চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্লাস্টিকের নানা ধরনের বোতল, পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া যানবাহনের লোহালক্কড়, ভেঙে পড়া দেয়াল আর বিভিন্ন ধরনের আবর্জনার স্তূপ। আর এই আবর্জনার মধ্যেই লাশ। বাতাসে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল, লোহা, ইটপাথর আর লাশ পোড়ার গন্ধ। অগ্নিশিখার দাউ দাউ শব্দ ছাপিয়ে স্বজন ও সহায়-সম্বলহীন হারা মানুষের আহাজারির আওয়াজ। সব মিলিয়ে এরকম ভীতিকর পরিবেশ এখন পুরান ঢাকার চকবাজারে ওয়াটার্স রোডে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের আশপাশের এলাকায়।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের সামনে আগুনের সূত্রপাত্র। স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তায় তখন ট্রাফিক জ্যাম। সারি সারি যানবাহনের মাঝখানে দাঁড়ানো একটি পিকআপ ভ্যানের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয় হঠাৎ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে দাঁড়ানো কয়েকটি রিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে।
আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি বহুতল ভবনেও। এরমধ্যে একটি ভবনে কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক তৈরির উপকরণ থাকায় আগুন আরও বেশি শক্তিতে ছড়ায়।
প্রথমে যে ভবনটিতে আগুন লাগে সেটি সাততলা। ওয়াহেদ ম্যানশন নামের এই ভবনটির নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক তৈরির উপকরণের দোকান ছিল।
ভবনটির পাশের ওয়াহিদ মঞ্জিল, আমানিয়া হোটেল, রাজ হোটেল এবং উল্টো পাশের চারটি বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস খবর পেয়ে ছুটে এলেও সরু গলির কারণে কাজ করতে ঝামেলা পোহাতে হয়। ৩৭টি ইউনিট সাড়ে চারঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ১১ ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এ ঘটনায় দগ্ধসহ আহত কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে লাশের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ।
আগুন পুরোপুরি নেভাতে বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশিস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে ভবনে প্রথম আগুন লেগেছে, সেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনও সময় ধসে পড়তে পারে।’