X
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫
২২ বৈশাখ ১৪৩২

অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা বাড়ানো ও চিকিৎসকদের উপহার বন্ধের সুপারিশ   

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ মে ২০২৫, ১৫:৩৫আপডেট : ০৫ মে ২০২৫, ১৫:৩৫

স্বাস্থ্য খাতের অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা অনেক দুর্বল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এ সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন। তাদের মতে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এখনও একটি কার্যকর ও অভিযোগ নিষ্পত্তির সুলভ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি, যা জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত অভিযোগগুলো যথাযথভাবে সমাধান করতে পারে, সেটা সরকারি হোক বা বেসরকারি খাতেই হোক।

সোমবার (৫ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। ৩২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বিনামূল্যে অথবা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছ থেকে চিকিৎসকদের উপহার গ্রহণ করা বন্ধ করারও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। 

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল হলো দেশের চিকিৎসক ও দন্ত চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এবং এদের পেশাগত আচরণ সম্পর্কিত অভিযোগ নিষ্পত্তির এখতিয়ারও এই সংস্থার রয়েছে। তবে, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অভিযোগ নিষ্পত্তিতে খুবই দুর্বল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, যার ফলে রোগী ও তাদের পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ব্যর্থতা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জনগণের আস্থাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করছে।

এতে বলা হয়, মেডিক্যাল এথিকস কমিটি এবং রিপোর্টিং গাইডলাইন থাকা সত্ত্বেও, অনিয়ম ও অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রয়োগ ক্ষমতা দুর্বল। দেরি ও জবাবদিহির অভাবে বহু অনিয়মের অভিযোগ নিষ্পত্তি হয় না। এছাড়া, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল একটি বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থায় কাজ করে, যেখানে অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় অত্যন্ত দুর্বল। ফলে অকার্যকারিতা আরও বাড়ে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে দ্রুত, স্বচ্ছ এবং কার্যকর করতে একটি আধুনিক ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা জরুরি। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অভিযোগকারীরা সহজে অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন এবং প্রতিটি অভিযোগের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এতে স্বয়ংক্রিয় অভিযোগ শ্রেণিবিন্যাস, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি, তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সেবাপ্রদানকারীর এবং অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রেখে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে। এই প্ল্যাটফর্ম স্বাস্থ্য খাতের জবাবদিহি ও নৈতিকতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রতিবেদনে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা বিষয়ে বলা হয়েছে,  অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সর্বজনীন প্রাপ্যতাকে একটি মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। দেশের সব নাগরিককে প্রয়োজনের ভিত্তিতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিনামূল্যে (যথা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে এবং অতি দরিদ্রের ক্ষেত্রে) বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করতে হবে। এজন্য সরকারি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়ন ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠিত ও শক্তিশালী করতে হবে। বেসরকারি খাত থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ওষুধ সংগ্রহে কৌশলগত ক্রয়ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে। এই ফার্মেসিগুলো জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় পরিচালিত হবে।

এছাড়া  অ্যান্টি-ক্যান্সার, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকাভুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর ভ্যাট এবং প্রযোজ্য অন্যান্য শুল্ক ও কর শূন্য করার সুপারিশ করা হয়েছে। অপরদিকে, ভিটামিন, মিনারেলস, ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউট ও প্রোবায়োটিকসহ স্বাস্থ্য-সম্পূরক ও উচ্চমূল্যের ঔষধের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে একদিকে জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রাপ্যতা বাড়বে, অপরদিকে তুলনামূলক কম-প্রয়োজনীয় ও বিলাসমূলক পণ্যে কর বাড়িয়ে রাজস্ব আয় জোরদার করা যাবে।

প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবনার আলোকে চিকিৎসকদের ওষুধের নমুনা বা উপহার প্রদান করে কোনও ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মেডিক্যাল কনফারেন্স আয়োজনের আগে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অনুমোদিত  ক্রেডিট পয়েন্ট গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে এবং মেডিক্যাল কনফারেন্সের সব আয়-ব্যয়ের হিসাব ট্যাক্স অফিসে জমা দিতে হবে এবং এর একটি কপি বিএমইএসি-তে জমা দিতে হবে।

কনফারেন্সে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো অনুমোদিত কনফারেন্সে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারবে, তবে কেবলমাত্র প্রদর্শনী এলাকায় পণ্যের উপস্থাপনার জন্য তাদের প্রতিনিধির শারীরিক উপস্থিতি অনুমোদিত থাকবে। কোনও ধরনের খাবার, উপহারের ব্যাগ বা অন্য কোনও উপহার সামগ্রী সরবরাহ ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধূলা, রাফেল ড্র ইত্যাদি করতে পারবে না।

সুপারিশে বলা হয়, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসকদের ই-মেইল বা ডাকযোগের মাধ্যমে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবে। প্রতিনিধিরা সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে দৈনন্দিন প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারবে না। চিকিৎসকের চেম্বার বা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কোনও ধরনের ওষুধের/ পণ্য প্রচার কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে, কারণ এসব কর্মকাণ্ডে চিকিৎসকের মনোযোগ বিঘ্নিত হয় এবং রোগীরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন।

/এসও/পিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কিছুক্ষণের মধ্যে রওনা হ‌বেন খা‌লেদা জিয়া, সবশেষ যা জানা গেলো
কিছুক্ষণের মধ্যে রওনা হ‌বেন খা‌লেদা জিয়া, সবশেষ যা জানা গেলো
নারীর প্রতি ‘অশালীন মন্তব্য’: হেফাজত ইসলামকে লিগ্যাল নোটিশ
নারীর প্রতি ‘অশালীন মন্তব্য’: হেফাজত ইসলামকে লিগ্যাল নোটিশ
বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে আরও কর্মী নিতে আগ্রহী ইতালি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে আরও কর্মী নিতে আগ্রহী ইতালি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
১০ মাসের মধ্যে এপ্রিলে রফতানি আয় সর্বনিম্ন, ধাক্কা গার্মেন্ট খাতেও
১০ মাসের মধ্যে এপ্রিলে রফতানি আয় সর্বনিম্ন, ধাক্কা গার্মেন্ট খাতেও
সর্বাধিক পঠিত
এবার আড়াই হাজার ভোট পাওয়া আরিফুরকে মেয়র ঘোষণা করলেন আদালত
এবার আড়াই হাজার ভোট পাওয়া আরিফুরকে মেয়র ঘোষণা করলেন আদালত
ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূত করার প্রস্তাব: সমাধান নাকি নতুন সংকট?
ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূত করার প্রস্তাব: সমাধান নাকি নতুন সংকট?
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
বিদেশে পড়াশোনা ও চিকিৎসা খরচ পাঠানো সহজ হলো
বিদেশে পড়াশোনা ও চিকিৎসা খরচ পাঠানো সহজ হলো