X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

‘এমপি’ পরিচয়ে ব্রুনাইয়ে মানবপাচার, ৩৩ কোটি টাকা লোপাট

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:৫৪আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:১৮

শেখ আমিনুর রহমান হিমু ব্রুনাইয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৪০০ লোকের কাছ থেকে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে শেখ আমিনুর রহমান হিমু (৫৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। তাকে ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের অন্যতম মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে র‌্যাব। সে সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এই মানবপাচার অব্যাহত রেখেছিল।

বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ প্রধান কার্যালয়ে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-৩-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

র‌্যাব জানায়, ২০১৯ সালে হিমু ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের মূলহোতা মেহেদী হাসান বিজনের কোম্পানির নামে ভুয়া ডিমান্ড লেটার সংগ্রহ করে ৬০ জনকে ব্রুনাইয়ে পাঠায়। ভুক্তভোগীরা ঋণ করে ও জমিজমা বিক্রি করে ব্রুনাইয়ে গিয়ে কোনও কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে নিজ খরচে দেশে ফিরে আসেন। হিমুর নিজের কোনও রিক্রুটিং লাইসেন্স নেই। সে নজরুল ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস ও হাইওয়ে ইন্টারন্যাশনাল আরএল ব্যবহার করে ব্রুনাইয়ে মানবপাচার করে।

এর আগে, বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাফরুল থেকে এনএসআই ও র‌্যাবের অভিযানে শেখ আমিনুর রহমান হিমু এবং তার সহযোগী আরও দুজন মো. নুর আলম (৩৬) ও বাবলুর রহমানকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় হিমুর দেহ তল্লাশি করে একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন পাওয়া যায়।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের ঘটনায় অসংখ্য ভুক্তভোগী র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের মূলহোতা মেহেদী হাসান বিজন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন অপুর অন্যতম সহযোগী গ্রেফতারকৃত শেখ আমিনুর রহমান হিমু। সে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছিল এবং মেহেদী হাসান বিজনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। গ্রেফতারকৃত হিমু মেহেদী হাসান বিজনের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ব্রুনাই মানবপাচার করতো। র‌্যাবের প্রেস ব্রিফিং

তিনি বলেন, হিমু নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য বলে পরিচয় দিতো। এই পরিচয়ে সে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেকার যুবকদের টার্গেট করে ব্রুনাইয়ে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাতো। ব্রুনাইয়ে চাকরির কথা বলে প্রতিজনের কাছ থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিতো। কিন্তু ব্রুনাইয়ে কোনও চাকরি না পেয়ে উল্টো জেল খেটে অমানবিক জীবনযাপন করেন প্রবাসীরা।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক আরও বলেন, বাংলাদেশি দালাল শেখ আমিনুর রহমান হিমু ব্রুনাইয়ে বিভিন্ন কোম্পানির কথা বলে মানবপাচার করতো। কিন্তু ব্রুনাইতে সেসব কোম্পানির কোনও খোঁজ মেলেনি।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ব্রুনাইয়ে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন। এই শ্রমিকদের একটি বড় অংশ মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে ব্রুনাই গিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ব্রুনাইতে বাংলাদেশি মালিকানায় প্রায় তিন হাজার কোম্পানি নিবন্ধিত আছে, যার অধিকাংশই নামসর্বস্ব। এসব কোম্পানি ভুয়া বানোয়াট প্রকল্প দেখিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্রুনাই থেকে কর্মসংস্থান ভিসা লাভ করে তা দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিক্রি করে। ব্রুনাইতে যাওয়ার জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একজন কর্মীকে ব্রুনাই যেতে হয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, আইন অনুসারে ব্রুনাইতে একজন কর্মী সর্বোচ্চ দুই বছর অবস্থান করতে পারেন। দুই বছরে অভিবাসন ব্যয়ের টাকা তুলতে না পেরে ভিসার মেয়াদ শেষে অনেকে বাংলাদেশে না ফিরে মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে দুই হাজার ব্রুনাই ডলার দিয়ে পার্শ্ববর্তী সারওয়াক প্রদেশ হয়ে মালয়েশিয়ায় পাচার হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের নামে বর্তমানে কোনও ভিসা দেওয়া হয় না। মূলত ব্রুনাই বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানবপাচার কার্যক্রমের রুট এবং গন্তব্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্ট, বাংলাদেশি দালাল মিলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হয়ে কাজ করছে। এদের উদ্দেশ্য হলো শ্রমিকদের কাছ থেকে মাসিক সুবিধা আদায় করা, শারীরিক নির্যাতন করা এবং তাদের বেকার রেখে দেশে ফেরত যেতে বাধ্য করা। যাতে তাদের ওয়ার্কভিসার বিপরীতে এভাবে আরও কর্মী আনতে পারে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের কারণে ব্রুনাইয়ে সক্রিয় ভিসা দালাল চক্রের মূলহোতা মেহেদী হাসান বিজনসহ সাত জনের পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে পাসপোর্ট অধিদফতর মেহেদী হাসান বিজনসহ সাত জনের পাসপোর্ট বাতিল করে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ব্রুনাইয়ে মানবপাচারের শিকার ভুক্তভোগীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্রুনাইয়ে অবস্থানকারী বাংলাদেশি দালাল মেহেদী হাসান বিজনকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেন। মেহেদী হাসান বিজনের নামে দেশে ২০টি মামলা হয়েছে এবং বর্তমানে সে বাংলাদেশে আত্মগোপন করে আছে।

মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে পুলিশের কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত কিনা এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত চলছে। প্রমাণ পেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

/এআরআর/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে প্রাণ গেলো শিশুর
মুগদায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনি, তরুণের মৃত্যু
যৌথবাহিনীর অভিযানে সাত দিনে আটক ৩৮০
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!