X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
পেটের মধ্যে গজ রাখায় মৃত্যু

মামলা তুলে নিতে চিকিৎসকের ‘মাস্টারপ্ল্যান’!

উদিসা ইসলাম
২৯ মে ২০১৬, ১৯:০৬আপডেট : ২৯ মে ২০১৬, ১৯:০৬




ছবি প্রতীকী অপারেশনের ‘ভুলে’ প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মামলার আসামি ফেনীর ডাক্তার কাইয়ুম বহাল তবিয়তে বিদেশ সফর করছেন। আর বাদী পক্ষকে হুমকি ধামকি দিয়ে মামলা তুলে নিতে সাজানো ‘মাস্টারপ্ল্যান’ বাস্তবায়নে কাজ করছেন তার দুই সহকর্মী। বাদী পক্ষ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, অপারেশনের সময় ‘ভুল করে’ পেটের ভেতর গজ রেখে দেওয়ায় সন্তান জন্ম দেওয়ার ১২ দিনের মাথায় মারা যান বিলকিস। হাসপাতাল ছাড়ার পর তীব্র ব্যথা নিয়ে চিকিৎসককে ফোন করে না পেয়ে কুমিল্লা থেকে তাকে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকা মেডিক্যালে তার দ্বিতীয় দফায় অপারেশন হয়। ডাক্তাররা জানান, বৃহদান্ত্রের ট্রান্সভার্স কোলন অংশের মাঝামাঝি অংশে একটা গজের টুকরা থাকায় ইনফেকশন হয়ে পুঁজ জমে যায়। ফলে দ্বিতীয় দফা অপারেশনের পরও তাকে বাঁচানো যায়নি।
ডাক্তারের ‘ভুলের’ কারণে ১২ দিনের শিশুর মা বিলকিসের এই চলে যাওয়াকে ‘হত্যা’ বলছে তার পরিবার।
অন্যদিকে অভিযুক্ত চিকিৎসক দিব্যি কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি মামলা চললেও তিনি ইতালি সফরে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
জানা গছে, দীর্ঘ আট মাস ধরে আইনি লড়াইয়ের পর এখন সেই চিকিৎসকের ‘মাস্টারপ্ল্যান’- এর স্বীকার হতে চলেছে সেই পরিবার। ‘সামাজিক মীমাংসা’ নাম দিয়ে ওই চিকিৎসক তিনজনকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন আইনি লড়াই থেকে বিরত থাকতে। মামলা তুলে নিতে বা মীমাংসা করে আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করতে প্রস্তাবের পাশাপাশি আছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে দিয়ে বাদী পক্ষকে রাজি করানোর হুমকি।

কিভাবে রাজি করাবেন বলে পরিকল্পনা করছেন- প্রশ্নে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সেই চিকিৎসকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে একাধিকজনকে দিয়ে ভয় দেখানো ও মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা, তারপরও কাজ না হলে মামলার আলামত নষ্ট করা এবং এলাকার মানুষ নিয়ে একটা আন্দোলন তৈরি করা। সবশেষ জনপ্রতিনিধিকে বলে বিষয়টা মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া।

সেই চিকিৎসক ডা. কাইয়ুম ফেনী জেলা গাইনোকলজি সমিতির সভাপতি। মহিপালে এসএসকে রোডে তার মালিকানাধীন একটি ক্লিনিকও রয়েছে। মামলা সত্ত্বেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে আর তার সহকর্মী খিজির হায়াৎ, অভিক ও বেলায়েত মিলে আইনি প্রক্রিয়া থামানোর চেষ্টায় আছেন।

মারা যাওয়া বিলকিসের বোনজামাই অ্যাডভোকেট নিজামউদ্দিন ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর, সিআর ১০৩৫। কোর্ট নম্বর, এমএম ২০)। মামলায় ডা. আবদুল কাইয়ুমকে প্রধান আসামি এবং ফেনী প্রাইভেট হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স লিপি ও আরেক সিনিয়র স্টাফ নার্স রুমিকেও আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

মামলার বাদী নিজামউদ্দিন চিকিৎসকের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক তৎপরতা প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা আমাকে পিছিয়ে যাওয়ার ‘পরামর্শ’ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে অভিযুক্তরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগ করে সমঝোতার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা এই মামলাটি লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মামলার ধারা আপসযোগ্য নয় বলে অভিযুক্তদের জানিয়েছি। যে তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে আছে, তার ভিত্তিতে আশা করছি, যদি কোথাও আইনের বাইরে কিছু না ঘটে তাহলে ন্যায়বিচার পাব।

বাদী নিজামকে সরে দাঁড়াতে পরামর্শদানকারী তিন জনের মধ্যে মো. বেলায়েত একজন। তিনি বলেন, ডাক্তার সাহেবের কথা মতো আমি ফোন দিয়েছিলাম যাতে সামাজিক মীমাংসার সুযোগটা নিজাম সাহেবরা নেন। আমি কোনও হুমকি দেই নাই। আমরা সমাজের শান্তি চাই বলেই ডাক্তার সাহেবের কথামতো নিজাম সাহেবকে কল দিয়েছি।

পেটে গজ রেখে দেওয়ায় এক মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া তার ঠিক হয়েছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই ঠিক হয় নাই। আইনকে আইনের মতো চলতে দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমাদের মীমাংসার সুযোগ থাকলে নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিজীবীদের ভাতার জন্য বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা

এদিকে এই মামলাটির পাশে দাঁড়িয়েছে মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র। সংস্থাটির প্রত্যাশা, মামলাটিকে আদালত আমলে নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক দিকনির্দেশনা দেবেন, যা কিনা আগামীতে এ ধরনের মামলাগুলোকে পথ দেখাবে। আসকের আইনজীবী মিজানুর রহমান অবশ্য বাদীকে নানাবিধ প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

এদিকে নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসক গোবিন্দ বণিক বলেন, অস্ত্রোপচারের পর আমরা এরকম কিছু একটা ভেতরে থেকে যাওয়ার কথা প্রায়ই শুনি। এটা চিকিৎসকরা ইচ্ছে করে ঘটান না সেটা যেমন ঠিক, তেমনি তাদের অসতর্কতা ও অবহেলার ফলে ঘটে সেটাও ঠিক। অনেক ডাক্তার তাড়াহুড়ার মধ্যে অস্ত্রোপচার করেন। এগুলো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। চিকিৎসক এবং তার সহযোগিতায় থাকা নার্স সবাই একসঙ্গে বিষয়টি ইগনোর করলেন এটা কী করে হয়!
ডাক্তার সাধারণত অস্ত্রোপচারের খুঁটিনাটিতেই বেশি মনোযোগী থাকেন। সেজন্য সাহায্যকারী সিস্টারের দায়িত্ব থাকে কী কী উপাদান আনা হয়েছে তার হিসাব রাখা। নিয়ম হচ্ছে, কাটা বন্ধ করার আগে উপকরণগুলো মিলিয়ে দেখতে হবে এবং সবকিছু নিশ্চিত হয়ে তারপরই সেলাই দিতে হবে।

ডাক্তার কাইয়ুমের প্রেসক্রিপশন এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর, আ.লীগ নেতার ভাগনে কারাগারে
মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর, আ.লীগ নেতার ভাগনে কারাগারে
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়