X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন আপদ পশুর রক্ত

ওমর ফারুক
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২১:২৫আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২১:২৫





ঈদুল আজহায় রাজধানীর শান্তিনগরের চিত্র ঢাকাবাসী এতদিন পশু কোরবানি দিয়ে বর্জ্য রাস্তায় ফেলে দিতেন। জবাইয়ের স্থানে রক্ত পড়ে থাকতো ছোপ ছোপ রক্ত। দুপুরের পর সিটি করপোরেশন এই বর্জ্য অপসারণ শুরু করলেও রক্ত নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না কারো। রোদের তাপে না শুকানো পর্যন্ত এ রক্ত দুর্গন্ধ ছড়াতো।

কিন্তু এবার ঈদুল ফিতরের দিন পশুর রক্ত মিশে যায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় আটকে পড়া পানি সড়কেই অবস্থান করে দীর্ঘ সময়। তখন পানি হয়ে যায় রক্তাক্ত। এতদিন বিক্ষিপ্তভাবে ছোপ ছোপ রক্ত দুর্গন্ধ ছড়ালেও এবার পানিতে মিশে দূষিত পরিবেশের বিস্তার ঘটিয়েছে। এই রক্ত একন নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে রাজধানীতে।

প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরো ঢাকা শহরে এবার কোরবানির আগে-পরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির পানি রক্তলাল হয়ে গেছে বলে আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পেয়েছি। এই রক্ত অল্প সময়ের মধ্যে পচে যাবে। পচে গেলেই সেখান থেকে জীবাণু জন্ম নেবে। আর এই জীবাণু পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটাবে রাজধানীতে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, টাইফয়েড, জন্ডিস, উদারাময় ইত্যাদি।’

পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় রক্ত দিয়ে আবদ্ধ পানির দূষিত হওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সিটি করপোরেশনকে। সে কারণে আগামীতে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উপপ্রধান বর্জ্যব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও লোকজন পশু কোরবানি দিয়ে রক্ত ফেলে রেখেছিলেন। কিন্তু সমস্যা বাধালো বৃষ্টি।’ তিনি বলেন, ‘পশুর রক্তে আবদ্ধ পানি লাল হয়ে দূষিত পরিবেশ সৃষ্টি করছে, এমন অভিজ্ঞতা আমাদের এটাই প্রথম। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতে বর্জ্যব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে এ বিষয়টার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে নগরীর অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে কোরবানির বর্জ্য। বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আগাম ব্যবস্থা নিতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টিভেজা বর্জ্য অপসারণ করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।’

দেখা গেছে, ঈদুল আজহার সকাল থেকেই নগরীতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এতে বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। এমনকী সিটি করপোরেশন যেসব স্থান কোরবানির জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেগুলোও পানিতে তলিয়ে যায়। ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানি নিয়ে বিপাকে পড়েন মুসল্লিরা। এক পর্যায়ে কোনও উপায় না পেয়ে যে যেখানে পেরেছেন, সেখানেই পশু কোরবানি দিয়েছেন।

রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্ধারিত অধিকাংশ স্থানে এবার পশু কোরবানি হয়নি। লোকজন কোরবানি শেষে রাস্তার ওপর বর্জ্য ফেলে চলে গেছেন। বৃষ্টির পানিতে মিশে রাস্তায় ও ড্রেনে ছড়িয়ে পড়েছে পশুবর্জ্য। কেউ কেউ অবশ্য নিজ উদ্যোগে পশুবর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেন।
রাজধানীর অলিতেগলিতে বৃষ্টির পানিতে কোরবানির পশুর রক্ত মিলেমিশে একাকার জানা গেছে, ঈদের আগে জোরেসোরে প্রচারণা চালানো হলেও অধিকাংশ ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিটি করপোরেশনের পলিব্যাগ পাননি। পলিব্যাগ না পাওয়ার এ অভিযোগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের বেশি। মঙ্গলবার দুপুরে যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘কোরবানির বর্জ্য রাখার জন্য আমরা সিটি করপোরেশনের পলিব্যাগ পাইনি। এ কারণে নিজ উদ্যোগে রাস্তার পাশে বর্জ্য স্তূপ করে রাখি। কিন্তু, বৃষ্টির কারণে ওই বর্জ্য গলে ছড়িয়ে গেছে।’

গেণ্ডারিয়ার বাসিন্দা আবু বকর বলেন, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস থেকে আমাকে একটা পলিব্যাগ দেওয়া হয়েছে। তবে আমার পরে যারা গেছেন, তারা নাকি পাননি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গরুর মালিককে একটি পলিব্যাগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে এই বৃষ্টিতে বর্জ্য পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না।’

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মঙ্গলবার দুপুর ২টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে পশুর হাটের বর্জ্য অপসারণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি পাড়া-মহল্লার বর্জ্যও অপসারণ কার্যক্রম চলতে থাকে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্যব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নগরবাসীর কাছ থেকে এবার আমরা খুব ভাল রেসপন্স (সাড়া) পেয়েছি। অনেকেই পলিব্যাগে পশুবর্জ্য রাখায় আমাদের কার্যক্রমে সুবিধা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার বেশি সংখ্যক গরু কোরবানি হয়েছে। এরপরও আমরা দ্রুত অপসারণ করতে পারছি।’

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উপপ্রধান বর্জ্যব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে পশুর বর্জ্য ছড়িয়ে গেছে। এরপরও আমরা এগুলো দ্রুত অপসারণ করছি।’ তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে দুই লাখ পলিব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। কোনও কারণে হয়ত দু/একজন পাননি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের জন্য পলিব্যাগ সরবরাহ করেছি।’
/ওএফ/এবি/

আরও পড়ুন

এই ‘রক্তিম’ জলাবদ্ধতার প্রভাব স্বাস্থ্যেও পড়বে

যাদের নেই কোনও ঈদ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও মার্কিন থিঙ্কট্যাংকের প্রশংসা
শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও মার্কিন থিঙ্কট্যাংকের প্রশংসা
শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ছে: আইনমন্ত্রী
শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ছে: আইনমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গাকে টপকে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়লো যশোর
চুয়াডাঙ্গাকে টপকে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়লো যশোর
দুই ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন আবাহনী 
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগদুই ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন আবাহনী 
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো