আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কারের পথে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভোটে অনিয়ম হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফেরত পেতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের সভাকক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ছয় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫; নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫; নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫; মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর হলফনামা সংশ্লিষ্ট বিষয়; ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা এবং আরও কয়েকটি বিবিধ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
মো. সানাউল্লাহ বলেন, কোন নির্দিষ্ট আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি। পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা আমাদের আগে ছিল। সেটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন আমাদের কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা আছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্র বাতিলের সক্ষমতা ইসির ছিল; যেটা ছিল না সেটা হচ্ছে, পুরা নির্বাচনি আসনের বন্ধ করার। যেটা একসময় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এটাও আমরা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছি এবং আশা করি ফেরত পাবো।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া প্রার্থীর হলফনামায় ফৌজদারি মামলার ২০ বছরের সীমা তুলে দিয়ে আজীবনের তথ্য সংযুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন ১৯৯১-এর সংশোধনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় সভায়। প্রার্থীদের হলফনামায় দ্বৈত নাগরিকত্ব ও ফৌজদারি মামলার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে—এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি মামলার তথ্য লাইফটাইম হিস্ট্রি হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে।
তিনি বলেন, সংশোধিত হলফনামাটাকে বেশ টাইট করা হয়েছে এবং এটা সংস্কার কমিশনের যতগুলো প্রস্তাব ছিল মোটামুটি সবগুলো ধারণ করা হয়েছে।
সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস প্রসঙ্গে ইসি বলেন, ডিলিমিটেশনটা আমাদের ফাইনাল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। টেকনিক্যাল কমিটি দিয়ে এটাকে যাচাই-বাছাই করার সুযোগ আছে। আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে ঢাকায় আসন সংখ্যা খুব বেশি কমবে না।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, খসড়া প্রকাশের উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি। কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন পেলে শিগগির খসড়া প্রকাশ করা হবে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ২২১টা আসনের বিষয়ে কোনও আবেদনই হয়নি। আশা করি আগামী সপ্তাহে পুরো প্রকাশ হবে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম প্রসঙ্গে এই ইসি বলেন, আজ পর্যন্ত ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬০২ জন বাদ পড়া ভোটার আমরা পেয়েছি, যারা নিবন্ধন করেছেন নতুনভাবে। আর তালিকার মধ্যে মৃত ভোটার পেয়েছি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন। ভোটার তালিকা হালনাগাদের একটি সম্পূরক তালিকা আগামী সপ্তাহেই প্রকাশ করা হবে।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের প্রাথমিক যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে সানাউল্লাহ বলেন, যাচাইয়ের পরে যেসব দল ফরমেট অনুযায়ী সব শর্ত শেষ করেছেন সেগুলো মাঠ পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের জন্য চলে যাবে। আর যারা সম্পন্ন করেননি তাদের ১৫ দিনের সময় দিয়ে আবারও চিঠি দেওয়া হবে।
ইসি সানাউল্লাহ জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের বিষয়টি আজকের সভায় উপস্থাপন হয়েছে। পরে এটি নিয়ে আলোচনা হবে। কমিশন সভায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন বা অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটা সার্ভিস, যেটা সংস্কার প্রস্তাব করেছেন। আমরা এটার সঙ্গে একমত শুরু থেকেই এবং এটা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান দ্বারা পরিচালিত হবে।
তিনি জানান, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন ১৯৯১-এর যেটা সংশোধনী, এখানেও ছোট তিন থেকে চারটি পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষমতা পুনঃঅর্পণ এটা পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে। কিছু জিনিস ফাইন টিউন করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপরে যারা নিয়োগ পাবেন তাদের নিয়োগ কমিশন অনুমোদিত করবে। আগে যেটা সরাসরি সচিব করতেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যে ডিপার্টমেন্টাল হেড, তার নিয়োগও কমিশন করবে। পাশাপাশি টেকনিক্যাল যে বা যারা আছেন, তাদের ব্যাপারে আমরা একটা নীতিমালা করতে যাচ্ছি।