X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে পাশে নেই কেউ, তাই রাজপথে পরিবহন শ্রমিকরা

শাহেদ শফিক
১২ মে ২০২০, ১২:০০আপডেট : ১২ মে ২০২০, ১৪:১৬

সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এ সেক্টরের শ্রমিকরা। শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের নামে শ্রমিক সংগঠনগুলো কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করলেও তাদের এই দুর্দিনে সেই টাকা কোনও কাজে আসছে না। এ অবস্থায় নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনও সহায়তা পাচ্ছে না তারা। ফলে তারা রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছেন। এরইমধ্যে পরিবহন চালু করে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধও করেছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে তারা এখন বেকার। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে গাড়ি চালানো এসব শ্রমিককে কেউ মাসিক বেতন দেয় না। চাকরি বাঁচাতে টার্মিনালে অবস্থান করা পরিবহনগুলো পাহারা দেওয়ার কাজ করতে হচ্ছে তাদের। ফলে টার্মিনাল আর পরিবহনের চেয়ারেই দিন কাটছে তাদের। এ অবস্থায়ও খোঁজ নিচ্ছে না তাদের নিয়ে রাজনীতি করা শ্রমিক সংগঠনগুলোও। খাবারের জন্য নেতাদের কাছে ধরনা দিলেও কেউ সাড়া দিচ্ছেন না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে দেশে নিবন্ধিত যানবাহন আছে প্রায় ৪৪ লাখ। এরমধ্যে ৮ লাখের বেশি বাণিজ্যিক যানবাহন। এসব যান চালনার সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় ৭০ লাখ শ্রমিক। এরমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত রেজিস্টার্ড শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ লাখ। এর বাইরে আরও ২০ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন ছোটখাটো পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আবার কেউ কেউ আছেন, যারা পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সড়কে পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকেই এই সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা বেকার।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মহীন অবস্থায় শতাধিক শ্রমিক অলস সময় কাটাচ্ছেন। তারা জানান, এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা উপোস থাকতে হচ্ছে। প্রথম কয়েকদিন স্থানীয় শ্রমিক নেতারা কিছুটা খোঁজ-খবর নিলেও এখন আর কারও দেখা মিলছে না। গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনও দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় পরিবারের খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা, তারা নিজেরাই খাবার সংকটে রয়েছেন। নেতাদের ফোন কলেও তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকেন।

শ্রমিকদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন সেক্টর খুলে দেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে পরিবহনও খুলে দিতে হবে। তাই প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি পালনের শর্ত দিয়ে পরিবহন খুলে দেওয়া যেতে পারে। এতে তারা দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পাবেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, জীবিকার তাগিদে তারা কেউ এখন রিকশা, ভ্যান এমনকি ঠেলাগাড়িও চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভ্যান গাড়ির মাধ্যমে তরকারি বিক্রি করছেন। এর মাধ্যমে যে সামান্য অর্থ উপার্জিত হয় তা দিয়েই পরিবার চলছে।
এদিকে, পরিবহন খুলে দেওয়ার দাবিতে এরইমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এরমধ্যে গতকাল শনিবার (৯ মে) দুপুর পর্যন্ত তারা মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা অভিযোগ করেন, তাদের কল্যাণ তহবিলের নামে শত কোটি টাকা চাঁদা উঠানো হলেও সেই টাকা তাদের জন্য খরচ করা হচ্ছে না। শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সেই টাকার কোনও হিসাবও দিচ্ছেন না।

আন্দোলনরত শ্রমিকদের একজন মো. সমীর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত দেড় মাস কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। গাড়ি চালাতে না পারায় বেতন ভাতা পাচ্ছি না। মালিকরাও আমাদের পাশে নেই। সরকারের ত্রাণসামগ্রীও আমরা পরিবহন শ্রমিকরা পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছি। সরকার যখন সবকিছুতে স্বাস্থ্যবিধির শর্ত দিয়ে খুলে দিচ্ছে তাহলে পরিবহনও খুলে ‍দিতে পারে।’

হীমাচল পরিবহনের চালক আলী আকবর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেকার বসে আছি। এভাবে আর কতদিন চলবো? মালিকরা আর কতদিন বসে বসে বেতন দেবে। সবার তো পেটে ক্ষুধা রয়েছে। তাই এখন আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছি।’

খাদ্য সহায়তার দাবিতে গত ৫ মে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় তারা ঢাকার প্রবেশমুখে রাস্তা অবরোধ করে। তাদের বলেন, প্রতিদিনের আয় রোজগারের ওপর তাদের সংসার চলে। আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে তারা কোনও আর্থিক কিংবা খাদ্য সহায়তা পাননি। সে কারণে তারা রাস্তায় নেমেছেন। পরিবহন খুলে না দিলে তাদের কঠিন কর্মসূচি শুরু হবে।

এ সময় তারা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন। শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে- বসে থাকা শ্রমিকদের নিয়মিত ত্রাণ সহায়তা করতে হবে। শ্রমিক কল্যাণের নামে বিভিন্ন শ্রমিক মালিক সমিতির ব্যানারে যেসব চাঁদা আদায় হয় সেগুলো বন্ধ করতে হবে এবং অবিলম্বে গণপরিবহন চালু করতে হবে।

এর আগে ৩ মে মিরপুর এলাকায় কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিক ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া সাভার, কুড়িগ্রাম ও বরিশালেও শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, ‘শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের নামে সড়কে প্রতিদিন শত কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে। সেই টাকা কোথায়? কেন নেতারা সেই টাকার কোনও হিসাব দিচ্ছেন না। মহামারিতে কেন শ্রমিক কল্যাণের টাকা তাদের কল্যাণে ব্যয় হবে না। শ্রমিকরা এখন পেটের তাগিদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক স্থানে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। চাঁদাবাজির টাকায় যারা শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তাদের সম্পদের হিসাব নিলেই তো সব বেরিয়ে আসবে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা পরিবহনের আয় থেকে সামান্য অর্থ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে নিয়ে থাকি। এটা কিন্তু শ্রমিকদের থেকে নেওয়া হচ্ছে না। সেই তহবিল থেকে এতদিন চালিয়েছি। ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনালে আমরা প্রতি ১০ দিন পর পর প্রত্যেক শ্রমিককে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ২ কেজি ডালসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। সায়েদাবাদে রান্না করা খাবার দিয়েছি। এখন আমাদের ফান্ড শেষ হয়ে গেছে। শ্রমিকরা যে অভিযোগ করছে সেটা সত্য নয়।’

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে চালকরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারছেন না। ফলে তারা পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মালিক সমিতি থেকে করোনার শুরুতে সাধারণ শ্রমিকদের পাশে ছিল। কিন্তু মালিকরা কতদিন তাদের পাশে থাকবে? তাদেরও তো ব্যবসা বন্ধ।’

জাতীয় সড়ক পরিবহন মোটর শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকরা খুবই কষ্টে আছেন। কেউ তাদের পাশে নেই। তারা রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন। তাদের পাশে কেউ না দাঁড়ালে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।’

/এমআর/এসটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চোট কাটিয়ে অনুশীলনে সৌম্য, ফিরেছেন লিটনও
চোট কাটিয়ে অনুশীলনে সৌম্য, ফিরেছেন লিটনও
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না: নাছিম
সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না: নাছিম
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০