প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রতিবাদে শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের অবস্থান কর্মসূচিতে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি পোড়ানো হয়েছে বলে বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে জানানো হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। তাদের দাবি, শুরুতে একটি ব্যানারে আগুন দেওয়া হলেও বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে দেখে ব্যানারের সে অংশের আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
জানা যায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ একটি ব্যানার পোড়ানোর ছবি প্রকাশের পর তা ভাইরাল হয়ে যায়। গুজব ছড়ায়, শাহবাগে বঙ্গবন্ধুর ছবি পুড়িয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। তবে সেই সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, অনেক খড়কুটা ও পোস্টারে জ্বালানো আগুনের মধ্যে হঠাৎ একটি ব্যানারে আগুন দেওয়া হয়। ব্যানারটি উল্টানো থাকায় নিচে কার ছবি রয়েছে তা দেখা যায়নি। ব্যানারে আগুন দেওয়ার পর দেখা যায় এতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। এরপরই ব্যানারের বাকি অংশের আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার জানান, ব্যানারটিতে আগুন দেওয়ার সময় তা উল্টানো (সাদা অংশ ওপরে থাকায়) থাকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখা যায়নি। তবে তা নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আগুন নিভিয়ে জাতির জনকের ছবি সম্বলিত ব্যানারের অংশটুকু যত্ন করে রেখে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে বড় হয়েছি। আমাদের হাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি পোড়ানো হবে এটা কখনোই হতে পারে না। আমরা ছবিটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আগুন নিভিয়ে ফেলেছি। বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ ব্যানারের বাকি অংশটুকু রেখে দেওয়া হয়েছে। উপস্থিত সবাই এ দৃশ্য দেখেছে। একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়াচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনও ছবি শাহবাগে পোড়ানো হয়নি। একটি ব্যানারে আগুন দেওয়া হয়েছিল। তবে জাতির জনকের ছবিটি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে অংশের আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। ছবিসহ ব্যানারের সেই অংশটুকু এখনও রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, এর আগে রাত ৯টায় সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালসহ ৬ দফা দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ব্যানারে তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- (১) সামাজিক মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। (২) মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। (৩) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিসিএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন করতে হবে। (৪) মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। (৫) স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার ও বংশধরদের চিহ্নিত করে সরকারি সব চাকরি থেকে বহিষ্কার, নাগরিকত্ব বাতিল ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরত নিতে হবে। (৬) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও খবর: কোটার যৌক্তিক দাবি তুলুন, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবেন না: ছাত্রলীগ সম্পাদক
কোটা বাতিলের প্রতিবাদে শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অবস্থান, যান চলাচল বন্ধ