X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন: ‘বাংলাদেশের ওপরে কোনও প্রভাব পড়বে না’

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৩ নভেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১০:০৬

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন: ‘বাংলাদেশের ওপরে কোনও প্রভাব পড়বে না’

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাকর নির্বাচন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। একদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি অব্যাহত রাখতে চাইছেন। অপরদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈশ্বিক ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমেরিকান ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে। কারণ, ইতোমধ্যে একটি বড় অংশ আগাম ভোট দিয়েছেন এবং আশা করা হচ্ছে, নির্বাচনের দিন প্রচুর ভোট পড়বে। আমেরিকান সাধারণ ভোটাররা ছাড়াও সবদেশই গভীর  নজর রাখছে এই নির্বাচনের দিকে। রিপাবলিকানরা জিতলে কী অবস্থান হবে, বা ডেমোক্র্যাটরা জিতলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী অবস্থান নেওয়া হবে, সে বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে আগে থেকেই। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, সেদেশের নির্বাচন আমাদের ওপরে কোনও ধরনের প্রভাব পড়বে না।

নির্বাচনে জয়-পরাজয় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কোনও প্রভাব রাখবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে মন্তব্য করেন— ‘কোনও ধরনের প্রভাব পড়বে না।’ একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মাদ শহীদুল হকও।

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন পুনর্বিবেচনায় রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের যে উদ্যোগ, ডেমোক্র্যাটরা জিতলে সেটা পিছিয়ে যাবে কিনা, জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এটি একটি চলমান আইনি প্রক্রিয়া এবং অ্যাটর্নি জেনারেল একটি পদ, যেখানে মানুষ পরিবর্তন হয়। আমরা আশা করি, যে-ই জয়লাভ করুক এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্র খুনিকে দ্রুততম সময়ে ফেরত দেবে।’

গত এক দশকের সম্পর্ক

২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের মুহম্মদ ইউনূসকে ঘিরে দুই সরকারের মধ্যে মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন স্তরের প্রশাসন মুহম্মদ ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিয়েছেন। ২০১১ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনির ওয়াশিংটন সফরে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠকের পর যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, সেখানে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর পরের বছর হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরের সময়েও গ্রামীণ ব্যাংক  নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আর কোনও আলোচনা হয়নি। তবে গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতাসহ অন্যান্য মানবাধিকার বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরাসহ স্টেট ডিপার্টমেন্ট সবসময়ে সোচ্চার ছিল। এছাড়া বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি  বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ‘আইনি প্রক্রিয়ার’ অজুহাত দিয়ে শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছে ডেমোক্র্যাট সরকার।

২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন। দেশটিতে ওই বছর বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ৫৯০ কোটি ডলার, যা ২০১৯ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৭০ কোটি ডলার। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় দ্বিগুণেরও  বেশি।  অর্থাৎ ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ছিল ৯০ কোটি ডলার, যা ২০১৯ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৩০ কোটি ডলারে। দেখা যায়, ২০১৬ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য পার্থক্য ছিল ৫০০ কোটি ডলার, যা ২০১৯ সালে কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৪৩০ কোটি ডলারে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি কমালেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির উদ্বেগ কমই ছিল। তবে ২০২০ সালে রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেলের এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে আশার আলো দেখাচ্ছে খুনিকে ফেরত পাওয়ার বিষয়ে।

দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সোমবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি অনেক মজবুত এবং পুরনো। আমাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু তাই না, দুই দেশের মানুষে-মানুষে যোগাযোগ পরস্পর সম্মানের ওপরে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে।’

পররাষ্ট্র সচিব আরও  বলেন, ‘যে-ই জয়লাভ করুক না কেন, দুই দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না। আমরা আশা করি, বর্তমান সম্পর্কের যে গতি রয়েছে, সামনের দিনগুলোতে সেটি আরও  বৃদ্ধি পাবে।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মাদ শহীদুল হক একই মত পোষণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রদিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যে একটি সমঝোতা আছে এবং এই সমঝোতার ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশের ভূমিকা, অর্থনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির গুরুত্ব সবসময়ে থাকবে বলে মনে করেন শহীদুল হক।

ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাবেক আমলা শহীদুল হক বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা জিতলে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি পরিবর্তন আসবে। এরইমধ্যে জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন— তিনি জয়লাভ করলে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করবেন।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের  সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টের মতো বৈশ্বিক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাইডেন ফের এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

শহীদুল হক  বলেন, ‘এছাড়া মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হবেন বাইডেন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপরে এর একটি প্রভাব পড়তে পারে।’

 

/এপিএইচ/আপ-এনএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব পেলো শামসুল হক ফাউন্ডেশন
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব পেলো শামসুল হক ফাউন্ডেশন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
নিজ বুদ্ধিমত্তায় যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
নিজ বুদ্ধিমত্তায় যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?