্যাপ্ত চেকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সকল নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। দুই পারের যাতায়াতে লঞ্চ থাকবে। অনুষ্ঠানের আগে ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়ানো হয়েছে জনবল। বর্তমানে যে পরিমাণ নৌ পুলিশ সদস্য পদ্মা সেতু বা ঘাটের দুই পাশে নিয়োজিত রয়েছে তাদের সাথে আরও যুক্ত করা হচ্ছে জনবল। ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন দায়িত্বরতরা। পদ্মা সেতু নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক থাকবে নৌ-পুলিশের স্পিড বোট। থাকবে পেট্রোল বোটও।

 

/এমএস/
সম্পর্কিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা