X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবেই হোক একটা পরিচয় মা’দের দাঁড় করাতে হবে

জাকিয়া আহমেদ
০৮ মে ২০১৬, ০১:৩৩আপডেট : ০৮ মে ২০১৬, ০১:৩৭

শিশুকে ঘরে রেখে কাজে ছুটতে হয় মাকে- কর্মজীবী নারীরা সন্তান এবং অফিসের মাঝে নানা সমস্যায় পড়েন প্রতিনিয়ত। হয় সন্তানকে বাসায় রেখে আসছেন অথবা চাকুরি ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু বাসায় সন্তানকে রেখেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না তারা। প্রতিনিয়ত সন্তানের দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়,আর তাতে কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। কাজ সঠিক না হওয়ায় কথা শুনতে হচ্ছে অফিসে। একদিকে চাকরি,নিজের স্বপ্ন, আরেকদিকে সন্তান-এভাবেই নানা টানাপোড়েনের মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে কর্মজীবী মায়েদের। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়মের ওপর প্রতিষ্ঠিত।সেখানে সরকারি নিয়মের কোনও বালাই নেই।
আরও পড়তে পারেন: বিশ্ব মা দিবস আজ
ছয় মাসের সন্তানকে বাসায় রেখে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করি, বাচ্চাটা বুকের দুধ খায়,অথচ সারাদিন এখন তাকে আমি খাওয়াতে পারি না, এটা সবচেয়ে বড় সমস্যা। বাইরের দুধ খেতে চায় না,অনেক দেখেও এখন যেটা খাওয়াচ্ছি সেটা খাওয়ানোর ফলে তার সমস্যা হচ্ছে।এজন্য,গণমাধ্যমগুলোতে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকা উচিত-বলছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনে কাজ করা সাংবাদিক ফারাহ হোসাইন।
ফারাহ বলেন,একজন চাকরিজীবী মায়ের সংগ্রামটা কতোভাবে করতে হয় তা এখন বুঝতে পারছি।অফিসগুলোতে যদি ডে-কেয়ার সেন্টার থাকতো তাহলে আমাদের মতো মায়েরা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারতেন।
ফারাহ বলেন,পরিচিত একজন নারী মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছিলেন চার মাস। পরে তিনি চাকরিটাই ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।তার বাসায় বাচ্চাকে দেখার মতো কেউ ছিল না।
অন্যদিকে,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কাজ করা একজন সাংবাদিক বলেন,আমরা মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলি, কিন্তু আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। আমি মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছি চার মাস। এই চার মাস পেয়েছি অর্ধেক বেতন,আর পরের দুই মাস বেতনই পাইনি, এভাবেই চলছে আমাদের জীবন। আরেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করা আমার এক সহকর্মী মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়ে কোনও বেতনই পাননি। পরে তিনি চাকরিটাই ছেড়ে দেন সন্তানের জন্য।
মায়েদের চাকরি করার ঝামেলাটা শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়,অনেক উচ্চ শিক্ষিত মা কেবল সন্তানের কথা চিন্তা করেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করে শুধু সন্তানদের কথা চিন্তা করে তিনি চাকরি করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী বলেন,আমার বন্ধুরা আজ  গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত,তাদের দেখলে একদিকে যেমন খুশি হই,তেমনি নিজের মধ্যে হাহাকার হয়। আমিও ওদের মতো আজ  কোথাও প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারতাম। বিয়ের পর তিন সন্তানের মা হবার পরে মনে হলো,সন্তানদের কে দেখবে। ওরা একটু বড় হলে চাকরি করবো, কিন্তু সন্তানদের বড় করতে গিয়ে,তাদের ক্যারিয়ার গড়ে দিতে গিয়ে আমার অনেক বেশি দেরি হয়ে গেল।

অপরদিকে সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,আমি মনে করি মাতৃত্বকালীন ছুটিটা একটি রাষ্ট্রীয় আইন।। এটি একটি ইতিবাচক দিক। ব্যক্তিগতভাবে আমি যত জায়গায় কাজ করেছি সেখানে বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। মনে আছে,প্রচলিত আইনের বাইরেও আমি কিছু সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিছু বিষয় কেবল বিবৃতির বিষয় নয়,কাজের বিষয়। আমি নারী অধিকারে বিশ্বাসী এটা বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না,আচরণেও থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করি অথচ নারীদের পেশাগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা,আইনগত অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে যদি দায়িত্ব পালন না করি তাহলে বিবৃতিই হয়তো আমি ভালো দিলাম,কিন্তু বাস্তবে কাজটি করছি না।

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল আরও  বলেন,অন্য অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো যদি গণমাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ অন্য বিষয়গুলো কার্যকর করা না হয় তাহলে সাংবাদিক ইউনিয়নের দায়িত্ব হচ্ছে বিষয়টিকে সামনে রাখা। ইউনিয়নের দায়িত্ব কেবল বেতন ভাতা বৃদ্ধি না,কাজের পরিবেশসহ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাও তাদের কাজ। কাজেই দাবি করবো, সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো নীরিক্ষা করবে,কোন প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের এই সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করছে এবং প্রকারান্তরে নারী অধিকারে ভিন্ন আচরণ করছে।

গণমাধ্যম-যারা অন্যের ভুল ত্রুটি ধরবে,তাদের হাউজে রাষ্ট্রীয় নীতি কার্যকর হবে না-এ জন্য গণমাধ্যমের একজন সিনিয়র কর্মী হিসেবে আমি লজ্জা বোধ করছি জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল পদে যারা আছেন তারা মালিকদের এ বিষয়ে বলবেন এবং বোঝাবেন এটা আশা করছি। আরেকটি কথা হলো, গণমাধ্যম কর্মীদের একটি বড় অংশ নারী। তারা যদি সেখানে কাজের পরিবেশ না পায় তাহলে এর দায় দায়িত্ব যারা পরিবশে সৃষ্টি করতে পারছি না তাদেরকেই নিতে হবে।

আরও পড়তে পারেন: নির্বাচনি ডিউটিতে থাকা বিজিবি সদস্যের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

তবে এই টানাপোড়েনের মাঝে মায়েদের থেমে থাকলে চলবে না মন্তব্য করেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন,সন্তানের জন্য মায়ের ক্যারিয়ার সেক্রিফাইস করা উচিত না। তিনি বলেন, সেক্রিফাইস করা উচিত না এ জন্য যে,সন্তানকেও দেখতে হবে এবং নিজের ক্যারিয়ারও রাখতে হবে। আমাদের দেশে এখনও গৃহকর্মী পাওয়া যায়,দরকার হলে ওদের সব চাহিদা পূরণ করে,বেশি বেতন দিয়ে তাদেরকে নিজের মানুষের মতো করে রাখতে হবে বাসায়,যেন শিশুটিকে সে দেখে রাখতে পারে।আর কোনও মা’ই আমাদের দেশে চাকরি করে ব্যাংকে টাকা জমান না। সংসার-সন্তানের জন্যই সেটা ব্যয় হয়।

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সেলিনা হোসেন বলেন,আমার সন্তান স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার খোঁজ নেওয়া এবং বাইরের কাজ সমান তালে করেছি।নিজের মা কিংবা শাশুড়ি থাকলে তো অনেক সুবিধাই পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেক আত্মীয়-স্বজন থাকে পরিবারে তাদের সাহায্যও নেওয়া যায়।

নিজের ক্যারিয়ারটা যেন নষ্ট না হয়ে যায় সেইদিকটা নারীকেই ম্যানেজ করতে হবে আর এক্ষেত্রে নারীদেরকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করতে পারেন স্বামী। স্বামীর দেখা উচিত,যেন তার স্ত্রী একসঙ্গে সব কাজ করতে পারেন,স্ত্রীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতা থাকতে হবে তার।

 

/এমএসএম /

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আজ নির্বাচন
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতিআদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আজ নির্বাচন
আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু
আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু
বদির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের জিডি
বদির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের জিডি
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা