X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

‘আরসা কী করে জানি না’ (ভিডিও)

আমানুর রহমান রনি, টেকনাফ থেকে
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৬আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৭

রোহিঙ্গা মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আলকিনের নাম শুনলেও এই দুই ‘জঙ্গি’ সংগঠনের সদস্যদের বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই দেখেনি। তারা শুধু সংগঠন দু’টির নাম শুনেছে। রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি এই দুই সংগঠনকেও দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

রাখাইনের বসিডং এলাকায় এক বাসিন্দা আলী হোসেন (৬০) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিলিটারিরা আমাদের  ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়েছে। মানুষকে গুলি ও জবাই করে মেরেছে। তাই আমরা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছি। আমার ছয় ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে পাঁচ দিন ধরে শাহপরীর দ্বীপে ছিলাম। সেখান থেকে আজ (রবিবার) টেকনাফে এসেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ মারা যায়নি। তবে পাশের গ্রামের অনেক লোকজন মারা গেছে।’

আরসা বা আলকিনের কাউকে চেনেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আলী হোসেন বলেন, ‘নাম শুনেছি। তারা কী করে, সে বিষয়ে কিছুই জানি না।’ তাদের কখনও দেখেছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমাদের এলাকায় তাদের কখনও দেখিনি।’  

 মংডুর পাঞ্চা এলাকার বাসিন্দা আবু। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী ও মগ ছাড়া আমি আর কিছুই দেখিনি। সেনাবাহিনী গ্রামে আগুন দেয়, গুলি করে। আমার ভাই হামিদের হাতে গুলি লেগেছে।’ তিনি তার স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। আরসা ও আলকিনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি চিনি না। আমি দেখিনি কখনও। তবে নাম শুনেছি।’

এই দুই সংগঠন গ্রামে গিয়ে ক্ষতি করেছে অভিযোগ করে আবু বলেন, ‘তারা মিয়ানমারে যাওয়ায় আমাদের ক্ষতি হয়েছে।’

গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর প্রথম আরসাকে দায়ী করে মিয়ানমার সরকার। এ বছরের ২৪ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে যে হামলা হয়, সেই হামলার দায় স্বীকার করে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এমনকি সরকারকে হুমকিও দেয় তারা। ওইদিন থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে রাখাইন রাজ্যে। এতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুহারা হয়ে পড়ে। তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তবে আরসার নাম জানে না অধিকাংশ রোহিঙ্গা। সংগঠনটির সদস্যরা কী করে, তাও জানে না। মিয়ানমার সরকার ইতোমধ্যে আরসাকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা দিয়েছে। সৌদি আরবে প্রবাসী রোহিঙ্গারা এই সংগঠন সৃষ্টি করেছে বলে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’ তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে। এই সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন আতাউল্লাহ আবু আমর জুনুনি নামে এক ব্যক্তি। রোহিঙ্গা হলেও তিনি পাকিস্তানেই বেড়ে উঠেছেন। এরপর পরিবারের সঙ্গে সৌদিতে ছিলেন।

আরসার তৎপরতা বিষয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের তেমন সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এই সংগঠনের বিষয়ে কিছুই জানে না। কেউ কেউ যুদ্ধের কথা বললেও, কার সঙ্গে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ, তা জানে না তারা। ফাতেমা খাতুন (২৫) নামে এক রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে আরসার বিষয়ে কথা হয়। তার গ্রামের নাম পাতন ঝা, মংডু। এই নারী বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের ঘরে আগুন দিয়েছে। গুলি করেছে। তারা আমাদের ঘরে এসে আলকিন খোঁজে। কিন্তু আমরা কখনও আলকিন দেখিনি। তারা কোথায় থাকে, তাও জানি না। আলকিনের জন্য আমাদের ঘরের পুরুষদের সেনাবাহিনী মারধর করতো, জবাই করে মারতো।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে আলেকিন নেই। মিলিটারি ছাড়া আর কিছুই দেখিনি।’

মাহমুদুর রহমান নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের বাঙালি বলে মিলিটারি গুলি করে ঘরে আগুন দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আলকিন-ফালকিন আমরা কিছু দেখিনি। আলকিনের নাম করে গরু চুরি করে নিয়ে যায়। তবে তারা আলকিন কিনা, জানি না।’

নূর কাশেম নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের ফেলে আসা গরু, মহিষ ও ছাগল এখন আলকিন বিক্রি করে। কোনও রোহিঙ্গা ওপার থেকে গরু নিয়ে আসতে পারে না। তারা গরু বাংলাদেশে এনে বিক্রি করছে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের জন্যই খারাপ অবস্থা হয়েছে।’ তার পাশেই বসা ছিল তার ছেলে সিদ্দিক। ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে মেয়ের লেখা-পড়াই বন্ধ হয়ে গেল। এখন কী করব?’ আরসা ও আলকিনের কোনও কার্যক্রম নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুনছি তারা লাঠি নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করবে। তাদের কিছু নেই।’

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ ৯ হাজার

 

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধের চিন্তা করছে কাতার
দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধের চিন্তা করছে কাতার
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে