X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহরের আদলে বদলে যাচ্ছে ১৫ গ্রাম

শফিকুল ইসলাম
২৬ জুলাই ২০২৩, ১৯:৩০আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৩, ১৯:৩০

শহরের আদলে দেশের ১৫টি গ্রামকে শহরের সুযোগ-সুবিধায় গড়ে তোলা হবে। পাইলটিং হিসেবে দেশের নির্বাচিত ১৫ জেলার ১৫ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামকে শহরের আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে দেশের সব গ্রামকে শহরের আধুনিক নাগরিক সুবিধার আওতায় আনা হবে। এর মাধ্যমে ২০৪১ সালের ভিশন অনুযায়ী উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশব্যাপী সুষম, বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’ শীর্ষক বিশেষ অঙ্গীকার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের রূপকল্পও ঘোষণা করা হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের অন্যতম নির্বাচনি অঙ্গীকার ছিল গ্রামকে শহরের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আপাতত দেশের নির্বাচিত ১৫ জেলার ১৫টি গ্রামকে ঘিরে এ কার্যক্রম শুরু করবে। এ লক্ষ্যে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আমার গ্রাম আমার শহর: পাইলট গ্রাম উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের অনুমোদন পেয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম ছাড়াও পাইলট গ্রামগুলোয় অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রমকে সমন্বয় করবে  ছবি: সংগৃহীত

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত ১৫টি পাইলট গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ ও সহজতর করে জনসম্পদ সৃষ্টিতে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ১০টি উপজেলার মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রণয়ন বা হালনাগাদের মাধ্যমে সারা দেশে সব উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে।

২০৪১ সালের মধ্যে পরিকল্পিত ও জলবায়ুসহিষ্ণু টেকসই-উন্নত দেশ বিনির্মাণে মাঠপর্যায়ের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) রাজস্ব আহরণ, গ্রাম সহায়ক নীতিকাঠামো প্রয়োগ, স্বেচ্ছাসেবার অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নগর পরিষেবা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সেবাগুলো পাইলট গ্রামগুলোয় সম্প্রসারণ করা হবে। পাইলট গ্রাম প্রকল্পের অধীনে সম্পাদিত কার্যাবলি ও আহরিত জ্ঞান সারা দেশে প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত জ্ঞান ব্যবস্থাপনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও ডকুমেন্টেশন তৈরি হবে। এসব উদ্দেশ্যেই মূলত প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে সরকার।

যা থাকছে আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্পে
পরিকল্পনা কমিশন আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক উন্নয়ন; মাটির কাজ, ব্রিজ, কালভার্ট ও ড্রেন নির্মাণ করা হবে। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্মত শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে। গ্রামে গ্রোথ সেন্টার, গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন এবং কৃষিপণ্য কালেকশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে। পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। উপজেলা বহুমুখী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, গ্রামীণ আবাসন উন্নয়ন করা হবে। খাল ও পুকুর খনন করা হবে। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়ন, সড়কবাতি স্থাপন, বন্ধুচুলা ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট সরবরাহ করা হবে। সামাজিক বনায়ন করা হবে এবং ভিলেজ ব্র্যান্ডিং করা হবে।

সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রকল্পটি সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জানিয়ে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন কৌশল, গ্রামীণ সড়ক পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কৌশল, গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের জন্য অগ্রাধিকার কৌশল, গ্রামীণ গ্রোথ সেন্টার, হাটবাজার, গ্রামীণ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, গ্রামীণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উপজেলা উন্নয়ন, মহাপরিকল্পনা, কমিউনিটি অবকাশ কেন্দ্র ও গ্রামীণ বিনোদন সুবিধা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা উন্নয়ন এই শিরোনামে পৃথক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

কমিশন আরও জানিয়েছে, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে ওই বিষয়গুলোর ওপর গবেষণা বা সমীক্ষা পরিচালনা করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্পে গবেষণা বা সমীক্ষার ফলাফলগুলো প্রয়োগ করা হবে। এ প্রকল্পের আউটপুটগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির অভীষ্ট-১ (দারিদ্র্য বিলোপ, টার্গেট ১ দশমিক ১, ১ দশমিক ৩), অভীষ্ট-৬ (নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন), অভীষ্ট-৯ (টেকসই নগর ও জনপদ), অভীষ্ট-১২ (পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন), অভীষ্ট-১৩ (জলবায়ু কার্যক্রম) এর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।

আলোচ্য পাইলট প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম ছাড়াও পাইলট গ্রামগুলোয় অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রমকে সমন্বয় করবে। কাজেই, এসডিজির অধিকাংশ অভীষ্ট এবং লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়ন দৃষ্টান্ত পাইলট গ্রামগুলোয় স্থাপিত হবে। এ প্রেক্ষিতেই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজির লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

ইতোমধ্যেই শহরের অনেক সুবিধা গ্রামে চলে এসেছে   ছবি: সংগৃহীত

প্রকল্পটির পক্ষে একনেকের অনুমোদন চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাইলটিং হিসেবে ১৫টি গ্রামে শহরের আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে এবং পরে পর্যায়ক্রমে দেশের সব গ্রামকে শহরের আধুনিক নাগরিক সুবিধার আওতায় আনা হবে। এর মাধ্যমে ২০৪১ সালের ভিশন অনুযায়ী উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘আমার গ্রাম আমার শহর: পাইলট গ্রাম উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি (সরকারি) অর্থায়নে ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেকের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার ২ নম্বর সোহাগদল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি হচ্ছে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প। ইতোমধ্যেই শহরের অনেক সুবিধা গ্রামে চলে এসেছে। তবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ধীরে ধীরে দেশের সব গ্রাম শহরের সুবিধা-সংবলিত গ্রামে পরিণত হবে। সেখানকার নাগরিকরা পরিকল্পিতভাবে শহরের সেবা পাবেন, সে অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রকল্পটি সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। শহরের ওপর চাপ কমবে। এতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে সুষম সমন্বয় সহজ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাইলটিং হিসেবে ১৫টি গ্রামে শহরের আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে দেশের সব গ্রামকে এ সুবিধার আওতায় আনা হবে। তবেই ২০৪১ সালের ভিশন অনুযায়ী উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ সম্ভব হবে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
সর্বশেষ খবর
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ