X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

তাবলিগ জামাতে ফের অস্থিরতা

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৪ নভেম্বর ২০১৭, ২১:১৪আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৬:৪৯

কাকরাইল মসজিদ তাবলিগ জামাতে ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাব-প্রতিপত্তি ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে এই অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে তাবলিগের দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আগামী ইজতেমায় বাংলাদেশে আসার বিষয়টি। তাকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলামসহ কওমি আলেমরা। আর এসব দ্বন্দ্বে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে হাতাহাতি ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

তাবলিগ সূত্রে জানা গেছে, তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এ দ্বন্দ্বে আগেও একাধিকবার মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশে তাবলিগের ফায়সালের (আমির) দায়িত্ব পালন করছেন সাত জন। তাদের মধ্যে সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম ‘তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ’র একজন মজলিসে শুরা সদস্য এবং ফায়সাল (আমির)।সৈয়দ ওয়াসিফের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তাবলিগের প্রবীণ দায়িত্বশীল মুরুব্বি অধ্যাপক মুশফিক আহমেদ ও তার অনুসারীরা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অধ্যাপক মুশফিক আহমেদের মৃত্যুর পর কোণঠাসা হয়ে পড়েন তার অনুসারীরা।

সূত্র জানায়, বিশ্বজুড়ে তাবলিগ জামাতের মারকায (মূল কেন্দ্র) ভারতে দিল্লির নিজামুদ্দিনে, যা নিজামুদ্দিন মারকায নামে পরিচিত। সেই মারকাযের অন্যতম ব্যক্তি মাওলানা সাদ কান্ধলভী। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ভারতের ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানিসহ শীর্ষ আলেমরা বিবৃতি দিয়ে মাওলানা সাদের বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। সে সময় চাপে পড়ে মাওলানা সাদ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

মাওলানা সাদ আলেমদের অর্থের বিনিময়ে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার বিরোধিতা করে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। এছাড়া, তিনি ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোন পকেটে রেখে নামাজ হয় না বলেও মন্তব্য করেন, যা সমালোচিত হয়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে তাবলিগের ফায়সালের মধ্যে মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের, মাওলানা রবিউল হক, মাওলানা ওমর ফারুক আগামী ইজতেমায় মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আগমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাকে বাংলাদেশে আসতে দিতে নারাজ হেফাজতে ইসলামসহ কওমিপন্থী আলেমরাও। গত ১১ নভেম্বর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের আয়েশা মসজিদে এ ইস্যুতে একটি সভা হয়। সেখানে হেফাজতপন্থী আলেমরা অংশ নেন। সভায় হেফাজতপন্থী আলেমরা মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকায় তাবলিগ জামাতের কাকরাইল মারকাযে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাবলিগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এতে কাকরাইল মসজিদে অবস্থিত মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মুরুব্বির রুমের জানালা ভাংচুর করা হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

দুপুর ২টার দিকে তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্যরা বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভবিষ্যতে কাকরাইল মসজিদের যেকোনও সভায় শুরা সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা চূড়ান্ত হবে। সম্প্রতি যেসব বিষয় নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেসবের সমাধানও এভাবেই করা হবে। কাকরাইল মসজিদের মাদ্রাসার ছাত্ররা উত্তর দিকেই অবস্থান করবেন, তারা দক্ষিণ দিকে আসবেন না।

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, তাবলিগের কার্যক্রমে কেউ কোনও অস্ত্র নিয়ে আসতে পারবেন না। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি অতিথি আগমনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

বৈঠকের এই সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করে স্বাক্ষর করেন মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের, সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম, মাওলানা রবিউল হক, খান মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন নাসিম, মাওলানা ওমর ফারুক, মোহাম্মদ মোশাররফ, মোহাম্মদ হোসাইন।

এ প্রসঙ্গে কাকরাইল মসজিদের দায়িত্বশীল এক মুরুব্বি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মিথ্যা প্রচারণা করে মাদ্রসার ছাত্রদের ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছিল। সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলামের এক সময়ের অনুসারী তাবলিগকর্মী মাহফুজুল হান্নান মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে ওয়াসিফের বিরুদ্ধে ছাত্রদের উস্কে দেন। মাহফুজুল হান্নান কাকরাইল মারকায মসজিদের দায়িত্বশীল কেউ না হলেও তার প্রভাব বেশি।

এ প্রসঙ্গে সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলামের ছেলে মাওলানা ওসামা ইসলাম বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আজ  (মঙ্গলবার) শুরা সদস্যরা বৈঠক করেছেন। ভবিষ্যতে কাকরাইল মসজিদের যেকোনও সভায় শুরা সদস্যদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন। আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি অতিথি আগমনের বিষয়েও বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হবে সেটি কার্যকর হবে।

 আরও পড়ুন:

কাকরাইলে তাবলিগ জামাতের দু’গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গরমে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, মার্কেটে ভিড় বাড়ছে সন্ধ্যায়
গরমে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, মার্কেটে ভিড় বাড়ছে সন্ধ্যায়
রাফাহতে অভিযানের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে ইসরায়েল
রাফাহতে অভিযানের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে ইসরায়েল
সুন্দরবনে আগুন
সুন্দরবনে আগুন
এখনও অচল লাইন, সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়
এখনও অচল লাইন, সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ