X
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫
২১ বৈশাখ ১৪৩২

‘শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ে মানুষের আস্থা নেই’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৮ মে ২০১৬, ১৭:০৫আপডেট : ২৮ মে ২০১৬, ১৭:১৩

বাজেট নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বৈঠকি বাজেটকে কেন্দ্র করে এর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনাকে অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। এমন ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সেদিকে সরকারকে সতর্ক নজর রাখার আহ্বান জানান তারা। এ সময় অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন,  শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে মানুষের আস্থা নেই। আগে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।’ শনিবার বাংলা ট্রিবিউন আয়োজিত 'কেমন বাজেট চাই' শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন,  আগে বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে মিছিল মিটিংসহ একটা হাউকাউ লেগে যেত। এখন বাজেট ঘোষণার আগেই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে, বেসরকারি বিনিয়োগকে আকর্ষণ করতে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন করার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, সে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক জোনগুলোয় খাতওয়ারি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ইকোনোমিক জোনগুলোকে সময়ভিত্তিক টার্গেট দিতে হবে। যেসব ইকোনোমিক জোন নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো কবে নাগাদ শেষ হবে, তার সময় নির্ধারণ করা উচিত। অনেকেই এই জোনগুলোর ভবিষ্যৎ বিসিক শিল্প নগরীর মতো হয়ে যায় কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। সরকার প্রতিবছরের বাজেটেই শিক্ষা খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়, সরকারের এই ঘোষণাটি শতভাগ কার্যকর হওয়ার বিষয় নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, শুধু বরাদ্দই নয়, শিক্ষার গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে।  তারা আরও বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের অসমতা। এটা দূর করতে হবে। অবকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষকদের মানও বাড়াতে হবে। যেহেতু তরুণরাই আগামী দিনের দেশের কাণ্ডারি, সেহেতু তাদের শ্রম ও মেধা বিকাশে আসন্ন বাজেটে একটা সন্তোষজনক বরাদ্দ রাখা উচিত।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষায় যে বৈষম্য রয়েছে, সেটা দূর করতে হবে। ভালো শিক্ষক নিয়োগ এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো বাজেটে থাকতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমতিরও বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন তারা।

রাজধানীর পান্তপথে অবস্থিত বাংলা ট্রিবিউন কার্যালয়ে মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকিতে অংশ নিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের প্রেসিডেন্ট নাসিম মঞ্জুর, অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট উইম্যান এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মৌসুমি ইসলাম, ইএবি’র প্রেসিডেন্ট সালাম মুর্শেদী, সিপিডি’র ফেলো রিসার্চার তৌফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান  এবং বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বৈঠকি চলে বেলা ১টা পর্যন্ত। ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক এই বৈঠকি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ সরাসরি সম্প্রচার করে।

আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা তুলে ধরতে 'কেমন বাজেট চাই' শীর্ষক বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান পাঠকদের পাঠানো বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরেন। তিনি জানতে চান, শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশি বাজেট বরাদ্দ রাখার কথা বলা হলেও এটা কতটা ঠিক?

‘শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ে মানুষের আস্থা নেই’

জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আবু আহমেদ বলেন, 'ধরে নিলাম, বাজেট আরও বাড়িয়ে দেওয়া হলো। সেটা তো যথাযথ দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও তাই। এখানে কোনও জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া বের করা যায়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তাতে মানুষের আস্থা নেই। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, কিছু ব্যবসায়ী টাকা বানাচ্ছেন, তারা সুখেও আছেন। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সুবিধা নিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু সেটার ওপর নির্ভর করে অর্থনীতি আগায় না। এক্সট্রা সুবিধা দিয়ে খুশি রাখলে সেখানে ভালো কিছু হয় না। তাই সব ব্যবসায়ীকে সমান সুযাগ দিতে হবে।'

আবু আহমেদ আরও বলেন, 'জিনিসের দাম কমালে চাহিদা বাড়বে এবং লাভও বেশি হবে। কিন্তু পেট্রোলিয়াম ব্যবসায় জড়িতরা এটা বোঝেন না। জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি থাকার পরও সরকার তা কমাতে চান না। তেলের দাম বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কমানো হোক।'

আলোচনার শুরুতে একাত্তর টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, 'এবারের বাজেট কলেবরে বড় মনে হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশে এর চেয়েও বড় বাজেট প্রয়োজন। কারণ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন আছে। আমাদের ৫০ শতাংশ মানুষ আয়করের বাইরে এখনও। তাদের যদি করের মধ্যে আনা না যায় তাহলে যারা কর দিচ্ছেন তাদের ওপরই চাপ বাড়বে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ রফতানিকারকদের প্রতিষ্ঠান ইএবি’র প্রেসিডেন্ট ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, খাতওয়ারি ইকোনোমিক জোনগুলোকে সময়ভিত্তিক টার্গেট দিতে হবে। যেসব ইকোনোমিক জোন নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেগুলো কবে শেষ হবে, তা কেউ জানে না। এগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে সময় বেঁধে দিতে হবে। নির্দেশনা দিতে হবে যে, ইকোনোমিক জোনের কাজ এই সময়ের মধ্যে শেষ হবে। এতে উদ্যোক্তারা আস্থা পাবেন। এতে তাদের নিজস্ব বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের প্রেসিডেন্ট নাসিম মঞ্জুর বলেন, 'প্রশ্ন তোলা হয়, বাংলাদেশে এত বিদেশি কেন? আমরা তাদের কাছ থেকে যা পাই সেটা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পেলে কখনও তাদের আনা হতো না।' তিনি আরও বলেন, 'স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দুটোর মানই আমাদের দেশে খারাপ। তা বাড়াতে হবে।’

অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট উইম্যান এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মৌসুমি ইসলাম বলেন, 'সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে বাজেট সবসময় কম থাকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আগামী দিনে বাংলাদেশের কাণ্ডারি তরুণরা। তাই আসন্ন বাজেটে তাদের মেধা ও শ্রম বিকাশে সন্তোষজনক বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশের বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ালে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। 

‘শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ে মানুষের আস্থা নেই’

বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল বলেন, বিশ্বের সঙ্গে দেশের তেলের দামের সামঞ্জস্য রাখার কথা আমরা যেমন বলি, ঠিক তেমনি ডলারের ক্ষেত্রেও বলতে পারি কিনা। তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজেট এলেই সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বাজেট ঘোষণার পর এমন পণ্যেও দামও বাড়ে, যার সঙ্গে বাজেটের কোনও সম্পর্ক নেই।

বৈঠকে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের প্রেসিডেন্ট নাসিম মঞ্জুর বলেন, বাজেটের পুরো আলাপটাই হয় রাজস্ব নিয়ে। কিন্তু সার্বিকভাবে এখানে পরিবর্তন দরকার। আমরা যারা বিনিয়োগ করি, তারা জানি, ব্যবসা করার খরচ ক্রমশই বাড়ছে। ব্যবসা ক্ষেত্রে যেভাবে জটিলতা বাড়ছে তাতে সহসাই বিনিয়োগ বাড়বে না। জটিলতা কমালেই কেবল বিনিয়োগ বাড়তে পারে। তিনি বলেন, যে কোনও কারণেই হোক প্রকৃত অর্থেই আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেশি বরাদ্দ দেই না। আর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পৃথিবীর ১৯০টা দেশের মধ্যে ১৮৯তম অবস্থানে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, 'বলা হচ্ছে সুদের হার কমানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতে সুদের হার ৯, ৭ কিংবা ৫ শতাংশ। সেখানে গত কয়েক বছরে ৩২ বার পেট্টোলিয়ামের দাম কমানো হয়েছে। অথচ আমরা ক্রমশ দাবি জানিয়ে এলেও তা কমানো হয় না। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে না। লাভ কমে গেলে বিনিয়োগ কমে যাবে। ব্যবসার খরচ এবং জটিলতা কিভাবে কমানো যায়, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

‘শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ে মানুষের আস্থা নেই’

আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির ফেলো রিসার্চার তৌফিকুল ইসলাম খান। তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'আমাদের দেশে ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কর্মসংস্থানের যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়, তাও ভালো নয়। এ বছর আমরা ষান্মাসিক একটি পরিসংখ্যান পেয়েছি। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৩ থেকে জুলাই ২০১৫ পর্যন্ত ৩ লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে যেটা আগে প্রায় ১৩ লাখ ছিল। দুই বছর সময়ে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে ১২ লাখ কর্মসংস্থান কমে গেছে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

আরও পড়তে পারেন: ব্যবসা ক্ষেত্রে জটিলতা কমলে বিনিয়োগ বাড়বে

আরও পড়তে পারেন: কর্মসংস্থান বৃদ্ধি বড় চ্যালেঞ্জ

/এসআই/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে: মির্জা ফখরুল
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে: মির্জা ফখরুল
ফিলিপাইনের বিমানবন্দরে গাড়িচাপায় শিশুসহ নিহত ২
ফিলিপাইনের বিমানবন্দরে গাড়িচাপায় শিশুসহ নিহত ২
ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা গ্রেফতার
ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা গ্রেফতার
সাহিত্য মহৎ মনোচিকিৎসক : ওলগা তোকারচুক
সাহিত্য মহৎ মনোচিকিৎসক : ওলগা তোকারচুক
সর্বাধিক পঠিত
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
বিমানবাহিনীর সদস‍্যকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর, ২ এএসআই প্রত‍্যাহার
বিমানবাহিনীর সদস‍্যকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর, ২ এএসআই প্রত‍্যাহার
হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলছে, আমি কেন পারবো না: সামিত সোম 
হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলছে, আমি কেন পারবো না: সামিত সোম 
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ২ জন: প্রতিবেদন
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ২ জন: প্রতিবেদন