X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাকে রিশার ঘ্রাণ খোঁজেন মা

জাকিয়া আহমেদ
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৭:৫৫আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:৪১






সুরাইয়া আক্তার রিশার মা তানিয়া হোসেন

‘কোরবানি ঈদে দুই বোনের জন্য কাপড় কেনা হয়েছিল। কেবল বানাতে দেওয়া হয়নি। দেখেন, দেখেন, আমার মেয়ের কত কাপড়’ বলেই পাগলের মতো কাঠের আলমারি থেকে একে একে পোশাকগুলো বের করতে লাগলেন সুরাইয়া আক্তার রিশার মা তানিয়া হোসেন। 
রিশার একেকটা পোশাক নাকের কাছে নেন আর মা তানিয়া হোসেন বলতে থাকেন, ‘ওর গায়ের ঘ্রাণ লেগে আছে। আমার মেয়েটার ঘ্রাণ পাচ্ছি। কিন্তু মেয়েটারে রেখে এসেছি মাটির নিচে’ বলেই চুপ হয়ে গেলেন রিশার মা।

গত ২৪ আগস্ট বেলা পৌনে ১২টায় কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে একটি টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খান ছুরিকাঘাত করে রিশাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।এর চারদিন পর রবিবার (২৮ আগস্ট) সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিশা।

শুক্রবার ঢাকার কাজী আলাউদ্দীন রোডে অবস্থিত রিশাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে এখনও আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের ভিড়। সবাই সান্ত্বনা জানাতে এসেছেন রিশার পরিবারকে। এরই ফাঁকে রিশার মা এ প্রতিবেদককে নিয়ে গেলেন রিশার কক্ষে। কক্ষে ঢুকেই তিনি বলেন, ‘দেখেন, কী সুন্দর করে টেবিলটা গোছানো। ও নিজেও খুব গোছানো মেয়ে ছিল। ছোট দুই ভাইবোনকে খুব আদর করতো। কিন্তু ওরা যদি কিছু অগোছালো করে রাখতো তাহলে বকা দিতো’ বলে টেবিলে রাখা মেয়ের বইগুলোতে হাত বোলান তিনি। এরপর এগিয়ে গিয়ে কাঠের আলমারি খুলে একে একে বের করেন রিশার সব পোশাক, জুতা, নেইলপলিশ, পারফিউম।

সুরাইয়া আক্তার রিশার মা তানিয়া হোসেন তানিয়া হোসেন বলেন, কালো আর লাল ছিল ওর প্রিয় রঙ। সব পোশাক এই কালো আর লাল রঙের। আর আমার মেয়েটা তো দেখতে খুব সুন্দর ছিল। ওকে ড্রেসগুলাতে মানাতোও বেশ!

মেয়ের পোশাক নিয়ে যখন তার স্মৃতিচারণ করছেন মা তখন মেয়ের পড়ার টেবিলে এসে বসেন রিশার বাবা মো. রমজান হোসেন। টেনে নেন মেয়ের ছবি আঁকার খাতা। তার চোখের কোণে অশ্রু তখন ছলছল করছে। রিশার খাতায় আঙুল ছুঁইয়ে তিনি বলেন, রিশার হত্যাকারী ওবায়দুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনহ সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমি চাই, ওবায়দুলের বিচার প্রক্রিয়া যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হয়। যেন আর কোনও ইস্যু এসে রিশা হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা না দিতে পারে।’

রমজান হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে হারিয়েছি; কিন্তু ওর হত্যাকারীর ফাঁসি দেখতে পারলেই মনে কেবল একটু শান্তি পাবো। ওবায়দুলের ফাঁসি দেখে যেন আরও শত ওবায়দুলরা শিক্ষা নিতে পারে! রিশার মায়ের মতো আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়!’

সরকারের প্রতি নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানিয়ে রমজান হোসেন বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি স্কুলের নিরাপত্তা নিয়েও আমি আর্জি জানাতে চাই সরকারের কাছে। স্কুল-কলেজগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। সিসি ক্যামেরা বসানো হোক, সে দাবি জানাই আমি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। কিন্তু আর কোনও বাবা-মা যেন তাদের কলিজার টুকরোকে না হারায়! রিশার হত্যাকাণ্ড থেকে যদি আমরা শিক্ষা না নিই, তাহলে আরও এমন ঘটনা ঘটবে। ওবায়দুলরা ছড়িয়ে আছে সমাজে! তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে। তাহলেই রিশারা বেঁচে থাকবে।’ একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘নিজের ভুল থেকে আরও একটি বিষয় বলতে চাই, বাবা-মায়েরা যেন একটু কেয়ারফুল (সতর্ক) থাকেন সন্তানের বিষয়ে। বাবা-মা যেন সন্তানের ভালো-মন্দের বিষয়টি শেয়ার করেন সন্তানের সঙ্গে।’

সুরাইয়া আক্তার রিশার বাবা মো. রমজান হোসেন রিশার সঙ্গে কি তাহলে আপনাদের কোনও দূরত্ব ছিল প্রশ্ন করলে রমজান হোসেন বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। ওর এমন কোনও কথা নেই, যেটা ওর মা জানতো না। ঘটনার আগের দিন ওবায়দুল ওর স্কুলে গিয়েছিল সে কথা বাসায় এসে ওর (রিশা) মাকে বলেছিল। কিন্তু আমি অসুস্থ বলে আমাকে জানায়নি। এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল! আমি যদি সেদিন জানতে পারতাম, তাহলে ওর সঙ্গে পরদিন স্কুলে যেতাম। আমি সঙ্গে থাকলে মেয়েটা আমার কোল খালি করে দিতে পারতো না। ওকে আমাদের হারাতে হতো না। আমাকে বাবা বলেই ডাকতো। আমার কানে কেবল ওর বাবা ডাকটাই শুনি। পুরো বাড়ি জুড়ে ওর কণ্ঠ, ওর ছুটে চলা।’

নামাজের সময় হওয়াতে রমজান হোসেন বলেন, ‘জুম্মার নামাজের সময় হয়েছে। খোদার কাছে আর্জি জানিয়ে আসি, তিনি যেন আমার মেয়েটাকে বেহেশত নসিব করেন!’

/জেএ/এবি/

আরও পড়ুন
রিশার ঘাতক ওবায়দুলকে ঢাকায় আনা হয়েছে

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন