চলমান কোটা আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য বিদেশি কূটনীতিকদের সরবরাহ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়েও জানতে চাইছেন তারা। এ জন্য বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য একটি ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে, যেখানে ২২টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের বাংলাদেশ প্রধান অংশ নেন। এ সময় তাদের বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয় এবং পেনড্রাইভে তা সরবরাহ করা হয়।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের জানান, ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন এবং তাদের লিখিত উত্তরও দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন তারা যেটি বলছে, গ্রেফতারের সংখ্যা কত, এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। কোনও ধরনের শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা, মতামত প্রকাশ করা যাচ্ছে কিনা, সমাবেশ করা যাচ্ছে কিনা, এগুলো ব্যাহত হচ্ছে কিনা, এগুলো নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা আছে। মানবাধিকার বিষয়টি তারা সরাসরি বলেননি। কিন্তু এই ইস্যুটি কয়েকজন বলেছেন।’
‘তাদের বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল এবং সেগুলোর জবাব দিয়েছি আমরা। এ ধরনের নিবিড় যোগাযোগ আমাদের আরও করতে হবে। দেশে ও বিদেশে নানা ধরনের গুজব, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন আছে। এগুলোর জন্য আমাদের বিদেশি বন্ধুরা যাতে বিভ্রান্ত না হন বা সেগুলোর থেকে যাতে কোনও মূল্যায়ন না করেন, সেটির জন্য আমাদের এই উদ্যোগ।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তথ্য দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে তারা বিভিন্ন উৎস থেকে বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছে এবং যেগুলো গুজব, বিকৃত করা ডকুমেন্টারি বা ভিডিও পাচ্ছে। এর ফলে তাদের যে ধারণা তৈরি হচ্ছে, সেটি সঠিক দিকে নেওয়ার একটি উদ্দেশ্য ছিল।’
আস্থার সংকট নেই
বর্তমান পরিস্থিতির কারণে উন্নয়ন-সহযোগীদের মধ্যে কোনও আস্থার সংকট নেই জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সরকারের প্রতি তাদের আস্থার সংকট নেই। তারা যেটি তুলে ধরেছিলেন, সেটি হচ্ছে, তাদের অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, অনেক গার্মেন্টস বায়িং হাউজ আছে এবং সেখানে কাজ করে তাদের দেশের নাগরিকদের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। রাজধানীর উত্তরায় তাদের কিছু লোক আছে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে তারা যোগাযোগ করতে পারেননি। এটি খুব স্বাভাবিক উদ্বেগ। আমরা জানি যে কিছু দেশের শিক্ষার্থীরা চলে গিয়েছে।’
উন্নয়ন অংশীদার
বিভিন্ন ধরনের গুজব, মিসইনফরমেশন বা ডিসইনফরমেশনের কারণে উন্নয়ন অংশীদারদের থেকে সহযোগিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও আমরা মনে করছি না।’
‘ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গেছেন। তাদের মধ্যে জার্মান, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, জাপান ও ভারতের রাষ্ট্রদূত রয়েছেন এবং তারা সবাই উন্নয়ন-সহযোগী। তারা সবাই আশ্বাস দিয়ে গেছেন।’
‘তারা বলছেন যে “আমরা বাংলাদেশের পাশে আছি এই কঠিন সময়ে।” তারা বলেছেন এটি কেটে যাবে। কিন্তু কোনও মিটিং যদি স্থগিত হয় বা কোনও বৈঠক করার বিষয়ে তাদের যদি সমস্যা থাকে, সেটি থেকে তারা নীতি পরিবর্তন করার কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা বলা ঠিক না।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তুরস্ক থেকে তাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। আজ ওই দেশের রাষ্ট্রদূত আমার কাছে ওই সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে আমি বলেছি, আমরা বৈঠক করতে প্রস্তুত এবং তারা হয়তো ২০ বা ২৪ আগস্ট আসবে’, বলেন তিনি।
সরকারি হিসাবে এখনও মৃত্যু ১৫০
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘কে কীভাবে মারা গেছে, সেটি তদন্ত করে জানা যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এর মধ্যে ২৫ জন ছাত্র এবং তাদের মধ্যে শুধু আন্দোলনকারী রয়েছে, এমন নয়। সেখানে ছাত্রলীগের কর্মী ছিল বা বিভিন্ন ধরনের ছাত্র ছিল। বড় অংশ ছিল পথচারী বা যারা আন্দোলন দেখছিল। অনেক মেকানিক বা বেকার, এ ধরনের লোক ছিল। কিছু শিশু ছিল।’