X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগেও ডিবি পরিচয়ে বাসায় লোক এসেছিল: অপহৃত ব্যবসায়ী সজলের মা

‌‌আমানুর রহমান রনি
১৭ মার্চ ২০১৮, ২২:৪৫আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৮, ২২:৫৩

অপহৃত ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী (ছবি সংগৃহীত) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যে বাসাটি থেকে ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী (৪৬) অপহৃত হয়েছেন, ওই বাসায় এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় হানা দেওয়া হয়েছিল। কখনও ডিবি, কখনও অন্য বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছিল আগন্তুকরা। তবে তখন এ ব্যবসায়ীকে অপহরণের চেষ্টা হয়নি। তারা সজল চৌধুরীর সঙ্গে তার সাবেক স্ত্রীর সমস্যার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে চলে আসতো। অপহৃত সজল চৌধুরীর মা দিলু আরা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান।

গত ১১ মার্চ রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ১৩ নম্বর সড়কের ৯৩৮ নম্বরের ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করা হয় সজল চৌধুরীকে। এই বাসায় তিনি গত দুই বছর ধরে তার মা ও সন্তান নিয়ে ভাড়া আছেন। বাসাটিতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।

সজল চৌধুরীর মা দিলু আরা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মিজানুর রহমান চৌধুরী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। ছেলেকে তিন মাসের গর্ভে রেখে স্বামী যুদ্ধে যান। আর ফিরে আসেননি। এরপর ছেলেকে নিয়ে লড়াই করে এ পযন্ত এসেছি। আমি কোনও ভাতা নেই না। রাষ্ট্রের কাছে কিছু চাইও না। আমার ছেলে কষ্ট করে আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েছে। কিন্তু তাকে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হলো। কোথায় নিলো, কারা নিলো? পাঁচ দিনেও কেউ বলতে পারে না।’

দিলু আরা বেগম আরও বলেন, ‘এই ঘটনার আগেও আমাদের বাসায় ডিবি ও এসবি পরিচয় বিভিন্ন লোক এসেছিল। তারা সজলের সঙ্গে তার সাবেক স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি নিয়ে কথা বলতো। তখন তারা আমার ছেলেকে ভালো বলেই চলে যেত। বাসায় বসেই কথা বলতো তারা। কিন্তু এবার তাকে মারধর করে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে সজল এক স্কুল শিক্ষিকাকে বিয়ে করে। ২০১৬ সালে তাকে ডিভোর্স দেয়। ডিভোর্সের পর ওই নারী তিনটি মামলা করে। সব মামলায় আমার ছেলে জামিনে আছে। কিন্তু কিছুদিন আগে ওই নারী আমার ছেলেকে ফোন দিয়ে হুমকি দেয়। এই দুনিয়ায় তাকে শিক্ষা দেওয়ার কথা বলে। এই হুমকির পরই আমার ছেলেকে মারধর করে তুলে নেওয়া হলো।’

দিলু আরা বলেন, ‘সজল খুব ভয়ে ভয়ে থাকতো। বাসা থেকে কোথাও বের হতো না। গাড়িতে করে কোর্টে যেতো আবার গাড়িতে করেই চলে আসতো। তারপরও রক্ষা পেলো না।’

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দিলু আরা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বাসায় আমরা দুই বছর ধরে ভাড়া থাকি। সেদিন রাতে (১১ মার্চ) কলিং বেল বাজলে সজল নিজেই দরজা খুলে। ঘরের ভেতর লম্বা লম্বা কয়েকটা ছেলে ঢুকেই তাকে মারধর শুরু করে। আমাকে বেঁধে রাখে। তারা মারধর করে সজলকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। নিরাপত্তাকর্মীকে তারা বাসা চেঞ্জ করার কথা বলে ওপরে ওঠে। আমাদের বাসা চেঞ্জ করে উত্তরা যাওয়ার কথা ছিল। এই বাসায় আমরা আর থাকবো না। অপহরণকারীরা তাও জেনে গেছে।’

চার কক্ষের ওই ফ্ল্যাটে বাসা পরিবর্তনের জন্য কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ঘটনার সময় সজলের স্কুলপড়ুয়া ছেলে তার কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল। সে যখন টের পেয়েছে, ততক্ষণে সজলকে তুলে নিয়ে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে চলে যায় অপহরণকারীরা।

সজল চৌধুরীর ছেলে শিহাব চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। জাগার পর দেখি বাবাকে নিয়ে তারা চলে গেছে। বাসার নিরাপত্তাকর্মী জানিয়েছেন, যাওয়ার সময় তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) বক্সটি খুলে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসের নম্বরও কেউ মনে করতে পারছে না। ঘটনাটি খুব দ্রুত ঘটছে। তাই কিছু মনে করতে পারছে না কেউ।’

ঘটনার পরপর ভাটারা থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে চাইলেও থানা তা নেয়নি বলে সজলের পরিবারের অভিযোগ। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর দিলু আরা বেগমকে ভাটারা থানা থেকে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর তার স্বাক্ষর নেয় পুলিশ। ১১ তারিখ ঘটনা ঘটলেও তার স্বাক্ষর নেওয়া হয় ১৬ মার্চ। তবে জিডির কাগজে দেখা যায়, জিডির তারিখ ১৩ মার্চ। জিডি নম্বর ৯০১।

অপহৃত সজল চৌধুরীর ছেলে শিহাব চৌধুরী বলে, ‘প্রথমে পুলিশ জিডিই নিতে চায়নি। পত্রিকায় রিপোর্ট হওয়ার পর আমাদের খবর দিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল (১৬ মার্চ)। এরপর পুলিশ কথা বলছে। জিডি হয়েছে। আমরা মামলা করতে চেয়েছি, কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি।’

এ অপহরণের জন্য দিলু আরা বেগম সজলের সাবেক স্ত্রী এবং ব্যবসার অংশীদার মেহেদী নামের একজনকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘মেহেদীর সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল সজলের। তার বিরুদ্ধে মেহেদী মামলা করেছিল। সজলও মেহেদীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। মেহেদী জামিনে আছে। এখন মেহেদী এবং সজলের সাবেক স্ত্রী মিলে গেছে। এরপর সজলকে লোক দিয়ে অপহরণ করিয়েছে।’

সজল চৌধুরীর আইনজীবী সাইদুর রহমান মানিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেহেদীর  নামে সজল একটি অর্থ আত্মসাতের ও প্রতারণার মামলা করেছিলেন। আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। এ মামলায় মেহেদী জামিনে রয়েছেন। এছাড়া অন্য মামলার বিষয়ে আমি জানি না।’

বিত্তশালী হলেও টাকা-পয়সা সব সজল চৌধুরীর নিজের কাছেই থাকতো। বৃদ্ধ মা ও কিশোর ছেলে শিহাব সম্পত্তির হিসাব-নিকাশ কিছুই জানেন না। শিহাব বলে, ‘আমাদের কাছে কোনও টাকা-পয়সা নেই। আব্বুর কাছেই সবকিছু। আমাদের বাসায় এখন খাবারও নেই।’

ঘটনার পাঁচদিন পর মামলা

অপহরণের পাঁচদিন পর এই ঘটনায় ভাটারা থানা মামলা নিতে রাজি হয়েছে। শনিবার দিনভর সজল চৌধুরীর মা দিলু আরা বেগমের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ একটি এজাহার নিয়েছে। সজলের খালাতো ভাই নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ সকালে একবার ভাটারা থানায় আমাদের ডেকেছিল। এরপর থানা থেকে আসার পর দুপুর ২টার দিকে আবার আমাদের ফোন দিয়ে থানায় নেওয়া হয়। পুলিশ বলল, এই ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে।’ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যেসব অভিযোগ করেছি, তা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। কারও নাম লেখা হয়নি। আমরা দুজনের নাম বলেছিলাম, তাও লেখা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রবিবার সকালে আমাদের মামলার কপি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এর আগে তারা এজাহার থানার বলিউমে তুলতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে। এছাড়াও সকালে নাকি মামলাটি কোর্টে পাঠানো হবে।’

ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লাল মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ঘটনায় সজলের মা দিলু আরা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-২৯।’

শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মাহফুজুল ইসলাম রাসেল ব্যবসায়ী সজল চৌধুরীর মায়ের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা কথা বলেন। তিনি ঘটনার বর্ণনা শোনেন। শিগগিরই সজলকে পাওয়া যাবে বলেও তার মাকে আশ্বস্ত করেন তিনি। সজলের খালাতো ভাই নাসির বলেন, ‘পুলিশ আমাদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছে। তারা তদন্ত করছেন। সজলকে ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন বলে তারা মনে করছেন।’

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসায়ী সজল অপহরণের ঘটনায় থানায় জিডির পর মামলা হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে।’

 

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার