আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীনে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১১ জুন) গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব ঘর হস্তান্তর করবেন তিনি। সারা দেশে আরও ৭০টি উপজেলা এবং ২৬টি জেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে দেশের ৫৮টি জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদুল আজহার আগে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ও ভোলার চর ফ্যাশনের অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন তিনি। এর মধ্যে দিয়ে আরও ৭০টি উপজেলা এবং ২৬টি ভূমি-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে এদিন।
এর আগে মোট ছয় দফায় ৩২টি জেলার সব উপজেলাসহ ৩৯৪টি উপজেলাকে ভূমি-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ৫৮টি জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে।
নতুন করে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলাগুলো হলো ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে ঘর দেওয়ায় এখন পর্যন্ত ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ পুনর্বাসিত হয়েছে। এর মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসনের সংখ্যা ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫।
এ ছাড়া হতদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামার, দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিনের কাজ। হাঁস-মুরগি, কবুতর পালন ও শাকসবজি উৎপাদনসহ কৃষিকাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সম্প্রতি পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজারের সদর উপজেলায় ৭৫টি, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৪৬টি এবং মহেশখালী উপজেলায় ৪০টি, সর্বমোট ২৬১টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এগুলো নির্বাচিত উপকারভোগীদের মাঝে মঙ্গলবার হস্তান্তর করা হবে। কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও ও মহেশখালী উপজেলায় আর কোনও ভূমিহীন পরিবার না থাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে।
নির্মিত প্রতিটি ঘরের সঙ্গে পরিবারপ্রতি ২ শতাংশ খাসজমি বিনামূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে, সে হিসাবে এখন পর্যন্ত ৯৮ দশমিক ৫০ একর খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোয় প্রায় ২২ একর জমি কমন স্পেস হিসেবে উপকারভোগীরা ব্যবহার করছেন।
এর বাইরে ১৬০৪ জন উপকারভোগীর মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ (হাঁস-মুরগি পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, মাছ চাষ, সবজি চাষ, অর্গানিক সবজি উৎপাদন, সেলাই ও ব্লক বাটিক প্রশিক্ষণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ, হস্তশিল্প বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রভৃতি) প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারের উখিয়ায় গৃহহীন ও ভূমিহীনরা জমি ও ঘর পেয়ে জীবনমানের উন্নয়ন করেছে। তাদের আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা বেড়েছে। অনেকে তাদের ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিতে পারতো না। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হওয়ায় এখন ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে সমস্যা হবে না।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে যারা ঘর ও জমি পেয়েছেন, তাদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাউকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ আদা, হলুদ ও সবজি চাষ এবং কেউ গরু-ছাগল পালন করেও উপার্জন করছেন। তাদের কেউ সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আওতাভুক্ত হয়েছেন। তারা এখন প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমান লক্ষ্মীপুর) জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমি-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য শেখ হাসিনা সরকার গত ১৫ বছরে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ভূমি-গৃহহীন মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে সারা বিশ্বে প্রশংসিত দারিদ্র্য বিমোচনে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে ‘শেখ হাসিনা মডেল।’