X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

চোখে ভয়, মনে শঙ্কা, মেয়েটি বাঁচবে তো!

সাদ্দিফ অভি
০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৪৪আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ২০:২৯

বার্ন ইউনিটের আইসিইউয়ে চিকিৎসাধীন মেয়ে, পাশের হাই ডিপেন্ডেন্সি সেন্টারের বারান্দায় প্রতীক্ষারত বাবা-মা ও এক স্বজন। শুয়ে বসে হেঁটে কোনোভাবেই স্বস্তি নেই যেন। একবার বসছেন, একটু পর হেঁটে সামনে থেকে কয়েক মিনিট ঘুরে এসে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকছেন। কখনও এগিয়ে গিয়ে মেয়ের খবর নিয়ে আসছেন। প্রতি মুহূর্তে কলিজার টুকরো সোনার মেয়েটার কী হয় না হয় সেই ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন আগুনে দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা-মা।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) খুব সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) সামনে যেতেই দেখা গেল মা শুয়ে আছেন। চোখ বন্ধ কিন্তু ঘুমাননি। কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে মেয়েটির সুস্থতা কামনায় দোয়া করছেন। দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলেন, ঘুমানোর চেষ্টা করলেও পারছেন না। শুধু চোখ বন্ধ করে থাকছেন। আইসিইউ থেকে ডাকলেই উঠে বসছেন। ভীত দৃষ্টিতে দিনভর তিনি তাকিয়ে থাকেন আইসিইউ’র দিকে। দু‘চোখে শূন্যতা। স্বজনরা কেউ কেউ আসছেন, পাশে বসছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার মতো শক্তিও যেন নেই মায়ের। সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই নিজেকে আর সামলাতে পারেন না, কেঁদে ফেলেন নিমিষেই। কেঁদেই সবার কাছে মেয়ের জন্য দোয়া চান তিনি।

বার্ন ইউনিটের হাই ডিপেন্ডেন্সি সেন্টারের সামনে বাবা’র পাশে মাঝে মাঝে এসে বসছেন অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর ভাই (বামে)। গত শনিবার (৬ এপ্রিল) আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গেলে এই ছাত্রীকে ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

আজ তিনদিন। শত শত সাংবাদিক, শুভাকাঙ্ক্ষীর টেলিফোন আর স্বজনদের আহাজারির মধ্যে সময় কাটছে এই পরিবারের। সার্বক্ষণিক সেখানে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকছে মেয়েটির মামা, ভাই এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়। এইচডিইউ’র করিডোর দিয়ে সোজা গেলেই ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। সেখানে গতকাল থেকে লাইফ সাপোর্টে আছে মেয়েটি। দমবন্ধ সময় সম্পর্কে বলতে গিয়ে চোখেমুখে শঙ্কা নিয়েই বাবা বলেন, মাঝে মাঝে আইসিইউ থেকে ডাক আসে। কলিজা কুঁকড়ে যায়। সেখানে উপস্থিত স্বজনরা আঁতকে ওঠেন প্রতিবারই।

মেয়েটির বাবা এ কে এম মানিক প্রথমদিন থেকেই নিজেকে শক্ত করে রেখেছেন, মেয়ের চিকিৎসা শেষ করে তাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু কতক্ষণ। একটু অবসর পেলে মোবাইলে মেয়ের ছবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছেন। চিকিৎসক, আত্মীয় সবার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলেও হঠাৎ হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠছেন। যারাই খবর নিতে আসছেন, তার কাছেই মেয়ের জন্য দুই হাত পেতে কেবল দোয়া চেয়ে কাঁদছেন। দূরের স্বজনদের সঙ্গে টেলিফোনে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহকে বারবার স্মরণ করি’।

তার সামনে গিয়ে কেউ দাঁড়ালে তিনি বলছেন, ‘আমার মা-টার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। চিকিৎসকরা তাদের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছেন, বাকিটা আল্লাহর ওপর।’ এই বাবা যেন তার মেয়েকে চোখের আড়াল করতেই চান না। নিজ মোবাইলে মেয়ের ছবি দেখতে দেখতে অজানা শঙ্কায় চোখের কোনায় জল জমে। বাইরে থেকে দেখতে যতটা স্থির দেখায় ভেতরে ভেতরে ঠিক ততটাই অস্থিরতার মধ্যে আছেন তিনি। তাই বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকতে পারছেন না। কখনও ছুটে যাচ্ছেন আইসিউ’র সামনে, কখনোবা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে। আর মেয়েটির ভাই আছেন ছোটাছুটিতে। কখনও ওষুধ, কখনও খাবার আবার কখনোবা বোনের খোঁজ নিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী এই ছাত্রীকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার নির্দেশ দিলেও সেখানে যোগাযোগ করে এখন সিঙ্গাপুরে নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্তলাল সেন। তিনি জানান, এই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য মেয়েটিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব না। সকালে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের পর তিনি বলেন, ‘মেয়েটির শারীরিক যে অবস্থা তাতে পাঁচ ঘণ্টা ফ্লাই করা খুবই রিস্কি বলে মনে করছেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। মেয়েটির যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো স্থিতিশীল হলে তখন তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া যাবে। আমরা এই বিষয়টি তার পরিবারকে জানিয়েছি, তারাও একমত পোষণ করেছেন।’

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মেয়েটির ‘এখনও শঙ্কা কাটেনি’, অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। সকালে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা তার ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই এখন ওই ছাত্রীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: 

মাদ্রাসাছাত্রীকে এখনই সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব না: সামন্ত লাল

ওই ছাত্রীকে বাঁচাতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি: ঢামেক পরিচালক

দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর শেষ কথা ‘বিচার যেন হয়’

ফিডব্যাক এলে দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় চার মাদ্রাসাছাত্রকে সন্দেহ পরিবারের

 

মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা: সন্দেহজনক ৬ আসামি গ্রেফতার

ফেনীর সেই মাদ্রাসাছাত্রীর চিকিৎসায় ৮ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড

ফেনীর সেই মাদ্রাসাছাত্রী শঙ্কামুক্ত নয়

মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টায় শিক্ষকসহ আটক ২

পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

আমি এই ঘটনার বিচার চাই: সেই মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা

মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা: ‘অগ্নিসংযোগকারীদের পরনে ছিল বোরকা, হাতমোজা ও কালো চশমা’

ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: সোনাগাজী মাদ্রাসায় পাঠদান স্থগিত, অধ্যক্ষ সাময়িক বরখাস্ত

 

/ইউআই/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করলে হামাস ক্ষমতায় থেকে যাবে: নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করলে হামাস ক্ষমতায় থেকে যাবে: নেতানিয়াহু
ব্যাংক চলাকালীন এনবিআরকে অভিযান চালাতে হবে: হাইকোর্ট
ব্যাংক চলাকালীন এনবিআরকে অভিযান চালাতে হবে: হাইকোর্ট
যেভাবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে চুল মোলায়েম হবে
যেভাবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে চুল মোলায়েম হবে
জিএসটির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
জিএসটির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?