ছাত্রদের কোটা আন্দোলন চলাকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের প্রথম তদন্ত দলটি বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশে আসতে পারে।
জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের প্রতিনিধিরা এক সপ্তাহ ধরে উপদেষ্টা, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বুধবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সম্ভবত জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল ঢাকা আসবে। এর নেতৃত্ব দেবেন রুরি ম্যানগোভেন। তিনি সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং এশিয়া-প্যাসিফিক সেকশনের প্রধান। ওনার সঙ্গে আরও দুই জন মানবাধিকার অফিসার থাকবেন।’
তারা ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকার কথা আছে। কিন্তু তারা এর বেশি সময়ও থাকতে পারেন। বাংলাদেশকে কীভাবে সহায়তা করা যায়, যে তদন্ত শুরু হতে যাচ্ছে, সেটির বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রতিনিধি দলকে যথাযথ সহযোগিতা দেবে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন জানান, উপদেষ্টা, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা দেখা করবেন।
তিনি বলেন, ‘তবে তারা জানাননি যে, তাদের পদক্ষেপগুলো কী হবে। আমরা আশা করতে পারি, প্রথম দল হিসেবে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। কোন কোন জায়গায় কী সহায়তা লাগবে এবং এর পরে যে দলটি আসবে, তাদের কর্মপরিধি কী হতে পারে, তা নিয়েও উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলবেন।’
জাতিসংঘের মূল দলটি পরে আসবে এবং আজ যারা আসবে, এটিকে অ্যাডভান্স দল হিসেবে বিবেচনা করা যায় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
ভারত
ভারত থেকে বন্যার পানি ঢুকছে এবং বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, দেশের বন্যা পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি এবং যদি প্রয়োজন পড়ে আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলবো।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন টেলিফোনে। এছাড়া ওনার আমন্ত্রণে একটি গ্লোবাল সাউথ সামিটে অংশগ্রহণ করেছেন।’
রেলের কিছু সমস্যা চলছে, যেমন- ওয়াগন রয়ে গেছে বা মিতালি এক্সপ্রেস রয়ে গেছে। এগুলো আস্তে আস্তে ঠিক হবে বলে তিনি জানান।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘একটি সমস্যা আমরা দেখছি। যেসব ছাত্র ভারতে গিয়ে তৃতীয় দেশের জন্য ভিসা নেয়, তাদের অসুবিধা হচ্ছে। ভারতীয় দূতাবাসের অফিসগুলো আংশিকভাবে কাজ করছে। সুতরাং, সেখানে কিছু সমস্যা আছে। এগুলো দ্রুত কীভাবে ঠিক করা যায়, সেটি আমরা দেখছি।’
রোহিঙ্গা
রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত ঘোলাটে। এখনও মিয়ানমার বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে এবং বাংলাদেশের কাছে যে তথ্য আছে, রাখাইন রাজ্যের একটি বড় অংশ আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এ ধরনের একটি সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা মুশকিল। তারপরও মঙ্গলবার মিয়ানমারের নতুন রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তিনি আশ্বস্ত করে গেছেন যে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবে।’
প্রতি বছর রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় এবং এর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পাওয়া যায়। এভাবে দুই বছর ধরে চলছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি—এ বিষয়ে যাতে করে তারা অর্থ প্রদানের পরিমাণ না কমায়। তারপরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেসব সংকট দেখছি, যেসব পুরনো সংকট আছে, সেগুলো পেছনে চলে যায় বলে জানান মোমেন।
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন
থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা যাবেন এবং সেখানে সাইডলাইনে কিছু বৈঠক হবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এখানে কিছু বৈঠক হবে। এছাড়া ছোট একটি গ্রুপ এবং সবার সঙ্গে সবার দেখা হবে। আমরা দেখছি কোন কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান যাবেন। আমাদের যথেষ্ট সময় আছে এবং সবার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেখা হতে পারে।’