X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় উদাহরণ যারা

জাকিয়া আহমেদ
১৬ আগস্ট ২০১৭, ১০:২৩আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৭, ১২:০৭

 

মুক্তামনির অপারেশন হয় এই চিকিৎসকদের হাতেই বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনির চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে। মুক্তামনিকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসকরা ওই হাসপাতালের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন, পাঠানো হয় সমস্ত পরীক্ষার কাগজপত্র। কিন্তু সেখান থেকে জবাব আসে, ‘দিস কেস ইজ নট অপারেবল অ্যান্ড কিউরেবল’। সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের চিকিৎসকরাই মুক্তামনির ডান হাত অক্ষত রেখে সফল অপারেশন করেছেন, অপসারণ করেছেন তিন কেজি ওজনের অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড।

কেবল বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনিই নয়, বৃক্ষমানব হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাওয়া আবুল বাজানদার, মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া, ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া শিশু, জোড়া শিশু তোফা ও তহুরার সফল অস্ত্রোপচারের সাফল্য দেশ ছাড়িয়ে স্থান পেয়েছে বিদেশি গণমাধ্যমেও।

অধ্যাপক আব্দুল হানিফ টাবলু, অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা, অধ্যাপক আশরাফুল হক কাজল সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেডের চেয়ে রোগী বেশি, রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, যন্ত্রপাতির স্বল্পতা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশের চিকিৎসায় রয়েছে বেশ কিছু সাফল্য, বিশ্বে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা সৃষ্টি করেছেন উদাহরণ। কেবল তা-ই নয়, বাংলাদেশের একজন চিকিৎসকের উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে অনেক দেশে মাতৃ মৃত্যুরোধে,একজন চিকিৎসকের ছয়টি বই ৪০টি দেশেরও বেশি দেশে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশি দুই চিকিৎসকের আবিষ্কার করা হেপাটাইটিস-বি এর ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এসবই বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সফলতার একেকটি পালক। যা নিয়ে গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ।

মুক্তামনির অপারেশনে চিকিৎসকরা চিকিৎসকরা বারবারই বলেছিলেন, জীবন বাঁচাতে বাধ্য হলে মুক্তামনির আক্রান্ত ডান হাতটি কেটে ফেলতে হতে পারে। তবে গত ১২ আগস্ট হাতটি অক্ষত রেখেই তিন কেজি ওজনের অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড কেটে ফেলতে সক্ষম হন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। যদিও তারা বলছেন, এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয় মুক্তামনি, তার আরও অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি অপারেশন দরকার হবে।

হাত না কেটে অস্ত্রোপচার করাকে চিকিৎসকরা দেখছেন সফলতা হিসেবেই। অস্ত্রোপচার শেষে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘অপারেশন সফল, মুক্তামনি ভালো আছে। প্রাথমিক সাফল্য বললেও এটা এখানেই শেষ নয়, তবে আমরা সফল হবো।’

অন্তত ত্রিশজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেন। অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম। তার সঙ্গে ছিলেন একই ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন, অধ্যাপক সাজ্জাদ খোন্দকার, অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. লুৎফর কাদের লেনিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সালমা আনাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. তাহমিনা সাত্তার,সহকারী অধ্যাপক রবিউল করিম খান, সহকারী অধ্যাপক ডা. শরীফ আশফিয়া রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হেদায়েত আলী খান, সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ চন্দ্র দাস, সহকারী অধ্যাপক ডা. সালেক বিন ইসলাম, বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন হোসাইন ইমাম, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু ফয়সাল মো. আরিফুল ইসলাম নবীন ও ডা. শারমিন আক্তার সুমি, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা.মাহবুব হাসান ও ডা. নুরুন নাহার লতা।

মুক্তামনির অপারেশনে চিকিৎসকরা

ছিলেন বার্ন ইউনিটের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর, সহকারী অধ্যাপক ডা. মলয় কুমার দাস, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মৌমিতা তালুকদার, ডা. রেবেকা সুলতানা ও ডা. মো. আনিসুর রহমান। ঢামেক হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেনসহ সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাবেয়া বেগম, সহকারী অধ্যাপক ডা. সুব্রত কুমার মণ্ডল ও ডা. তানভীর আলম এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শফিকুল আলমও  ছিলেন।

এছাড়াও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের অ্যানেসথেসিয়া অধ্যাপক ডা. নরেশ চন্দ্র মণ্ডল ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মকবুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

আবুল বাজানদার ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি খুলনা থেকে এসে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন আবুল বাজানদার। বিরল রোগ ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভ্যারুসিফরমিসে আক্রান্ত আবুল বাজানদার বাংলাদেশে প্রথম আর বিশ্বে তৃতীয়। গত ১২ জুলাই তার শেষ অপারেশন করা হয়েছে। তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।

মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া চিকিৎসকের কোলে সাফল্য রয়েছে ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগেরও। মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া, বড় জিহ্বার আট বছরের জাহিদ, ডাস্টবিনে পাওয়া পলিথিনে মোড়ানো শিশু আয়ান, জোড়া শিশু তোফা ও তহুরার সফল চিকিৎসা হয়েছে এই বিভাগে। প্রতিটি চিকিৎসায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন এই বিভাগের চিকিৎসকরা।

২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরায় যুবলীগের সংঘর্ষে মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয় সুরাইয়া। ওইদিন রাতেই মাগুরা সদর হাসপাতালে অপারেশন হয় সুরাইয়ার মা নাজমা বেগমের। সন্তান প্রসবের পর দেখা যায় পেটে থাকা শিশুটিও গুলিবিদ্ধ। দু’দিন পর মা ও নবজাতককে ভর্তি করা হয় ঢামেক হাসপাতালে। গঠিত হয় ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড।

নবজাতক বিভাগের আইসিইউতে রাখার পর একটু আশঙ্কামুক্ত হলে মায়ের কোলে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, নাম রাখা হয় সুরাইয়া। ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হানিফ টাবলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুরাইয়ার চিকিৎসা আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা।’ মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে হাতেগোনা আরও কয়েকটি ঘটেছে জানিয়ে আব্দুল হানিফ টাবলু বলেন, ‘ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা দুই/একটি হলেও তারা বাঁচেনি। মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র শিশু সুরাইয়াই। বিশ্বে এই ঘটনা এটিই প্রথম।’

সুরাইয়ার চিকিৎসা করা মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য নবজাতক বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা, বর্তমান প্রধান অধ্যাপক ডা.আশরাফুল হক কাজল ও অধ্যাপক ডা.কানিজ হাসিনা শিউলি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সুরাইয়া এখন ভালো আছে। তবে তার বিষয়টি এখনও আমাদের কাছে বিস্ময়, কী করে সে এতোটা সারভাইভ করতে পারে! এই বিষয়গুলো আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, পুরো দেশ আমাদের সঙ্গে থাকে, যেটা আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন,‘সুরাইয়া যখন অধ্যাপক শিউলির অধীনে ভর্তি হয়,তখন কিছু জটিলতা ছিল। তখন আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি, একমাস একদিন সে আমাদের কেয়ারে ছিল, প্লাস্টিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক সার্জারি­– সবাই মিলে প্রতিদিন তার জন্য কাজ করতাম, আমাদের এই একাগ্রতা ছিল সুরাইয়াকে সুস্থ করে তোলার জন্য। সবাই যে যার অবস্থান থেকে তার সর্বোচ্চটুকু দিয়েছিলেন।’

কুকুরের কামড়ে আহত সুস্থ  ফাইজা চিকিৎসকদের আদরে তিনি বলেন, ‘একই ঘটনা ছিল কুকুরে কামড়ানো শিশু ফাইজার বেলাতেও। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পরিচালকও সেখানে সাহায্য করেছেন, ছিলেন প্লাস্টিক সার্জনরাও। সুরাইয়ার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিতে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি সেই একই প্রসিডিউর মানা হয়েছে ফাইজার ক্ষেত্রেও।’ ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে একা কিছু করা যায় না। এখানে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আমাদের সাফল্যের কারণ।’

তৌফা ও তহুরার অস্ত্রোপচার তৌফা ও তহুরার জোড়া লেগে জন্ম নেওয়ার বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় ‘পাইগোপেগাস’, যেটা বাংলাদেশে এই প্রথম। পিঠের একটু নিচ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত সংযুক্ত হয়ে জন্ম নিয়েছিল তোফা ও তহুরা। গত ১ আগস্ট তাদের আলাদা করেন চিকিৎসকরা।

সফল এ অপারেশনে যুক্ত ছিলেন প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক আবুল কালাম, ডা. তানভীর আহমেদ, ডা. লতা, ডা. গোবিন্দ, ডা. ফয়সাল ও ডা. হেদায়েত, নিউরোসার্জন অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার, ডা. রাজিউল হক, অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক শামসুজ্জামান, পেডিয়াট্রিক সার্জন ডা. শাহনুর ইসলাম, ডা. মোহাম্মদ মইনুল হক, অধ্যাপক আশরাফ উল হক কাজল, অধ্যাপক সামিদুর রহমান, অধ্যাপক কানিজ হাসিনা শিউলি, অধ্যাপক আবদুল হানিফ টাবলু। অ্যানেসথেশিয়ায় ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, ডা. রাবেয়া, ডা. শফিকুল আলম ও ডা. আতিক। এছাড়াও ছিলেন পেডিয়াট্রিক সার্জন তাহমিনা হোসেন, ডা. আল  মাসুদ, ডা.পার্থ সারথি মজুমদার,ডা. গাফফার খান জিয়া, ডা. সনেট, ডা. কৌশিক ভৌমিক ও ডা. তাসনিম আরা।

তৌফা ও তহুরার অপারেশন করেন এই চিকিৎসকরা শুধু চিকিৎসাই নয়, উদ্ভাবনেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতারের প্রসবকালীন রক্তপাত বন্ধে ‘কনডম ক্যাথেটার টেম্পোনেড’ ব্যবহারের মাধ্যমে এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা বিশ্বব্যাপী সায়েবা’স মেথড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ২০০৩ সালে ‘ইউজ অব কনডম টু কন্ট্রোল ম্যাসিভ পোস্টপার্টাম হেমোরেজ’ শিরোনামে মেডস্কেপ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয় ডা. সায়েবার এ চিকিৎসা পদ্ধতি। পরবর্তীতে মূল রিসার্চ পেপার হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গাইনি অ্যান্ড অবস-এ এবং ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে রিভিউ আর্টিকেল হিসেবেও প্রকাশিত হয় এটি। আন্তর্জাতিক নানা জার্নালে সায়েব’স মেথড প্রকাশিত হলে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ডা. সায়েবা আখতারের মাধ্যমে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এই মেথড নিয়ে এফসিপিএস ডেজারটেশন, এমএস থিসিস ও পিএইডডি থিসিস আছে।

আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা.এবিএম আব্দুল্লাহ রচিত ৬টি বই উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে।

তোফা তহুরার অপারেশন করছেন চিকিৎসকরা অপরদিকে, হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ নামে নতুন ওষুধের সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশি দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর।। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ‘ন্যাসভ্যাক’-এর সাফল্য সম্পর্কে ডা. মামুন আল  মাহতাব বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-র চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্য সব ওষুধের তুলনায় এটি বেশি নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হয়। সেখানে দেখা যায়, ন্যাসভ্যাক ব্যবহারে শতকরা ৫০ ভাগ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগীর রক্ত থেকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে। আর শতভাগ রোগীর লিভারের প্রদাহ পুরোপুরি ভালো হয়েছে।’ ন্যাসভ্যাকের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালটি চালানো হয় ২০১৩ সালে। এই ট্রায়ালটি লিভার বিশেষজ্ঞদের সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক কনফারেন্স হিসেবে স্বীকৃত আমেরিকান লিভার মিটিংয়ে ‘প্রেসিডেনশিয়াল ডিস্টিংশন পদক’ লাভ করে। এরপরই এটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত শুরু হয় কিউবায়। দেশটিতে ‘হেবার-ন্যাসভ্যাক’ নামে বিক্রি হচ্ছে ওষুধটি। রাশিয়ায় চলছে মাল্টিসেন্টার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। জাপানেও ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলেছে।

দেশের অন্যতম জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন সিনিয়র মোস্ট হিসেবে বলতে পারি, আগে আমরা যেভাবে চিকিৎসা করতাম, দিনে দিনে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, আরও  হচ্ছে। তার প্রমাণ আবুল বাজানদার। বিশ্বে যে ক’জন বৃক্ষমানব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল তাদের কারও এত সফল অস্ত্রোপচার হয়নি–এটি আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। অপরদিকে, তৌফা-তহুরার যে অপারেশন হয়েছে, এটি দশ বছর আগেও চিন্তা করা যেত না-অথচ সেটাই সম্ভব করেছেন আমাদের চিকিৎসকরা।’ চিকিৎসকদের সাফল্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শিশুদের অজ্ঞান করার মতো সাহস কারও ছিল না-অথচ তাদের একসঙ্গে রেখে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করাটাই বলে দেয় বাংলাদেশের চিকিৎসকরা কোথায় পৌঁছে গেছেন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের চিকিৎসকরা যদি ভালো টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট পান, তারা নিঃসন্দেহে আরও উন্নতি করবে। কারণ, তাদের মেধা রয়েছে, ইচ্ছা রয়েছে। রোগীদের প্রতি আন্তরিকতা রয়েছে। চিকিৎসকের এই বিষয়গুলো অনুপ্রেরণা দেবে পরবর্তী প্রজন্মকে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের চিকিৎসা যেভাবে এগুচ্ছে, তাতে আমরা একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে যাবো।’

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের ভুল হলে যতোটা ফলাও করে প্রচার করে সংবাদমাধ্যম, সে তুলনায় বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সাফল্য নিয়ে সংবাদ কমই দেখি। আমাদের সাফল্যকে একেবারেই খাটো করে দেখার মতো নয়, কারণ সাম্প্রতিক সময়েই বেশি কিছু চিকিৎসা বাংলাদেশে হয়েছে, যেটা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করেছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন করে উচ্চারিত হয়েছে।’

/জেএ/এএম/আপ-এসএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?