X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

র‌্যাবের অভিযানে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় মিলেছে

নুরুজ্জামান লাবু
১১ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:১৯আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০১৬, ২৩:৪১

গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে নিহত দুই জঙ্গি

রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে র‌্যাবের পৃথক অভিযানে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় মিলেছে। এদের একজনের নাম আহসান হাবীব, অপরজনের নাম আমিনুল এহসান ওরফে আমিমুল এহসান অপু (২১)। আহসান হাবীব টাঙ্গাইলের কাগামারায় অভিযানে নিহত হয়েছে আর আমিনুল নিহত হয়েছে গাজীপুরের হাড়িনালে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাব সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের কাগমারায় নিহত দুই জঙ্গির একজন আহসান হাবীবের বাবার নাম আলতাফ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার রানীনগর ইউনিয়নে। এছাড়া গাজীপুরের হাড়িনালে নিহত দুই জঙ্গির একজন আমিনুল এহসানের  বাবার নাম গাফফার মণ্ডল। তার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টাঙ্গাইলে র‌্যাবের অভিযানে নিহত জঙ্গি আহসান হাবিব ওরফে শুভ নওগাঁর রানীনগর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে।  

জানা গেছে, ২০০৯ সালে নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন শুভ। সেখানে অধ্যায়নরত অবস্থায় থাকতেন নগরীর জিরোপয়েন্ট এলাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের পঞ্চম তলায় একটি ম্যাসে। ২০১৪ সালে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের সময় পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন শুভ ও একই বিভাগের অধ্যয়নরত শরিফুল ইসলাম (২৭)।

এরপর তাদের বিরুদ্ধে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। মামলায় তারা কয়েক মাস পর হাজত ভোগ করে জামিনে বের হয়ে আসেন। এরপর শুভ নওগাঁতে কয়েকদিন থাকার পর আবার রাজশাহীতে যান।

শুভর বাবা আলতাফ হোসেন জানান, পরবর্তীতে শুভ আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় এবং কথাবার্তায় তাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। এক পর্যায় শুভ তাদের সাথে সেল ফোন ও ফেসবুকেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।   এরপর থেকে শুভ নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় গত বছর রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ির বোয়ালিয়া ক্যাম্প সাধারণ ডায়রি দায়ের করেন তিনি। 

শুভর বাবা আরও জানায়, তিনি তার ছেলের লাশ নেবেন না।

  

আহসান হাবীব

 

এদিকে জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছে, নিহত  জঙ্গি  আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিমুল এহসান অপু  জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুনগ্রামের আব্দুল গাফ্ফারের ছোট ছেলে। সে গত বছরের ৪ অক্টোবর বগুড়ার পলিটেকনিক্যালে পড়তে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। নিঁখোজের পরে ৬ অক্টোবর তার বাবা কালাই থানায় একটি জিডি করেন।

তার বড় ভাই আতাউর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে ছোট ভাই আমিমুলের নিহত হওয়ার খবর জানায়।

তিনি আরও জানান, ছোট ভাই নিখোঁজের পর থেকে অনেক খোঁজাখুজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। ঢাকার গুলশানে হোটেল হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর পুলিশ তার বাবাকে ডেকে আমিমুলের সম্পর্কে নানা জিজ্ঞাসাবাদও করেন। এরপর থেকে তার বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। দুশ্চিন্তার কারণে মাস দুয়েক আগে তার বাবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী। মা তাহেরা বেগম একজন গৃহিনী।

তাহেরা বেগম বলেন, আমিমুলের চলাফেরায় পরিবারের সন্দেহ ছিল। তবে এভাবে যে সে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে তা কখনও ভাবিনি।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের ফোনে খবর পেয়ে তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুর ও টাঙ্গাইল থানার ওসির সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। পরে তিনি আমিমুলের বড় ভাই আতাউর রহমানকে ফোনে খবরটি জানিয়েছেন।

গত ৮ অক্টোবর সকালে গাজীপুরের জয়দেবপুরের হাড়িনালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)। এসময় র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই জঙ্গি নিহত হয়। প্রায় একই সময়ে টাঙ্গাইলের কাগমারায় র‌্যাব অপর একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালালে সেখানেও গোলাগুলিতে দুই জঙ্গি নিহত হয়। এছাড়া একই দিন সন্ধ্যায় আশুলিয়ায় অপর একটি আস্তানায় অভিযান চালালে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাঁচ তলা থেকে পড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরেক জঙ্গি। নব্য জেএমবির অর্থের যোগানদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ওই বাসা থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাকে আব্দুর রহমান ওরফে নাজমুল হক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের অভিযানের পর জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা পরিচয়পত্র দেখে প্রাথমিকভাবে দুই জঙ্গিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের লতিফুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান ও পাশের ইউসুফ গ্রামের জোনায়েদ হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন বলে শনাক্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু পরে জানা গেছে এ পরিচয়পত্রটি ছিলো ভুয়া। এছাড়া পরিচয়পত্র দেখে গাজীপুরের হাড়িনালে নিহত দুই জঙ্গিকে নরসিংদীর রাশেদুল মিয়া ও তৌহিদুল ইসলাম বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু তাদের পরিচয়পত্রও ছিলো ভুয়া। আমিনুল এহসান ওরফে আমিমুল এহসান অপু

র‌্যাব সূত্র জানায়, আশুলিয়ার আস্তানা থেকে আব্দুর রহমান ওরফে নাজমুল হোসেনের একটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছিলো। ওই পাসপোর্টে তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কুশখালী উল্লেখ করা রয়েছে। বাবার নাম আব্দুল্লাহ ও মায়ের নাম রাজিয়া খাতুন উল্লেখ ছিলো। কিন্তু র‌্যাব কর্মকর্তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আব্দুল্লাহ-রাজিয়া দম্পতির আব্দুর রহমান ওরফে নাজমুল হোসেন নামে কোনও সন্তান নেই।

র‌্যাবের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা তাদের মূল পরিচয় আড়াল করে ভুয়া আইডি বানিয়ে আত্মগোপন করে থাকে। এজন্য নির্বাচন কমিশনের সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে নিহতদের আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে আহসান হাবীব ও আমিনুল এহসানের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।

 /এনএল/টিএন/

আরও পড়ুন: গাজীপুরে নিহত সাত জঙ্গির আরেকজন সাইফুল

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ধর্ষণ মামলা: প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন পেলেন মুশতাক-ফাওজিয়া
ধর্ষণ মামলা: প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন পেলেন মুশতাক-ফাওজিয়া
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড