X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা থেকে আরও বেশি পানি সরাতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ?

দিল্লি প্রতিনিধি
১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:০০আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:০০

পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার তিস্তার উজানে একাধিক নতুন ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে, যা ওই নদীর প্রবাহ থেকে আরও পানি সরিয়ে নেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিস্তা থেকে পানির ন্যায্য হিসসা পাওয়া যাচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সেই অভিযোগের ক্ষোভ নিশ্চয়ই আরও বাড়বে।

কলকাতার ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত এক আভাস পাওয়া গেছে। খবর প্রকাশের তিনদিন পরও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিবাদ আসেনি বা খবরটি তারা অস্বীকারও করেননি। যার ভিত্তিতে ধরে নেওয়া যেতে পারে, এই দাবির সত্যতা আছে।

জানুয়ারি মাসে তিস্তার চর যখন খটখটে শুকনা

তিস্তার উপনদী বড় রঙ্গিত, পশ্চিমবঙ্গের পরিকল্পিত প্রকল্পগুলো এই নদীর বুকেই বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এমন তথ্য উল্লেখ করে দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, তিস্তার উপনদী বড় রঙ্গিতের ওপর তিস্তা লো ড্যাম প্রোজেক্ট (টিএলডিপি) ১ ও ২ নামে দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবা হয়েছে, যে দুটোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৭১ মেগাওয়াট। এই প্রকল্পের ডিটেলড প্রোজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) প্রস্তুত করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার সংশ্লিষ্ট দফতরকে সবুজ সংকেতও দিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ডিপিআর তৈরির জন্য সরকারি অনুমোদন পাওয়া গেছে ইতোমধ্যেই। 

এতে আরও বলা হয়েছে, বড় রঙ্গিত তিস্তার একটি প্রধান উপনদী, যার পানি পুরোটাই এসে তিস্তায় মেশে। ফলে এই সব প্রকল্পের জন্য বড় রঙ্গিতের পানিতে টান পড়লে শেষ পর্যন্ত তার প্রভাব পড়বে তিস্তাতেই। আর এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে আরও কম পানি যাবে। তিস্তা আন্তর্জাতিক স্তরেও এমন একটি স্পর্শকাতর ইস্যু, যে বিষয়টি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে প্রকল্পটির কাজ যে এগোচ্ছে, তা তারা দ্য টেলিগ্রাফের কাছে স্বীকার করেছেন।

প্রসঙ্গত, তিস্তা ব্যারেজ প্রজেক্টের অধীনে আরও দুটি খাল কাটার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করেছে। সম্প্রতি সেই খবরও প্রকাশ্যে এসেছে। এই দুটি খাল কাটা শেষ হলে সেচের জন্য আরও বেশি পরিমাণে পানি তিস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।

কালিঝোরায় তিস্তার বুকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র

কালিঝোরাতে তিস্তার বুকে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই চালু। এছাড়া ‘তিস্তা মহানন্দা লিংক ক্যানাল’ নামেও ওই রাজ্যে একটি কৃত্রিম সংযোগ খাল বহু বছর ধরেই চালু আছে– যা পশ্চিমবঙ্গের গাজলডোবা থেকে শুরু হয়ে তিস্তার জলের একটা বড় অংশ ২৬ কিলোমিটার দূরে মহানন্দা নদীতে এনে ফেলছে।

সব মিলিয়ে বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সেচ খাল বা লিংক ক্যানালের মাধ্যমে তিস্তার জলপ্রবাহের একটা বড় অংশ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, বড় রঙ্গিত নদীর ওপর দুটি নতুন প্রকল্প চালু হলে যার পরিমাণ অবশ্যই আরও বাড়বে।

অথচ, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে প্রধান বাধা হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়, সেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বারবারই বলে থাকেন, ‘তিস্তা তো শুকিয়ে গেছে। যে নদীতে পানিই নেই, তার পানি কীভাবে ভাগাভাগি করা সম্ভব?’ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তিস্তায় পানির প্রবাহ যদি সত্যিই কমে থাকে, তাহলে তার পেছনে মমতা ব্যানার্জির সরকারের ভূমিকাও মোটেও কম নয়। তিস্তা নদীর উৎস ভারতের যে রাজ্যে, সেই সিকিমও অবশ্য নদীর বুকে একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বসিয়ে বা সেচ খাল কেটে একই কাজ করছে। 

তবে সিকিম বা পশ্চিমবঙ্গ সরকার সব সময়ই একটা কথা বলে থাকে, তারা তিস্তার ওপর যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তৈরি করেছে তার সবগুলোই ‘রান অব দ্য রিভার’ প্রজেক্ট – অর্থাৎ নদীর জল নিয়ে টার্বাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আবার সেই জল নদীতেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়, একটা ফোঁটাও নষ্ট হয় না। অন্যভাবে বললে, এই প্রকল্পগুলো নদী থেকে কোনও জল সরায় না বলেই সরকারের দাবি।

তিস্তা থেকে মহানন্দায় পানি নিয়ে ফেলার জন্য সংযোগ খাল

তবে পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের অনেক নদী-বিশেষজ্ঞই আবার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। শিলিগুড়িতে নর্থবেঙ্গল ইউনিভার্সিটির হিমালয়ান স্টাডি সেন্টারের অধ্যাপক মৈত্রেয়ী চৌধুরী যেমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো যে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করে তাতে কোনও সন্দেহই নেই।’ 

‘এই তিস্তাতেই আপনি যদি কালিঝোরা ছাড়িয়ে তিস্তাবাজারের দিকে যান, দেখবেন নদী ওখানে থমকে গিয়ে লেকের মতো স্থির হয়ে আছে। তিস্তার যে স্বাভাবিক প্রাণোচ্ছ্বলতা, যে জলোচ্ছ্বাস– তার সবই যেন উধাও!’, বলছিলেন মৈত্রেয়ী চৌধুরী।

এছাড়া যে কোনও নতুন প্রকল্প মানেই আশেপাশে জঙ্গল কেটে সাফ করতে হয়, আর গাছপালা নির্মূল হলে মাটির পানিধারণ ক্ষমতাও অনেক কমে যায়।  ফলে বর্ষাকালে মাটি পানি ধরে রাখতে পারে না, সোজা সেটা নদীতে পড়ে বয়ে যায়– আর শুষ্ক মৌসুমে নদী খটখট করতে থাকে! সে কারণেই বড় রঙ্গিতের ওপর ৭১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমের তিস্তা যে আরও মৃতপ্রায় হয়ে পড়বে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কোনও সন্দেহই নেই। ভোগান্তি আরও বাড়বে বাংলাদেশের তিস্তাপাড়ের কৃষকদের।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদ্মশ্রী নিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে কিংবদন্তির ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে কিংবদন্তির ছেলে
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা