X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার মৃত্যুর সংবাদ পত্রিকা পড়ে জেনেছি: খায়রুজ্জামান লিটন

দুলাল আব্দুল্লাহ, রাজশাহী
০৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:২৭আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:৩৮

খায়রুজ্জামান লিটন

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের চার নেতা- তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, অর্থমন্ত্রী মো. মনসুর আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা হয়।

এ দিনটি উপলক্ষে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন এএইচএম কামরুজ্জামানের ছেলে ও রাজশাহীর খ্যাতিমান রাজনীতিক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

তিনি বলেন, ‘এএইচএম কামরুজ্জামান আমার বাবা। বাংলাদেশের ইতিহাসের চূড়ান্ত সংকটকালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুসারে দেশের নিপীড়িত মানুষকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি তাদেরই একজন।’

বাল্যকালের স্মৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাবা আমাকে রাজশাহীর পিএন হাই স্কুলে(স্কুলটিতে সেসময় ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে লেখাপড়া করতো)প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। আমি স্কুলে থাকতে চাইলাম না এবং জানালা ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছিলাম। তখন আমাকে ক্লাসের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাগী কণ্ঠে শিক্ষককে বলেছিলেন বাবা।’

১৯৭৫ সালের জুন-জুলাই মাসে স্কুলে ছুটি ছিল (তখন কামরুজ্জামানের সন্তানরা কলকাতায় পড়ালেখা করছিলেন)। ছুটিতে কলকাতা থেকে সন্তানেরা বাড়িতে এলে সবাইকে ইলিশ খাইয়েছিলেন বাবা কামরুজ্জামান, স্মৃতি হাতড়ে এমনটাই বললেন তার ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন। সন্তানদের সঙ্গে সেটাই কামরুজ্জামানের শেষ দেখা ছিল বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘সেটাই ছিল বাবার সঙ্গে আমাদের শেষ দেখা।’

খায়রুজ্জামান লিটন

কামরুজ্জামানের শেষ দিনগুলোর সম্পর্কে লিটন বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ বড় ধরনের সংকটে পড়ে যায়। নতুন জন্ম নেওয়া একটি জাতিরাষ্ট্রকে নেতৃত্বহীন করে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি ভাবধারার সমর্থকরা আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা করতে শুরু করে। সেসময় আমার বাবা ধানমন্ডির একটি বাড়িতে আত্মগোপন করেন। কিন্তু লোকজনের সঙ্গে কথা না বলে এবং তাদের সমস্যার খোঁজ না নিয়ে তিনি থাকতে পারতেন না। এ কারণে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি সহজেই খুঁজে বের করে এবং অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে তাকেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়। পরে খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে একদল কুচক্রী এই দেশপ্রেমিক নেতাদের হত্যা করে।’

সেই কালো দিনটির স্মৃতিচারণার সময় লিটন আরও জানান, তিনি এবং তার ভাইয়েরা সেসময় কলকাতায় অধ্যয়ন করছিলেন। পিতার মৃত্যুর খবরটি তারা জেনেছিলেন একটি ম্যাগাজিনের খবর পড়ে।

সেসময় সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা কাঁদতে শুরু করে। কলকাতায় তখন আমাদের আর কোনও অভিভাবক ছিল না। আমরা বাড়ি ফিরতে চাইলাম, কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের বাড়ি ফিরতে দেয়নি। পরে দাফন করার জন্য আমার বাবার দেহ ঢাকা থেকে রাজশাহী নেওয়া হয়। আমরা শেষবারের মতো তার মুখটিও দেখতে পারিনি।’ 

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের জন্ম ১৯৫৯ সালের ১৪ আগস্ট, রাজশাহী শহরের নিকটবর্তী কাদিরগঞ্জ এলাকায়। তিনি এএইচএম কামরুজ্জামান হেনা ও জাহানারা জামান দম্পত্তির চতুর্থ সন্তান। রাজশাহীতে বাল্যকাল কাটানোর পর হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কাটিয়েছেন ভারতের কলকাতায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন।

১৯৮১ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন লিটন। সেসময় রাজশাহী নগরের তিন নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হন তিনি।

১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে তিনি রাজশাহী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।

সৌজন্য: ঢাকা ট্রিবিউন

আরও পড়ুন: 
বাবাকে যে সেলে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে ৯ মাস ছিলাম: নাসিম

/এএইচ/ এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট