শহীদ সাত শিক্ষককে সম্মাননা দিল ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাত জন শহীদ শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীকে সম্মাননা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। তারা হলেন শহীদ অধ্যাপক ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আবু নাসের ম. মুনীরউজ্জামান, আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা এবং এস এম রাশিদুল হাসান।
শনিবার (২৪ মার্চ) বিকালে ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শিক্ষকদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যরা সম্মাননা গ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড -২০১৮’ পুরস্কারও দেওয়া হয়।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব রঞ্জন কর্মকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং শহীদ শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার।
বীর বিক্রম ড.তৌফিক ই-ইলাহী বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং এখনও নিচ্ছেন। তিনি ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করেছিলেন। আর এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।’
বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাব্কে মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের মন্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, ‘হেনরি কিসিঞ্জার দেখে যাক বাংলাদেশ কত এগিয়ে। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে দেশের শিল্প-প্রযুক্তি, সাহিত্য, ঐতিহ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য একটি গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি আহ্বান জানান।
উপাচার্য ড. মো আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী শিক্ষকগণ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব ধরনের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা বিভিন্ন আন্দোলনের যৌক্তিকতা ছাত্রদের সামনে তুলে ধরে আন্দোলন বেগবান করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহায়তা করার জন্যে তারা পাকিস্তানি শাসকদের ক্রোধানলে পড়েন। এছাড়াও তারা ছিলেন মুক্তচিন্তার মানুষ। এ কারণে পাকিস্তানি শাসকরা এ দেশকে মেধাশূন্য করার জন্যে তাদের হত্যা করে। তাদের অবদানের কথা জাতি কখনও ভুলবে না।’
অধ্যাপক ড. গোবিন্দচন্দ্র দেবের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন গোবিন্দচন্দ্র দেব দর্শন পরিবারের পরিচালক ও দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া। জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার সন্তান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেঘনা গুহঠাকুরতা। আবু নাসের ম. মুনীরউজ্জামানের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার সন্তান আবু মুসা মোহাম্মদ নাসিরজ্জামান ও লুলু নাসরিন। মুনীর চৌধুরীর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার সন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী। মোহাম্মদ আনোয়ার পাশার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার নাতি শাওকী আক্তার এবং এস এম এ রাশিদুল হাসানের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার সন্তান মাহমুদ হাসান, সুরাইয়া আমিনা ও রোকাইয়া হাসিনা।
শহীদ শিক্ষকদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন ড. তৌফিক-ই-ইলাহী এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবী শিক্ষকদের স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।