X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ থাকছে না ৫২ উপজেলায়

সাদ্দিফ অভি, পঞ্চগড় থেকে
২১ জুলাই ২০২২, ১০:০০আপডেট : ২১ জুলাই ২০২২, ১০:০০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশের কোনও মানুষ আর গৃহহীন থাকবে না। দেশের প্রতিটি মানুষকে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করা হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এই মডেলকে বলা হয় ‌‘শেখ হাসিনা মডেল’। আর তাই প্রথম ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে দেশের পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলায়। অর্থাৎ এই দুই জেলায় আর কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকছে না। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) এই দুই জেলার ৯টিসহ দেশের ৫২ উপজেলা ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি জমির মালিকানাসহ ৬৩ হাজার ৯৯৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ জুন জমির মালিকানাসহ ৫৩ হাজার ৩৩০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা একক ঘরে সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি। চলমান তৃতীয় পর্যায়ে মোট বরাদ্দকৃত একক ঘরের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৮০০টি, যার মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল হস্তান্তরিত হয় ৩২ হাজার ৯০৪টি এবং আজ হস্তান্তর হচ্ছে ২৬ হাজার ২২৯টি। এছাড়া আরও নির্মাণাধীন রয়েছে ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর।

প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি, ৬৩ হাজার ৯৯৯ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার তাদের মাথার উপর ছাদ পায়। আর গত বছরের ২০ জুন আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবার ঘর পায়।  

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে সরকার ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই ও জলবায়ু সহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে ঘরগুলোর নকশা পরিবর্তন করেন। এতে ঘরগুলোর নির্মাণ খরচ বেড়ে যায়। আর এজন্যই এখন গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষরা দুই শতাংশ জমির ওপর আরও উন্নতমানের টিন-শেডের আধা-পাকা ঘর পাবে।

ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই করে গড়ে তোলায় প্রতিটি ঘরের নির্মাণব্যায় ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। সরকার ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই করে নির্মাণ করতে মজবুত কড়ি কাঠ, পাথরের সর্দল ও রি-ইনফোর্স কংক্রিট কলাম (আরসিসি) পিলার ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হবেন পাঁচটি প্রকল্প এলাকার সঙ্গে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে—লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার জঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প।

মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬৭৮টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের মধ্যে দিয়ে ‘ভূমিহীনমুক্ত’ হতে যাচ্ছে মাগুরা জেলা। গত ৩ বছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মাগুরায় মোট ৬৭৮টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে খাস জমিতে ২ কক্ষবিশিষ্ট আধপাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২০০টি, মহম্মদপুরে ১৩১টি, শ্রীপুরে ১২৩ ও শালিখা উপজেলায় ২২৪টি ঘর রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৫০টির মতো ঘরে উপকারভোগীরা বসবাস করছেন। চলতি মাসের মধ্যেই বাকি ঘর উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য ৮২ একর খাস জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ভূমিহীনমুক্ত বলছি, কারণ এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। ভবিষ্যতে কেউ বাস্তুচ্যুত হতে পারেন। স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে নিয়ম অনুযায়ী তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

অন্যদিকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে পঞ্চগড় জেলায় ১ হাজার ৫৭ জন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ৩৫৯ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ২ শতাংশ জমিসহ একক গৃহ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে ১৭৬টি স্পটে (পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ৬৫২ জন, বোদা উপজেলায় ৩৫১ জন, দেবীগঞ্জ উপজেলায় ৭৭০ জন, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৪৫০ জন এবং আটোয়ারী উপজেলায় ২১১ জন) ২ হাজার ৪৩৪ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমিসহ একক গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২৬ এপ্রিল তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় জেলায় ঈদ উপহার হিসেবে ১ হাজার ২১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতক জমিসহ একক গৃহ প্রদান করেছেন।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ৩য় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট ১ হাজার ৪১৩টি একক গৃহসমূহ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের নিকট জমিসহ হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই সঙ্গে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হবে পঞ্চগড় জেলা।

তিনি আরও বলেন, দারিদ্র বিমোচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক মডেলের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। এখানে আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের সুযোগ আছে। উন্নয়নের গতিধারায় এসব মানুষকে আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, আগামী ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে ঘোষণা করতে যাচ্ছি পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলায় আর কোনও ভূমিহীন গৃহহীন নেই। এটি আমাদের জন্য একটি বিশাল অর্জন। গত মাসে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে আমাদের মনোবল আকাশচুম্বী হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আনাচে-কানাচে মানবতার ছোঁয়া পৌঁছে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শতভাগ বাস্তবায়ন করা গেছে বাংলাদেশের দুটি প্রত্যন্ত জেলা। সুতরাং উন্নয়নের ছোঁয়া এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে মাগুরায় নিহত ৩
‘কিংস পার্টিতে’ সাকিবের যোগদানের বিষয়টি জানেন না মহাসচিব
মেয়াদোত্তীর্ণ ৮০ বস্তা খেজুর বিক্রির পর  ১২০ বস্তা জব্দ
সর্বশেষ খবর
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
চ্যাম্পিয়নস লিগঅবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়