ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে নিরপরাধ এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি অভিযুক্ত ও নিরপরাধ শিক্ষার্থীর কারও সঙ্গে কথা না বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারুফ আহমদ। তিনি এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ও সম্মানহানির কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২৮ মার্চ নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ১২ ব্যাচের মিরাজুল ইসলাম মারুফ ওরফে এম আই মারুফের পরিবর্তে একই বিভাগের ১৩ ব্যাচের মারুফ আহমদকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদ খান রাতুল (আইডি # ই১৬০৩০৪০৭২) এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মারুফ আহমদকে (আইডি # ই১৭০৬০২০৪১) বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়।
তবে এ বিষয়ে অভিযোগকারী ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গত ২৮ তারিখে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমি মারুফ ও রাতুলের নাম উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দেই। মারুফের ব্যাচ বা আইডি নম্বর জানা না থাকায় তা উল্লেখ করতে পারিনি। তবে তদন্তে থাকা শিক্ষককে আমি মিরাজুল ইসলাম মারুফের ছবি দেখিয়েছিলাম। তবু ভুল শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে শুনেছি।’
জানা যায়, প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য ওই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। তবে তদন্তে গাফিলতি ধরা পড়ায় এখন তাদের নাম প্রকাশ করতে চাইছে না কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মারুফ আহমদ বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার বিভাগীয় প্রধান আইডিকার্ডের ফটোকপি নেন। এরপর গতকাল (বুধবার) বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমার বহিষ্কারাদেশের খবর দেখে বিব্রত হই। কোনও ধরনের অপরাধে জড়িত না থেকেও বহিষ্কার হওয়ায় আমি ও আমার পরিবারের সম্মানহানি ঘটেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
এ বিষয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান আকরাম মল্লিক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রক্টর অফিস থেকে আমার কাছে মৌখিক তথ্য চাওয়া হয়। পরে প্রক্টর অফিস থেকে চাওয়া তথ্যানুযায়ী আমি তাদের মারুফ আহমদের তথ্য দিয়েছি।’
তবে তদন্তে গাফলতি থাকলেও নিজেদের পক্ষেই সাফাই গাইছেন প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গেলে তো ভুল-ত্রুটি হয়। অনেক সময় আমাদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রাথমিক ভাবে মারুফের নাম জেনেছিলাম। দু’জনই মারুফ, বিভাগও একই কিন্তু ব্যাচ ভিন্ন হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই এই আদেশ বাতিল করেছি এবং প্রকৃত অপরাধীকে সাময়িক বহিষ্কার করে আদেশ দিয়েছি। এছাড়া এই বিচারই চূড়ান্ত নয়, কারণ সাময়িক বহিষ্কার হওয়াদের ‘কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না’এ মর্মে কারণ দর্শাতে বলা হয়। এরপর সার্বিক বিবেচনায় শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।'