X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেলুন বিক্রেতারাই তৈরি করছে হাইড্রোজেন গ্যাস!

সাদ্দিফ অভি
০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০৪:০৭আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০৮:৪৭

বেলুন বিক্রেতারাই তৈরি করছে হাইড্রোজেন গ্যাস! হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে গ্যাস বেলুন ফোলানোর কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে হাইড্রোজেন গ্যাস। হিলিয়াম গ্যাসের আমদানি মূল্য বেশি বলে কম মূল্যে বেলুন বিক্রির জন্য বিক্রেতারা নিজেরাই এই হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করছে! ফলে এসব বেলুন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় কোনও রকম নিরাপত্তা ও নির্দেশনা ছাড়াই নিজেদের তৈরি এই গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে বেলুনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের কাজ এভাবে অনুমোদনহীনভাবে গ্যাস তৈরি বন্ধ করা। আর পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় এ কার্যক্রম চললেও শাহবাগ থানা বলছে, এ বিষয়ে তাদের জানা নেই।

গত শনিবার ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে ১০ জন অগ্নিদগ্ধ হন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় রাইদা পরিবহনের একটি বাসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের সবার কাছে গ্যাস বেলুন ছিল। হঠাৎ করে গ্যাস বেলুনগুলো বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়।

শিশু পার্কসহ রাজধানীর প্রায় অনেক সিগন্যালেই দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এই হাইড্রোজেন গ্যাস বেলুন। বিভিন্ন কার্টুনের অবয়বে বানানো প্লাস্টিকের বেলুনেও ব্যবহৃত হচ্ছে হাইড্রোজেন গ্যাস। এই গ্যাস তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সালফিউরিক অথবা হাইড্রোক্লোরিক এসিড। অ্যাসিডের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে জিংক। রাসায়নিক বিক্রিয়া শেষে উপজাত হিসেবে তৈরি হচ্ছে হাইড্রোজেন গ্যাস। তলানি হিসেবে জমছে জিংক সালফেট অথবা জিংক ক্লোরাইড লবণ। বিক্রেতারা সাধারণত গাড়ির ব্যাটারি থেকে এসব এসিড সংগ্রহ করেন।

বেলুন বিক্রেতারাই তৈরি করছে হাইড্রোজেন গ্যাস! শাহবাগে সরেজমিনে দেখা যায়, একটি বেলুনের দোকানে চারিদিক দিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে বিক্রির জন্য তৈরি করা হচ্ছে গ্যাস বেলুন। দোকানের ভেতর বড় গ্যাসের সিলিন্ডার রয়েছে পাঁচটি। এগুলোতে রয়েছে নিজ উদ্যোগে উৎপাদিত হাইড্রোজেন গ্যাস।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দোকানের কর্মচারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করলে খরচা বেশি। তাই আমরা নিজেরাই গ্যাস বানাই। না বানাইলে তো এই দামে বেলুনের ব্যবসা করা যাবে না।’ এসবের মধ্যে অনেক ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাম করতে অইলে এহানে থাকা লাগবো। কিছু করার নাই।’ বেলুনে ব্যবহৃত গ্যাস শাহবাগ এলাকার আশেপাশেই প্রস্তুত করা হয় বলেও জানান তিনি।

 বেলুন বিক্রেতা ফজর আলী বলেন, ‘সবাই কেনে গ্যাস বেলুন। পুলিশ, র‌্যাব সব। আজ পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয় নাই। তবে আগুনের কাছে গেলে বিকট শব্দে ফাটবে এটা নিশ্চিত।’

এসব গ্যাস বেলুন নিজের নিরাপত্তা বিবেচনা করে ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন রসায়নবিদ এবং বিস্ফোরক নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বেলুন ফেটে গেলে কাছের সামান্য সিগারেটের আগুনই ঝলসে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নীলুফার নাহার বলেন, ‘হাইড্রোজেন গ্যাস হিলিয়াম থেকে অপেক্ষাকৃত হালকা এবং আকাশে আরও বেশি উচ্চতায় যেতে পারে বলে এর ব্যবহার করা হয় বেলুনে। তবে আগুনের সংস্পর্শে আনলে তা বিস্ফোরিত হবে। হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তত করা খুবই সহজ। পানিকে ইলেক্ট্রলাইট করলেই হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।’

বেলুন বিক্রেতারাই তৈরি করছে হাইড্রোজেন গ্যাস! বিস্ফোরক অধিদফতরের মুখ্য পরিদর্শক শামসুল আলম বলেন, ‘পুলিশের কাজ এভাবে অনুমোদনহীনভাবে গ্যাস তৈরি বন্ধ করা। কারণ, বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদনে অনেক প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। যারা বেলুনে এই গ্যাস ব্যবহার করে, তারা এলাকাভিত্তিক। বিভিন্ন এলাকায় শুধুমাত্র এসিড এবং আল্যুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন ধাতু মিশিয়ে তারা হাইড্রোজেন গ্যাস বানায়। পুলিশ প্রশাসনকে আমরা বহুবার চিঠি দিয়ে দেখামাত্রই এসব বন্ধ করার জন্য বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাস বেলুনের ব্যবহার আমরা চাইলেই বন্ধ করতে পারি না। কারণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। এটাকে আমরা নিজ দায়িত্বে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এগুলো আগুনের সংস্পর্শে এলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’

শাহবাগ থানার উত্তরে গ্যাস বেলুন বিক্রি হয় কিন্তু হাইড্রোজেন গ্যাস বানানোর বিষয়টি জানা নেই উল্লেখ করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জানি এখানে গ্যাস বেলুন বিক্রি-টিক্রি করে, কিন্তু হাইড্রোজেন বানানোর বিষয়টি আমাদের নলেজে নেই। আমরা জানলাম, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
হাসপাতালে ফেলে যাওয়া শিশুটিকে দত্তক নিতে ১১ দম্পতির আবেদন

/ইউআই/এমও/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন