X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২
১৮ জানুয়ারি ১৯৭২

সামরিক আদেশে দণ্ডিত সবাই খালাস, বঙ্গবন্ধুর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন

উদিসা ইসলাম
১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০৭:৪০আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০৭:৫৮

সামরিক আদেশে দণ্ডিত সবাই খালাস, বঙ্গবন্ধুর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন

 

১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর এক আদেশবলে সামরিক আদেশে দণ্ডিত ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ক্যান্টনমেন্টে বঙ্গবন্ধুকে এক সপ্তাহ আটক রেখেছিল।এই ১৯৭২ সালের এই দিনে সেই ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শনে যান তিনি।
কয়েদিদের ক্ষমা প্রদর্শন
এই দিনে এক আদেশে বলা হয়, সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত ও বিশেষ সামরিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হবে। ১৯৭১ সালে বিভিন্ন কারাগার থেকে যেসব কয়েদি বেরিয়ে পড়েছিলেন তারাও এই ক্ষমার আওতাভুক্ত হবেন।
সামরিক আদেশে দণ্ডিত সবাই খালাস, বঙ্গবন্ধুর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরনের কয়েদিদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন। ক্ষমার আদেশ প্রদান করে বঙ্গবন্ধু আশা প্রকাশ করেন মুক্তিপ্রাপ্তরা একটি স্বাধীন দেশের দায়িত্বশীল নাগরিকের মতো আচরণ করবে এবং জাতি গঠনে নিজেদের নিয়োজিত করবে।
ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন
বঙ্গবন্ধু এই দিনে ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন করেন। সেখানে মিত্রবাহিনীর হাতে যুদ্ধবন্দি সৈনিক ও কর্মকর্তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। ২৫ মার্চ রাতে আটক করে পাকিস্তানে নেওয়ার আগে এই ক্যান্টনমেন্টে আটক ছিলেন তিনি।বাসসের সংবাদে বলা হয়,ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৭৫ মিনিট কথা বলেন বঙ্গবন্ধু। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দফতরে তাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তাদের কুশল জানতে চাওয়া হলে কর্মকর্তারা ভাল আছেন জানান। এরপর আলাদা করে সবাইকে একে একে ঘরে নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে কথা বলেন।
সামরিক আদেশে দণ্ডিত সবাই খালাস, বঙ্গবন্ধুর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন তরুণদের প্রতি বঙ্গবন্ধু
বরাবরই তরুণ নেতৃত্বকে নিযে দেশ গড়ার কথা বলতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, ছাত্রলীগ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের প্রতিনিধি দল এই দিনে সাক্ষাতে এলে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি আমার যুবসম্প্রদায়ের জন্য গর্বিত। তোরাই এই বাংলাকে আমার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে পারিস। তাদের সঙ্গে সাক্ষাতকালে বঙ্গবন্ধু অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তোমরা গ্রামে-গ্রামে যাও। ভেঙে যাওয়া পুল রাস্তাঘাট পুননির্মাণে কাজ করো। কেননা দেশ স্বাধীনতা উত্তরকালে তোমাদের কাছে এই আশা করে।
সামরিক আদেশে দণ্ডিত সবাই খালাস, বঙ্গবন্ধুর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল ইয়াহিয়া
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ আটক করার সময় বঙ্গবন্ধুর গায়ে হাত তুলেছিল সৈন্যরা এই তথ্য দেওয়ার পরের দিনই বঙ্গবন্ধু আরও ভয়াবহ তথ্য হাজির করেন। তিনি তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই সময়ের ঘটনাগুলো একে একে জানানো শুরু করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের আলোচনা ২৫ মার্চ রাতে ভেস্তে যাওয়ার পরে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে জানান বঙ্গবন্ধু। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতকার প্রদানকালে তিনি বলেন, ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী টেলিফোনে তাকে একথা জানান। তবে বঙ্গবন্ধু তার সেই সহকর্মীর নাম প্রকাশ করেননি। কী ছিল ষড়যন্ত্রে সেই প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু জানান, সেই রাতে বাসা থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে আমাকে হত্যা করা আর সেই সঙ্গে এটা প্রচারের সিদ্ধান্ত হয় যে, বঙ্গবন্ধুকে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিককে বলেন, এরপর আমার সামনে দুটো পথ খোলা ছিল, হয় রাস্তায় বেরিয়ে মৃত্যু মোকাবিলা করা অথবা বাড়িতে থেকে মৃত্যুবরণ করা। এ অবস্থায় আমি শেষেরটার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। কেননা এতে করে পাকিস্তান বাহিনীর মুখোশ উন্মোচিত হতো।
সামরিক আদেশে দণ্ডিত সবাই খালাস, বঙ্গবন্ধুর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে
শাসনতন্ত্র প্রণয়ন শিগগির শেষ হবে বলে জানান ড. কামাল হোসেন। এনা প্রতিনিধিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, শিগগির গণপরিষদ আহ্বান সম্ভব হবে। শাসনতন্ত্রে জনগনের আশা আকাঙ্খা ও আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টোর প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সোভিয়েতের সঙ্গে সম্পর্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকার ও জনগনের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তাস প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতকালে এই দিনে তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বাংলাদেশ জাতীয় সংগ্রামে সোভিয়েত ইউনিয়ন যে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছে তা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চান তিনি। পাকিস্তান কারাগারে থাকাকালীন তিনি জানতে পারেন সোভিয়েত নেতা সোভিয়েত শ্রমিক সমাজ সংস্থাগুলো বারবার তাকে মুক্ত করতে বলেছিলেন।
সাক্ষাতের সময় বেধে দেওয়া হলো
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিরা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে সাক্ষাতের জন্য সময় নষ্ট করতে পারবেন না। এক আদেশের মধ্য দিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, অফিসে মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করা যাবে না। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সাক্ষাত মঞ্জুর করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী সকাল ৯টা থেকে ১০ টা এবং বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত নিজ বসভবনে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে দেন।
ফেরত যাচ্ছে ভারতীয় সৈন্য
সংবাদপত্রের খবরে জানানো হয়, ইতোমধ্যে ৩০ হাজার ভারতীয় সৈন্য ফেরত গেছে। দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সংবাদ বলছে, ৬৫০ জন যুদ্ধবন্দী ছাড়া বাকিদেরও ঢাকা থেকে ভারতে পাঠানো হয়েছে। ইউএনআই পরিবেশিত সংবাদের বরাতে দৈনিক বাংলা বলছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি নিয়মিত ও আধা সামরিক ৯৩ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। এরমধ্যে ঢাকায় আত্মসমর্পণকারী সংখ্যা ৩৩ হাজার।
হাইকোর্ট খোলার ঘোষণা
এইদিন বাংলাদেশ হাইকোর্ট আদেশ ১৯৭২ জারি করা হয়। আদেশটি সমগ্র বাংলাদেশে একসঙ্গে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়। বাসসের সংবাদ বলছে, এদিন ৫জন স্থায়ী বিচারপতির শপথ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এইদিন জানা যায় পরেরদিন অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি থেকে হাইকোর্ট খুলবে।
নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
বিজয়ের প্রথম মাস শেষ হওয়ার পরে বেশকিছু জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ শুরু হয়। এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার নিহত বুদ্ধিজীবীদের জাতীয় বীরের মযাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শহীদ পরিবারে পুনর্বাসন ও সাহায্যের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। শ্রম সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সরকার শ্রমনীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এদিকে গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও ততদিনে কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়েজন বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রণয়নের কাজ শুরু হয় স্বাধীন দেশে।

/এমআর/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি