X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় বিপর্যস্ত নারী

উদিসা ইসলাম
০৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০১আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৫

সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাদের টিফিন রেডি করে, বাসার অন্যদের নাস্তা টেবিলে দিয়ে ছোট ছেলেটাকে নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দিই সকাল ৮টায়। বেলা ১২টায় স্কুল থেকে নিয়ে এসে দুপুরের খাবার রেডি করে বেরিয়ে পড়ি বিকাল ৩টার অফিসে ধরতে। রাত ৯টা পর্যন্ত অফিস করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে ১০টা। রাতে বাচ্চাদের খাইয়ে, পড়ালেখার খোঁজখবর নিয়ে ঘুমাতে যাই ২টায়। এর মধ্যে কাজের সহযোগী খালাকে নির্দেশনা দেওয়া, মুদির বাজার ফুরিয়ে গেলে তালিকা করে দেওয়া, লন্ড্রিতে কাপড় পাঠানো এবং সেখান থেকে ফেরত কাপড় গুছিয়ে তোলার কাজগুলো করতেই হয়। এই যে ৫ ঘণ্টা ঘুমের সময় বাদে বাসায় ও বাইরের কাজ সামলে চলা ইয়াসমিন যখন কথাগুলো বলছেন, তখন জানতে চাওয়া হয়—এর বদলে আপনি কী পান? বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ইয়াসমিন বলে ওঠেন—‘জানো তো, ও সব পারে।’ এই কথাটা প্রায় প্রায় শুনতে পাই। কিন্তু আমি শুনতে চাই কিনা, সেটা আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে না। বাচ্চাদের বাবা কী করেন প্রশ্নে জবাব—‘ওনার ফুল টাইম বড় চাকরি, দায়িত্ব আমার মতো কম না।’

বাসার কাজ বাইরের কাজ এবং সবার ‘মন রাখা’ সামলাতে গিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছে নারী। মনোচিকিৎসকরা বলছেন, নারী বিষণ্ন বিপন্ন অনুভব করলে কেবল তার ক্ষতি তা নয়, পরবর্তী প্রজন্মও বিষণ্ন হয়ে বড় হবে। একদিকে কাজ শেষ করে বাসার দিকে  রওনার তাড়া থাকে। আরেক দিকে তার পেশার জায়গায় আরেকটু বেশি সময় দিতে না পারার মনোকষ্ট থাকে। বলা হয়ে থাকে, নারী অধিকার নিশ্চিত করতে হলে তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। এর পাশাপাশি নতুন আলাপ উঠেছে—কেবল অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে কি নারী স্বাধীন হবে?

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত বছরের এক গবেষণায় বলা হয়—মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান প্রায় ২০ শতাংশ। তবে সংসারের ভেতর ও বাইরের কাজের মূল্য ধরা হলে নারীর অবদান বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ। এর অর্থ হলো, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের অবদান বলা যায় সমান সমান। বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, এক কোটি ৮৭ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা— অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে কাজ করছেন। তবে উৎপাদন ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারী কর্মীদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী। বাকিরা শিক্ষকতা, চিকিৎসা, ব্যাংকিং, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা পেশায় যুক্ত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীসহ বিভিন্ন উচ্চপদেও দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা।

এই যে অর্থনীতিতে তার অবদান এবং তার ক্ষমতায়নের যে চিত্র, তাতে কি নির্যাতনের পরিমাণ কমেছে? ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৩’ শিরোনামে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) প্রকাশিত একটি পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে—২০২৩ সালে ৬২৩ জন নারী ও ৭৬৮ জন শিশু ও কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মহিলা পরিষদের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৬ নারী ও কন্যাশিশু।

স্পেস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোশফেক আরা শিমুল বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া অবশ্যই নারীমুক্তির একটি অন্যতম মাধ্যম, তবে একমাত্র মাধ্যম নয়। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েও বহু নারী আত্মনির্ভরশীল ও আত্মসম্মান নিয়ে থাকতে পারছেন না। কারণ, সমাজের চাপিয়ে দেওয়া রোলটিকে তারা ভাঙতে পারছেন না। অতএব, তার কাজের চাপ যেমন বেড়ে গেছে, তেমনই বেড়েছে মানসিক চাপও। সামাজিকভাবে নারীর প্রতি অবদমনের জায়গাও রয়ে গেছে আগের মতোই। সুতরাং, চাপিয়ে দেওয়া জেন্ডার রোলকে মানিয়ে নিয়ে শুধু অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নারীমুক্তি আনতে পারছে না। তাই প্রয়োজন ঘরে এবং বাইরে কাজের সমবণ্টন এবং সার্বিকভাবে নারীর আত্মনির্ভরতা।’

মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার মনে করেন, নারীর একটি স্বস্তিদায়ক জীবন, তার মানসিক প্রশান্তি পরবর্তী প্রজন্মকে বিষণ্নতার হাত থেকে বাঁচাতে পারে। ঘরে-বাইরে একইসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে যে টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে তাকে যেতে হয়, সেখানে পরিবারের সহযোগিতা না পেলে তার জন্য পুরো জার্নিটাই কঠিন হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘এই সমাজ নিজেদের সুবিধার জন্য অনেক সময় নারীকে, নারীর দায়িত্বকে মহিমান্বিত করে, তার সক্ষমতাকে বাড়িয়ে বলার চেষ্টা করে। কিন্তু সেসব পালন করতে গিয়ে তার যে সীমাবদ্ধতাও আছে, এটা খেয়াল করলে, তার ওপর অহেতুক চাপ পড়তো না। এই পরিস্থিতিতে নারীর আচরণগত ত্রুটি দেখা যায় এবং সমাজের প্রত্যাশা থেকে যে ক্ষোভ তৈরি হয়, সেটা দুর্বল মানুষ মানে তার সন্তান ও প্রিয়জনদের প্রতি গিয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে—মা হতাশাগ্রস্ত হলে বা মা নেতিবাচক আচরণ করছে, সন্তান সেটা শেখে। মা আনন্দে থাকলে ঠিক সন্তানের মধ্যে সেটা প্রবাহিত হয়।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
‘মাদকগ্রহণকারী নারীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসায় পিছিয়ে রয়েছে’
মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘে সমালোচনার মুখে তালেবান
সুঁই-সুতোয় ‘স্বপ্ন বুনছেন’ ভোলার আমেনা খানম
সর্বশেষ খবর
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
আজকের আবহাওয়া: তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার