X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
রাজধানীর মানুষের বিচ্ছিন্ন জীবন

প্রতিবেশী শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে

উদিসা ইসলাম
১৪ মে ২০১৬, ১২:৫৪আপডেট : ১৪ মে ২০১৬, ১৩:১৭

প্রতিবেশী শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে

রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে রহস্যজনক মৃত্যু হয় বিমানবালা হুমায়রা জাহানের। নিজের বাসার মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় পচে-গলে তিনদিন পর উদ্ধার হয় লাশ। অথচ তিনতলা এই বাড়ির দ্বিতীয়তলায় ভাই ও নিচতলায় তার বাবা আহমেদুল ইসলাম চৌধুরী থাকতেন। পুলিশ বলছে লাশ কম করে হলেও তিন চারদিন আগের। আর এ কয়দিনে নিচতলায় থাকা বাবা ভাইও খোঁজ করেননি তার।
একটা ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে পাশের ফ্ল্যাটের ঘরের জানালার দূরত্ব দেড় হাত। ওই জানালার ওপারে যারা থাকেন তাদের সঙ্গে বারান্দা থেকে চোখাচোখি হয়। ওই ঘরের মানুষেরা এ বারান্দার কাপড় চেনেন গত ছয় বছর ধরে। কিন্তু কেউ কারোর নামধাম জানেন না। রাজধানীর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির মানুষেরা দিনে দিনে বিচ্ছিন্ন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কালেভদ্রে দেখা সাক্ষাৎ হয়।কিন্তু প্রতিবেশীর সঙ্গে লিফটে দেখা হলেও কথা হয় না।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন,আধুনিক সমাজে নিরাপত্তার কথা ভেবে মানুষ প্রতিবেশীকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। আর এই বিশ্বাস না করার মানসিকতা তাকে আরও বেশি অনিরাপদ করে তুলছে। এই বিচ্ছিন্নতার কারণে সে যে অনিরাপদ সেটা যত দ্রুত বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল।

আরও পড়ুন: প্রতিবেশী শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে  ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের প্রশ্ন




সিদ্ধেশ্বরী খন্দকার গলি-নিবাসী রহমান সাহেব সাতবছর ধরে এই এলাকায় আছেন। তার অ্যাপার্টমেন্টে ৩২টি পরিবার বাস করে। এই ফ্ল্যাটের একটি পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যতা আছে, তাও সেটা তার মেয়ের বন্ধুর বাসা বলে। কেনও আর কারোর সঙ্গে সখ্যতা নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে বসবাস শুরু করেছে। তাদের কার কেমন জীবন-যাপন এবং কোথায় কোন ঝামেলা আছে সেই ভয়ে নিজে নিজেই থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া। বসুন্ধরা ও ধানমন্ডিতে আত্মীয়রা থাকেন। বিভিন্ন উৎসবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখাই নিরাপদ। কিন্তু বর্তমানে যে ধরনের সহিংসতা ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হতে হচ্ছে সেক্ষেত্রে প্রতিবেশীর সঙ্গে সখ্যতা রাখলে কিছুটা নিরাপদ থাকা যায় কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন,এখন তো আরও খারাপ অবস্থা। জানিওনা কার মনে কী আছে।

মিরপুরের শ্যাওড়া পাড়ায় ২০১৪ সালের কোনও এক শুক্রবার শামীম স্মরণিতে দুপুর ২টার দিকে জোড়াখুনের ঘটনা ঘটে। পাশের ফ্ল্যাটের জানালার দূরুত্ব ৫০ গজ। খুনের দুইঘণ্টা পর ঘুম থেকে উঠে ওই বাসার সদস্যরা বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হলে নিচে ভিড় আর পুলিশের গাড়ি দেখে প্রশ্ন করেন, কী হয়েছে। জোড়া খুনের ঘটনা তখন শোনেন তারা। সেই ফ্ল্যাটে কয়েকজন ছেলে মেস করে থাকতো, সে তথ্যও আশেপাশের মানুষের জানা ছিল না।

আরও পড়ুন:  প্রতিবেশী শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল চলছে, শাহবাগে যানজট

এই ঘটনার পরও প্রতিবেশীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেন কি করে প্রশ্ন করেন উত্তরার গার্মেন্ট ব্যবসায়ী জিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, এখন নিজের নিরাপত্তা নিজের কাছে। কেউ যখন আপনার নিরাপত্তা দিতে পারবে না, তখন আপনি নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নেবেন। অন্যের ওপর আস্থা হারাবেন। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ঈদের দিন সবাই গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ার পর মাত্র কয়েকটি ফ্ল্যাটে যে হাতেগোনা এক দুইটা পরিবার থাকে তাদের মধ্যেও দেখা সাক্ষাত বা শুভেচ্ছা বিনিময় হয় না। আমরা এতেই অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। বাচ্চাদের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে আমার বাচ্চা পাশের বাসার বাচ্চার সঙ্গে কথা বলে দু’জনের দুই বারান্দা থেকে, অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সেটা করতেও নিষেধ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন বলেন, প্রতিবেশী আমার রক্ষাকবজ এই ধারণাই পাল্টে গেছে। যেকোনও উৎসব আপ্যায়নে পাশের ফ্ল্যাটের কেউ দাওয়াত পান না। এই জায়গায় তো আমরা একদিনে আসিনি। দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস থেকে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।এখন হুট করে যদি আপনি প্রতিবেশীর সঙ্গে সখ্য বোধ করতে বলেন তা হলে সে করবে না। কারণ অচেনা মানুষ সম্পর্কের ভিত্তিতে যে আপন ও নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে সেই ধারণাই পাল্টে ফেলেছি।

আরও পড়ুন: প্রতিবেশী শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে একাদশে ভর্তি শুরু ২৬ মে, ক্লাস ১০ জুলাই

সমাজবিশ্লেষক ও নারীনেত্রী খুশী কবীর তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে মনে করেন আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে। কিন্তু বড় ক্ষতি হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। যারা সমাজে একতা ও সংগঠিত হয়ে পরস্পরের সঙ্গে বাস করার বিষয়টি জানতেই পারলো না। তিনি তার ছেলেবেলার উদাহরণ টেনে বলেন, ছোটবেলায় সরকারি কলোনিতে বেড়ে ওঠার কারণে প্রতিবেশীর সঙ্গে আদান প্রদান ছিলো, প্রতিবেশীর ওপর নির্ভরশীলতা ছিল কোন কোন ক্ষেত্রে। পরবর্তীতে যখন ধানমন্ডিতে থাকতে এলাম সেখানেও এক ধরনের যোগাযোগ ছিল যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং এক সময় আমরা যান্ত্রিক জীবনে ঢুকে পড়ি। এখনকার সময়ে আমরা পাশের দরজায় কে থাকে তাই জানি না। অ্যাপার্টমেন্টে কোনও কিছু অসুবিধা হলে কমিটিকে বলতে হয়। সেখানে সেটা আলাপ বা সমাধান হবে কিনা তাও জানা নেই এবং ভাড়াটেদের এক্ষেত্রে বলারও কিছু নেই। এমন পরিস্থিতির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তিনি বলেন, বড় ক্ষতি হলো বিপদে সহযোগিতা চাওয়া যাচ্ছে না। কারণ কেউ কাউকে চিনি না। এর চেয়ে বড় অনিরাপদবোধ আর কী থাকতে পারে!
/এমএসএম /আপ- এপিএইচ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ