X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষবরণে কদর কমেছে পান্তা- ইলিশের

আমানুর রহমান রনি
১৪ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:২৫আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:৪৪

ক্রেতা নেই। লোকসানের দুশ্চিন্তায় পান্তা- ইলিশের বিক্রেতা পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের আদি উৎসব।গত প্রায় তিন দশক ধরে এই উৎসবের সঙ্গে পান্তা-ইলিশ যেন একাকার হয়ে আছে। শহুরে মানুষেরা ঘটা করেই পান্তা ইলিশের আয়োজন করেন। পাড়া মহল্লায় যেখানেই বৈশাখের উৎসব,সেখানেই থাকে পান্তা ইলিশের আয়োজন। তবে রাজধানীতে বৈশাখের আয়োজনগুলো এবারই ছিল ব্যতিক্রম।রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নববর্ষ উদযাপনে পান্তার আয়োজন থাকলেও তাতে মানুষের আগ্রহ ছিল কম।তাই এবার লোকসানের মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন পান্তা-ইলিশের আয়োজক বিক্রেতারা ।

যতদূর জানা যায়, পহেলা বৈশাখ উদযাপনে পান্তা ইলিশের প্রচলন শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে রমনার বটমূলে এবং এর উদ্যোক্তা ছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক বোরহান আহমেদ।

এবারের পহেলা বৈশাখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পান্তা-ইলিশের কয়েকটি স্টল দেখা গেলেও তাতে ছিল না দর্শনার্থীদের ভিড়। এখানকার একটি স্টলের মালিক আফজাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার মানুষের পান্তা-ইলিশের প্রতি কোনও আগ্রহ নেই। সকাল থেকে ১০ থেকে ১৫ প্লেট বিক্রি হয়েছে। সব ভাত, ইলিশ, ভর্তা রয়ে গেছে। অনেক লোকসান হবে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পান্তা- ইলিশ নিয়ে বসেছিলেন আফজাল হোসেন, ক্রেতা না থাকায় হতাশ তিনি 3 তিনি বলেন, এক থালা পান্তা ভাত, একটুকরো ইলিশ মাছ ভাজা, আলু ও শুকটি ভর্তা এবং চাটনি তারা প্যাকেজ হিসাবে ২৫০ টাকা দরে সকাল থেকে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেউ খাচ্ছে না।এরপর দর ৫০ টাকা কমিয়ে ২০০ টাকা করা হয়, তারপরও কেউ খায় না। আরও ১০০ টাকা কমিয়ে শুধু ১০০ টাকায় বিক্রি করার চেষ্টা করেও কোনও ক্রেতা টানতে পারছেন না।

বংশাল থেকে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রেবেকা ও সালাম দম্পতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে ভোরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসেন তারা। কিন্তু পান্তা-ইলিশ খাননি। কারণ, বাসা থেকে তারা নিয়মিত খাবার খেয়ে এসেছেন। বাইরে তারা পান্তা-ইলিশ খাবেন না।’

আরও পড়তে পারেন: ‘লাভিং পিপল’

সোহরাওয়ার্দী কালি মন্দিরের পাশেই পান্তা ইলশের আরও একটি স্টলে বসেছিলেন কুতুব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পান্তা ইলিশ এবার মানুষ খাচ্ছে না। তাই সকাল থেকে সিঙ্গারা, সমুচা, পিয়াজু ভাজা শুরু করেছেন।’

একই চিত্র রমনা ও এর আশেপাশের এলাকায়। রমনাতে এবার কোনও স্টল দেখা যায়নি। কয়েকটি ভ্রাম্যমান স্টল ছিল। তবে বেচা-বিক্রি না হওয়ায় তারাও চলে যায়।এবার পান্তা-ইলিশ ভালোভাবেই বর্জন করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

মৎস্যভবন এলাকায় ঘুরে পান্তা-ইলিশের তেমন কোনও দোকান দেখা যায়নি। তবে কাকরাইল মসজিদের সামনে একটি অস্থায়ী দোকানে পান্তা-ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেখানে ১০০ টাকায় পান্তা-ইলিশ বিক্রি করলেও লোকজনের তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতা আব্দুল হালিম।

আরও পড়তে পারেন:  বৈশাখী সাজে শুভেচ্ছা জানালেন বার্নিকাট

 

তিনি বলেন, ‘সকালে মৎস্য ভবন এলাকায় পান্তা-ইলিশ নিয়ে বসলে পুলিশ সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে এখানে এসে বেচাকেনা শুরু করি। কিন্তু গত বছরের মতো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’

এছাড়া রমনা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে চলছে ইলিশ প্যাকেজ। এতে রয়েছে ভাত বা খিচুড়ি বা পোলাওয়ের সঙ্গে এক পিচ ইলিশ, একটা ছোট পানির বোতল, অথবা কোমল পানীয়, যার মূল্য নেওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা।

অপরদিকে নিমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ভোরে পান্তা ইলিশ ও মিষ্টির আয়োজন করেছিল। সেখানে অতিথিদের খেতে দেখা গেছে।

এদিকে পান্তা-ইলিশ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই। কেউ বলছেন, পহেলা বৈশাখের সকালে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাঙালি রীতি, আবার কেউ বলছেন, বাঙালির ঐতিহ্যে এমনটা কখনও ছিল না। তবে যে যাই বলুক, পান্তা-ইলিশের আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ইলিশ বিক্রির নামে দেদারছে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে।

 

আরও পড়তে পারেন:  বর্ষবরণে বর্ণিল আয়োজন মিনা ট্রাস্টের

রমনায় আগত লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, আসলে নববর্ষে পান্তা খাওয়া আমাদের ঐতিহ্য নয়। আগে এটা নিয়ে এতো মাতামাতি হতো না। গত দুই তিন বছর ধরে কিছু মুনাফালোভী অস্থায়ী ব্যবসায়ী বৈশাখে মানুষের আবগকে পুঁজি করে চড়া দামে ইলিশ বিক্রি করেন।

উল্লেখ্য, জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় নববর্ষ উদযাপনের দিন, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ ১৪২৩-এর খাদ্য তালিকা থেকে ইলিশ বর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে পহেলা বৈশাখের খাবারের তালিকায় খিচুড়ির সঙ্গে থাকছে বেগুন ভাজি, ডিম ও মুরগির মাংস ভুনা।

এদিকে ইলিশের প্রজনন মৌসুমের এ সময়ে জাটকা নিধন কমাতে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বৈশাখে ইলিশ বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নববষের্র সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কোনও সম্পর্ক নেই জানিয়ে পহেলা বৈশাখে ইলিশ বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এআরআর/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আনারসের পাতা থেকে তৈরি হবে সিল্ক জামদানি শাড়ি
আনারসের পাতা থেকে তৈরি হবে সিল্ক জামদানি শাড়ি
সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানে স্পিকার
সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানে স্পিকার
আদালতের আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ট্রাম্পকে ৯ হাজার ডলার জরিমানা
আদালতের আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ট্রাম্পকে ৯ হাজার ডলার জরিমানা
দালাল চক্রে দুই হাসপাতালের সাবেক-বর্তমান স্টাফরা
দালাল চক্রে দুই হাসপাতালের সাবেক-বর্তমান স্টাফরা
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা