X
সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
৩০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিবিদদের শৈশবের ঈদ

এমরান হোসাইন শেখ
০৭ জুলাই ২০১৬, ১০:০৮আপডেট : ০৭ জুলাই ২০১৬, ১৪:১৪

ঈদ স্মৃতি

ঈদ মানেই আনন্দ। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই আনন্দে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রূপ। মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে ঈদের আনন্দের ধরনেও পরিবর্তন আসে। এক দুই বছরে এই ব্যবধান স্পষ্ট করে বোঝা না গেলেও একেবারে শৈশবের ঈদের সঙ্গে পরিণত বয়সের ঈদের তুলনা করলেই পার্থক্যটা স্পষ্ট বোঝা যায়। তখন বেশির ভাগ মানুষ পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, তাদের শৈশবের ঈদের স্মৃতিটাই বেশি মধুর, আনন্দময় ছিল।  শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বের পাশপাশি রাজনীতিবিদের শৈশবের ঈদ কেমন হতো, এই নিয়ে সবার না হোক, অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে। কেমন ছিল রাজনীতিবিদদের শৈশব, কেমন কাটতো ঈদের সময়, আনন্দই বা কেমন হতো। এসম বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত কয়েকজনের শৈশবের ঈদস্মৃতি বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী: জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ঈদ সব সময়েই আনন্দের। ছোট বেলায় সববয়সী ও বন্ধুবান্ধব একত্রিত হয়ে নতুন কাপড় পরে বাড়িবাড়ি যেতাম। সবার বাড়িতে গিয়ে সেমাই খাওয়া হতো। ঈদের সেলামির টাকা দিয়ে আইসক্রিম খাওয়া হতো। এগুলোই করে বেড়াতাম। আগে যৌথপরিবার ছিল। পরিবারে চাচাতো খালাতো ভাইবোন মিলে সমবয়সী বা কাছাকাছি বয়সী অনেকের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ থাকত। যৌথপরিবার ভেঙে এখন একক পরিবার হওয়ায় সেই সমবয়সীদের সেভাবে কাছে পাওয়া যায় না। আর স্কুলের বন্ধুবান্ধবরা তো ঈদের ছুটির  একেকজন বাচ্চারা একেকদিক চলে যায়। আমাদের শৈশবে  প্রতিবেশীদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ ছিল। এখন সেটা অনেকটাই কমে গেছে।

তোফায়েল আহমেদ তোফায়েল আহমেদ:  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ষাটের দশকের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকায় বসবাস ‍শুরু করেছেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের এ নায়কের শৈশব কেটেছে ভোলার গ্রামের বাড়িতে। ওই সময়ের ঈদের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ওই সময়টা  ছিলো মধুর। সোনালি দিন। ঈদের দিনে ‍আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে পুকুরে গোসল করে নতুন জামাকাপড় পরে নামাজ পড়তে যেতাম। নাজাম পড়ার পরে গ্রামের মানুষের বাড়িবাড়ি যেতাম। তারা আমাদের  আদর করে আপ্যায়ন করাতেন। খাওয়ানোর পর আমাদের হাতে একটাকা দু’টাকা করে দিতেন। এই অর্থপ্রাপ্তিটা আমাদের জন্য ছিল খুবই আর্কষণীয়। আমরা ভীষণ খুশি হতাম। ওই সময়টার ঈদ ছিল অনেক  ভালোবাসা আর আনন্দের। এটা আজকের দিনে চিন্তাই করা যায় না। তখন আমার গ্রাম ছিল অন্ধকার। রাস্তাঘাট ছিল না। আজকে সেই গ্রাম খ্যাতিমান গ্রাম। মানুষের দালান কোটা হয়েছে। টাকা পয়সা হয়েছে। রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। বিদ্যুতের বাতি জ্বলছে। তবে ওই সময়ের মতো আন্তরিকতা আর নেই। একে অন্যের প্রতি যে সহমর্মিতা, এটা এখন হারিয়ে গেছে। এটা ভাবলে দুঃখ লাগে, খারাপ লাগে। আগের ঈদের দিনগুলো ছিল সত্যিই মধুর দিন। এখন কি আগের মতো সেই দিন আছে? কেউ কি কারও বাড়ি যায়? আধুনিকতা দিয়েছে অনেক কিছু কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আমাদের হৃদয়টাকে।

রাশেদ খান মেনন

রাশেদ খান মেনন:  বাবার চাকরিসূত্রে শহরের পরিবেশে বড় হওয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঈদের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বলেন, ছোটবেলায় ঈদটা সত্যিই খুব ভালোভাবে কাটতো। তখন আজকের মতো এত ফ্যাশন ছিল না। ঈদের আগে আব্বা বাড়িতে দর্জি নিয়ে আসতেন জামাকাপড় তৈরির জন্য। দর্জি সব ভাইবোনের জামার মাপ নিয়ে সেগুলো তৈরি করে দিত। আমরা অপেক্ষা করতাম করে সেই জামাকাপড় হাতে পার তার জন্য। বাসায় সিমাইয়ের কলে সেমাই বানানো হতো। সেটা ঈদে রান্না হতো। ঈদের দিনে নতুন কাপড় পরে আব্বার সঙ্গে নামাজে যেতাম। খুবই আনন্দের বিষয় ছিল আমাদের জন্য সেই সময়কার ঈদগুলোতে। দিনগুলো ছিল অনেক বেশি আনন্দঘন, অনেক মধুর। তখন কোনও কৃত্রিমতা ছিল না। সবটাই পারিবারিক আমেজে হতো। এখনও ঈদের দিন এলে সেই ছোটবেলার মজার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে।

মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: শৈশবের ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, তাদের সময় অন্য দশজনের ঈদ যেভাবে কেটেছে, তার ঈদও একই রকম কেটেছে। শৈশবে ঈদ সব থেকেই আনন্দময় ছিল। কারণ ওই সময় নিজের ওপর কোনও বাড়তি চাপ থাকে না। প্রত্যেকটা জিনিসই সুন্দর থাকে। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা। ঈদের দিন অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন কাপড় পরে বাবার সঙ্গে ঈদগাহে যাওয়া, সেমাই খাওয়া—এসব অনেক আনন্দের ছিল।

বর্তমানে ঈদ উদযাপনে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের সময়ের তুলনায় বর্তমানে ঈদে বহু ফারাক দেখা যায়। আমাদের সময় ঈদ ছিল একটা পারিবারিক আনন্দ। বন্ধুবান্ধব একসঙ্গে  খাওয়া-দাওয়া, পাড়াবেড়ানো আর মুরব্বিদের সালাম করা ছিল অনেক আনন্দের। বর্তমানে এর কিছুটা রেওয়াজ থাকলেও তা আগের মতো নেই। এখন তো মানুষ চাঁদ দেখার জন্য সন্ধ্যাবেলা আকাশের দিকে না তাকিয়ে চাঁদের খবরের জন্য টেলিভিশন সেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখন আমরা দেখি ঈদে পাড়ায়পাড়ায় মাইক বাজে গান বাজে, কোথাও কোথাও ফুর্তির নামে অতি বাড়াবাড়িও হয়। এটা অনেকটা সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আর এখন আরেকটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে, যারা উচ্চবিত্ত, তারা ঈদ করতে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। আর মধ্যবিত্তরা দেশের কোথাও ঈদ কাটাচ্ছেন। মানুষের জীবনে ব্যস্ততা বেড়ে যওয়ায় অন্য সময় ছুটি না পাওয়ার কারণে হয়তো ঈদের ছুটিটা তারা এভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন। অবশ্য কেউ কেউ আগের মতোই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে  ঈদ করছেন।

হাসানুল হক ইনু হাসানুল হক ইনু: অবশ্য ছোটবেলা আর বড়বেলায় নিজের জীবনে ঈদে খুব একটা পরিবর্তন দেখছেন না তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ঈদ সব সময়ই আনন্দের। আগে ঈদ ভালো কেটেছে, এখনও ভালো কাটে। ঈদ সব সময় একই থাকে। ছোট বেলায় কোনও দায়দায়িত্ব থাকে না বলে বেশি আনন্দময় মনে হতো। এখন যেহেতু বয়স বেড়ে গেছে, অনেক দায়দায়িত্ব রয়েছে, এজন্য আগের মতো আনন্দের মনে হয় ‍না।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আনোয়ার হোসেন মঞ্জু: জাতীয় পার্টি (জেপি) সভাপতি এবং সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ছোটবেলার ঈদ স্মৃতি প্রসঙ্গে বলেন, তখন জীবন সংসার নিয়ে বর্তমানের মতো ভাবতে হতো না। ছিলাম স্বাধীন। যার জন্য আনন্দটা একটু অন্য রকম ছিল। একেবারে ছোটবেলা তখন আমি স্কুলেও যাই ‍না, আম্মা হাতে করে শার্ট সেলাই করতেন। প্যান্টটা অবশ্য দর্জির কাছে সেলাই হতো। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম এই শার্টপ্যান্ট কখন হাতে পাব। বারবার ‍মায়ের কাছে গিয়ে জানতে চাইতাম, সেলাই শেষ করতে কতক্ষণ লাগবে। আমরা থাকতাম পুরনো ঢাকায়। আর ঢাকাইয়ারা সব সময় উৎসব পাগল ‍মানুষ। তারা সব ধরনের উৎসব ঘটা করে পালন করে। তারা জোৎস্নারাত পালন করে, চাঁদরাত পালন করে, ঈদরাত করে। ঈদের দিন রাত ১২টার পরে সিনেমা শুরু হয়। গুলিস্তান শাবিস্তান সিনোমা হল ছিল, সেখানে দল বেঁধে ছবি দেখতে যেতাম।

নিজের খাদ্যাভাসের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, আমি ঈদে খাওয়া ধাওয়ার ওপর এখনও গুরুত্ব দেই না। তখনও দিতাম না। তবে নতুন কাপড়টা পরবো কোন সময় আর নামাজ পড়তে যাব কোন সময়, সেটাই চিন্তা করতাম।

মাহবুবউল আলম হানিফ‍ মাহবুবউল আলম হানিফ‍: বাবার রেলের চাকরিসূত্রে আওয়ামী লীগের যুগ্ম ‍সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের স্কুল জীবনটা কেটেছে পাবনার পাকশির রেলওয়ের বিভাগীয় সদরদফতরে। সেই সময়ে ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ওই সময় সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে ঈদ উৎসবটা পালন করতো। আমাদের ওখানে বিশাল একটি সামাজিক কমিউনিটি ছিল। সেখানে আমাদের স্কুল ফ্রেন্ড, পাড়া মহল্লার বন্ধুবান্ধব ও সিনিয়র-জুনিয়ররা সবাইকে নিয়ে ঈদের পরিকল্পনা করা হতো। ঈদের সময় নামাজ পড়ে দল বেঁধে বাসায় বাসায় যেতাম। তখন অনেক আনন্দ হতো। এখানে আরেকটি বিষয় ছিল, ঈদের সময় নতুন পোশাক, জুতা পরা। তখন কিন্তু মানুষের মধ্যে এত বিলাসিতা ছিল না। প্রত্যেকে ঈদ উপলক্ষে হয়তো এক সেটই ড্রেস পেত। কারও কারও অবশ্য দু’তিনটাও ড্রেস হয়ে যেত। সেগুলো ছিলো আমাদের জন্য খুবই প্রাপ্তির বিষয়। সব মিলিয়ে ওই সময় সমাজের মধ্যে খুবই আন্তরিকতা ছিল। স্যোশাল বন্ডিং ছিল। ওই সময়টা আমার খুবই মনে পড়ে। বলা যেতে পারে মিস করি। এখন আমরা এমন একটা সমাজে চলে আসছি যে, আমাদের পাশে প্রতিবেশী কে আছেন, সেটাও জানি না। আমার ছেলেদের সঙ্গেও তার সমবয়সী প্রতিবেশীর সঙ্গে সেভাবে পরিচয় নেই। বর্তমানের এই দৃশ্য দেখার পরই ছেলেবেলার সময়টা বেশি অনুভব করি। বাবা মা ভাইবোনসহ সবাইকে নিয়ে একটা উৎসব হতো ঈদের সময়।

ঈদের দিনের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ঈদের নামাজের পর আমরা দল বেঁধে গিয়ে কার বাড়িতে কী রান্না হলো, কারা কত প্রকারের মিষ্টান্ন রেঁধেছেন, এটা নিয়ে বাহাস হতো।  

/এমএনএইচ/

আরও পড়ুন:

শোলাকিয়ায় বোমা বিস্ফোরণে ১ পুলিশ নিহত, আহত ১২

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিশেষ ছাড় পাবেন পুলিশ সদস্যরা
হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিশেষ ছাড় পাবেন পুলিশ সদস্যরা
ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছে ইইউ
ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছে ইইউ
রাজধানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে কিশোরের মৃত্যু
রাজধানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে কিশোরের মৃত্যু
বাংলাদেশকে কাছে টানতে যখন ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই তৎপর
বাংলাদেশকে কাছে টানতে যখন ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই তৎপর
সর্বাধিক পঠিত
ফুটপাত থেকে দোকান ছড়িয়েছে প্রধান সড়কে, আসছে নতুন পরিকল্পনা 
ফুটপাত থেকে দোকান ছড়িয়েছে প্রধান সড়কে, আসছে নতুন পরিকল্পনা 
আমরা সুন্দর একটি সম্পর্ক মেন্টেইন করি: জয়া আহসান
বাংলা ট্রিবিউনের দশম বর্ষপূর্তিআমরা সুন্দর একটি সম্পর্ক মেন্টেইন করি: জয়া আহসান
যেভাবে বরণ করা হবে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে
যেভাবে বরণ করা হবে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে
জাতীয় দলে খেলতে গেলে সাপোর্ট লাগে: ইমরুল  
জাতীয় দলে খেলতে গেলে সাপোর্ট লাগে: ইমরুল  
চিনি খাওয়া বন্ধ করলে কী হয়?
চিনি খাওয়া বন্ধ করলে কী হয়?