প্রথম অস্ত্রোপচারের পর স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম। জ্ঞান ফেরার পর তিনি তার স্বামীকে চিনতে পেরেছেন। অল্প কথাও বলেছেন। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ওয়াহিদার অস্ত্রোপচারের পর যে অবস্থা হয়েছিল, সেটি এখনও স্থিতিশীল। তবে তিনি পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা না গেলে চিকিৎসার বিষয়ে সুনিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার চেতনা ফিরেছে। তিনি হালকা কথাও বলছেন। তার স্বামী আসার পর তাকে চিনতে পেরেছেন। এটা একটা ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখছি আমরা। তবে এখনও তাকে আশঙ্কামুক্ত বলার সময় আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড ছাড়া কেউ তাকে দেখবে না। আগামীকাল মেডিক্যাল বোর্ড দেখবে। পরে তারা তার পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে জানাবে এবং পদক্ষেপ নেবে।’
প্রসঙ্গত, বুধবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও'র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুরে ও পরে রংপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমান তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রাত সোয়া ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত চলে এই অস্ত্রোপচার।
অস্ত্রোপচারের পর ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘যখন প্রথম তাকে নিয়ে আসা হয় তখন ব্যান্ডেজ করা ছিল, অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার পর দেখা যায় মাথায় মোট ৯টা আঘাতের চিহ্ন। একটা খুব বড়, যার ভেতর দিয়ে হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। বাকি আটটা ইনজুরি ছিল। তার ভেতরে ছিল মাথার দুই পাশে তিনটা করে ছয়টি, মুখের ওপরে একটি, নাকের ওপরে একটি এবং চোখের নিচে একটি। ভেতরে ঢুকে যাওয়া হাড় বের করা হয়েছে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। অন্য আঘাতগুলোও সব রিপেয়ার করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী। তবে এটা হেড ইনজুরি, ব্রেইনের ভেতরে রক্তক্ষরণের ব্যাপার। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন কিনা এখনই আমরা বলতে পারবো না। তাকে অন্তত ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর বলতে পারবো। শরীরের ডান পাশ প্যারালাইজড ছিল, সেটা আশা করি সচল হয়ে যাবে। তবে তাতে সময় লাগবে।‘
আরও পড়ুন-
ইউএনও’র ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে: কাদের
‘জাহাঙ্গীর ও আসাদুলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই প্রশ্ন আমারও’
অস্ত্রোপচার সফল হলেও আশঙ্কামুক্ত নন ইউএনও ওয়াহিদা
ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে ওয়াহিদার
ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলায় দুই জন আটক
ইউএনও’র ওপরে হামলার ঘটনায় মামলা
ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি
এটা সিরিয়াস ক্রাইম: রংপুর বিভাগীয় কমিশনার
ইউএনও’র ওপর হামলাকারী ছিল পিপিই পরা
ইউএনও’র ওপর এমন হামলা বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ
ইউএনও ও তার বাবাকে কুপিয়ে ‘মৃত ভেবে’ ফেলে রেখে যায় হামলাকারীরা
ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ইউএনও’র ওপর হামলা