X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

সেদিন যা ঘটেছিল বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে

উদিসা ইসলাম
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০০

১৯৭১ সালের এদিন (১২ ডিসেম্বর) দেশের বেশিরভাগ এলাকা মুক্ত হয়ে গেছে। আলোচনা চলছে ঘরে ও মনে, বিজয় সন্নিকটে।

১২ ডিসেম্বর দিনটি অনেক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে একসঙ্গে নানা ঘটনা ঘটেছে এদিন। শেষ কামড় হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে তখন পাকিস্তানি দোসররা।

ঢাকায় এদিন ক্যান্টনমেন্টে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আলবদরের কমান্ডার কামারুজ্জামান ও আলশামসের কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আলবদরের  প্রধান নির্বাহী আশরাফুজ্জামান খান, অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীনসহ কয়েকজনকে ডেকে পাঠান। এরপর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে তাদের বুদ্ধিজীবীদের তালিকা দেওয়া হয়।

তখন হেরে গিয়েও হারতে রাজি নন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজী। তিনি বলেন, ‘একটি প্রাণ অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত আমরা পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমির জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। পাকিস্তানের মাটি পাকিস্তানেরই থাকবে।’

পুরান ঢাকার কলতাবাজারে আলবদরের প্রধান নির্বাহী আশরাফুজ্জামান খান এবং অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের নির্দেশে আলবদরের বেশ কয়েকজন তরুণ পিপিআই’র জেনারেল ম্যানেজার ও বিবিসির প্রতিবেদক নিজামউদ্দিন আহমেদকে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। কী ভয়াবহ হবে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা, তখনও তা কেউ বুঝে উঠতে পারেনি।

১২ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে সাংবাদিকদের দেওয়া নানা প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন বলেন, ‘ভারতকে অবশ্যই পাকিস্তান ছাড়তে হবে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাতৃভূমি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষই পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখবে। কোনও শক্তি নেই যে পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারে। আমরা পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্যই সংগ্রামে জড়িয়েছি।’

ভারতের দক্ষিণ কলকাতায় এদিন রাজ্য কংগ্রেসের আহ্বানে একটি শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের কার্যালয় থেকে বের হওয়া এই শোভাযাত্রা কালীঘাট সড়ক, সদানন্দ সড়ক, প্রভাপাদিত্য সড়ক, এসপি মুখার্জি-হাজরা রোড, শরৎ বসু রোড, মনোহরপুকুর রোড হয়ে পুনরায় ঘুরে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

এদিকে দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ তখনও চলছে। দিনাজপুরে ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার রশীদের দল ভারতীয় বাহিনীসহ খানসামা আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ভারতীয় বাহিনীর ১৫ জন ও ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভারতীয় মিত্রবাহিনী এ সময় পাকিস্তানি হানাদার মেজর খুরশীদসহ ১৯ জন সৈন্যকে আটক করে। ওদিকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে চতুর্থ বেঙ্গলের মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হলে নাজিরহাট নদীর পাড়ে পাকিস্তানি ২৪তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ৩টি কোম্পানি ও বেশ কিছু সংখ্যক ইপিসিএএফসহ হানাদার সৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার পথে বাধা দেয়।

এদিন নরসিংদী পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়। সকাল ৮টায় ভারতীয় ৪ গার্ড রেজিমেন্টসহ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নরসিংদী ছেড়ে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী বগুড়া দখলের জন্য আসবে—এমন তথ্য জেনে পাকিস্তানি বাহিনী বগুড়া শহরের এতিমখানায় অবস্থান নেয়। এ সময় গাইবান্ধায় থাকা মিত্রবাহিনীর ওপর পাকিস্তানি হানাদাররা গোলাবর্ষণ শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী তখন পাল্টা গোলাবর্ষণ চালালে হানাদার সৈন্যরা পালিয়ে যায়। তাদের পালানোর সময় বেশ কয়েকজন সৈন্যকে গ্রামবাসী গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে।

সিরাজগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশিরভাগ দল একত্রে সিরাজগঞ্জ শহরের উত্তরে শৈলাবাড়িতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে। এ সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘তখনও আমরা জানি না, বিজয়ের আনন্দের সঙ্গে কী বিষণ্ন খবর অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। দেশের বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে শেষ করে দেওয়া হবে, তা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। ঠিক সেই কাজটি ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে তারা শুরু করে দিয়েছিল। ঘাতকরা বুঝতে পেরেছিল তারা হেরে গেছে। শেষ সময়ে যত বেশি ক্ষতিসাধন করা যায়, তারা সে চেষ্টায় ছিল। বিজয়ের আগের কয়েকদিন প্রতিরোধের বেশ কিছু লড়াই চলমান ছিল।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সফলতায় কিছুটা দায়মুক্ত হয়েছি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
সর্বশেষ খবর
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
বিমানযাত্রীর পকেট থেকে জ্যান্ত সাপ উদ্ধার
বিমানযাত্রীর পকেট থেকে জ্যান্ত সাপ উদ্ধার
ডু প্লেসি ঝড়ে গুজরাটকে পাত্তা দিলো না বেঙ্গালুরু
ডু প্লেসি ঝড়ে গুজরাটকে পাত্তা দিলো না বেঙ্গালুরু
দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধের চিন্তা করছে কাতার
দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধের চিন্তা করছে কাতার
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে