X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

হিটলারের মতো রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন মিয়ানমারের, গণহত্যা বন্ধে আদেশের আবেদন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:১১আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:১২

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ছবি: ইন্টারনেট থেকে) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদিদের ওপর হিটলার যে ধরনের নির্যাতন করেছিল, মিয়ানমার নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর একই ধরনের গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিহিত করেছে গাম্বিয়ার আইনি দল। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) শুনানির শুরুর দিনে গাম্বিয়ার আইনি দল এ অভিযোগ তোলে। দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণসহ ভয়াবহ নিপীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১১ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করে গাম্বিয়া।

এদিন শুনানির শুরুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উপস্থাপনের পর গাম্বিয়ার আইনজীবীরা মিয়ানমারে এখনও থাকা ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্টেট কাউন্সিলরের সমালোচনা করে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এসব রোহিঙ্গাকে রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত যদি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ না দেন, তবে এটি প্রমাণিত হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেকোনও অপরাধকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে।

এ মামলায় অন্য যে বিষয়গুলোর জন্য গাম্বিয়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়েছে সেগুলো হচ্ছে গণহত্যা বন্ধের জন্য মিয়ানমার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে; সামরিক, আধা সামরিক ও বেসামরিক অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা যাতে কোনও ধরনের গণহত্যা সংঘটন না করে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা; মিয়ানমার যাতে সংঘটিত গণহত্যার কোনও প্রমাণ নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা এবং বর্তমান পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল ও খারাপ হতে পারে, এমন ধরনের কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা।

জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, রোহিঙ্গা শিশু ও নারীরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লক্ষ্য ছিল। এ কারণে দেশটির সেনাবাহিনীকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা চালানোর সময় রোহিঙ্গা শিশুদের আগুনে পুড়িয়ে এবং আছাড় মেরে হত্যা করেছে, যা সুস্পষ্টভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাদের দ্বারা রোহিঙ্গা নারীরা নির্বিচারে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণেরও শিকার হয়েছে। পুরুষদের নানা ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী এসব অপরাধেও দেশটির সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান তারা।

এদিন শুনানির শুরুতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবেদ্যু তার বক্তব্য বলেন, রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শত শত গ্রামে গণহত্যা চালানো হয়েছে এবং তাদের রক্ষায় মানব জাতি ব্যর্থ হয়েছে। তবে এখনও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকারের হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে দুই বছর ধরে তদন্ত করে এক হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্তের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং ফটো ও ভিডিও পর্যালোচনা করেছেন।

মিয়ানমার ওই মিশনকে সহযোগিতা না করলেও তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করেছে।

দলের অন্য এক সদস্য এন্ড্র লয়েনস্টেইন বলেন, মিয়ানমার বর্ণবৈষম্যে বিশ্বাস করে এবং তাদের এ ধরনের কাজের হাজার হাজার প্রমাণ আছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩৯২টি গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে।

একটি গ্রামের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, মংডুর একটি গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা প্রতিটি মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছে, শুধু ওই গ্রামেরই ৭৫০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অন্য আরেকটি গ্রামে ঢুকে ১০০ জনের মতো হত্যা করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৩০ জন ছিল ১৮ বছরের নিচে।

তিনি বলেন, চক্ত গ্রামে ৩৫৮ জনকে হত্যা করা হয়। এরমধ্যে ১২৭ জন শিশু। মিয়ানমার সরকার এর কোনও কিছুই স্বীকার করে না এবং প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীকে প্রশংসা করে থাকে।

দলের আরেক সদস্য আরসালান সুলেমান বলেন, গাম্বিয়া যে অভিযোগ করেছে সেটি পরিষ্কার এবং এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার আছে আদালতের।

তিনি বলেন, গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়ই জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এবং গণহত্যা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখন আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বাদীপক্ষের আরেক সদস্য পায়াম আকাভান তার বক্তব্যে আদালতকে বলেন, রোহিঙ্গারা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলোকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘৃণা বক্তব্য ছড়ানো হয়।

মিয়ানমারের যে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তার রিপোর্টে বলেছে, এর পেছনে সাতটি কারণ আছে। আদালতে সেসব কারণ তুলে ধরেন তিনি।

/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া