X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়েরপন্থীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ সাদপন্থী রহিমের মৃত্যু

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ জুন ২০১৯, ১৮:০৯আপডেট : ১০ জুন ২০১৯, ২১:৫৮

আব্দুর রহিম

তাবলিগ জামাতের সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থীর দ্বন্দ্বের জেরে জুবায়েরপন্থীদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ আব্দুর রহিম (৩০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন। সোমবার (১০ জুন) দুপুর তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত আব্দুর রহিমের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি এলাকায়। মৃত্যুর একদিন আগে রবিবার (৯ জুন) কিশোরগঞ্জের একজন ম্যাজিস্ট্রেট বার্ন ইউনিটে উপস্থিত হয়ে আব্দুর রহিমের জবানবন্দি নিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি কয়েকজনের নাম বলেছেন।
নিহতের বড় ভাই আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘গত ১৯ মে রাতে তারাবি নামাজের পর মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে পেছন থেকে জুবায়েরপন্থী লোকজন রহিমের গায়ে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল ভর্তি করেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আগে সবাই সাদ অনুসারী ছিল। পরে জুবায়ের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ হওয়ার পর থেকে জুবায়ের অনুসারীরা আমাদের সব কর্মকাণ্ডকে বাধা দিয়ে আসছে। আর এ কারণেই আজ তাকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।’
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার পূর্বপাড়ার মো. মোস্তফার ছেলে আব্দুর রহিম। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি এক সন্তানের বাবা। আব্দুর রহিম তার মামা মামুনুর রশিদের ব্যবসা (কসমেটিকস ও ব্যাগ) দেখাশোনা করতেন। বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল জানান, তার শরীরের পেছনে ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত দুই হাত ও মুখসহ ২৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
এ ঘটনায় নিহতের মামা মামুনুর রশিদ কটিয়াদি থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলো মাহমুদুল হাসান সুমন ও সোহেল। তবে ঘটনার সঙ্গে আরও চার থেকে পাঁচজন জড়িত। মৃত্যুর আগে আব্দুর রহিম তাদের সবার নাম বলে গেছেন।
মামুনুর রশিদ বলেন, ‘গত ১৭ মে তাবলিগ জামাত নিয়ে মসজিদে যাওয়ার পর জুবায়েরপন্থীরা আমাদের বের করে দেয়। এই ঘটনার দুইদিন পর আমার ভাগ্নের গায়ে আগুন দেওয়া হয়। আমরা এর বিচার চাই।’ তিনি বলেন, ‘সারাদেশের মসজিদে এভাবে আমাদের মারধর করা হচ্ছে। মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে। তারা জঙ্গিগোষ্ঠী। আমরা আল্লাহর পথে আছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জুবায়ের আহমদের কাছে জানতে চেয়ে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কটিয়াদি থানায় ২০ মে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা কারাগারে রয়েছে। তবে মামলায় নাম থাকা অভিযুক্ত কলি এখনও পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কটিয়াদি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুর দোহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৭ মে কটিয়াদি উপজেলার একটি মসজিদে জামাত এসেছিল। তাদের খেদমতের জন্য স্বাদপন্থী আব্দুর রহিম গিয়েছিল। তখন জুবায়েরপন্থী সোহেল, সুমন ও কলি তাদের বের করে দেয়। এরই জের ধরে ১৯ মে আগুন দেওয়া হয়। আমরা সুমন ও সোহেলকে গ্রেফতার করেছি। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘মূলত দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।’
বাংলাদেশে তাবলিগের বর্তমানে দুটি গ্রুপ। তাদের গ্রুপিংয়ের কারণে গত বছর বিশ্ব ইজতেমা দুইভাগে অনুষ্ঠিত হয়। গত কয়েক বছর ধরে তাবলিগ জামাতের নেতৃত্ব নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। এখন তাবলিগ দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্দলভী এবং আরেক অংশের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। সাদ দেওবন্দ বিরোধী এবং জুবায়ের দেওবন্দপন্থী। মাওলানা জুবায়েরের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশের হেফাজত ও কওমিপন্থীরা। ২০১৮ সালে ইজতেমায় মাওলানা সাদ ঢাকায় এলেও তাকে ফিরে যেতে হয় ইজতেমায় যোগ না দিয়ে।

 

 

/এআরআর/ওআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রথম ধাপে ৭ শতাংশ কোটিপতি প্রার্থী
উপজেলা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ৭ শতাংশ কোটিপতি প্রার্থী
আপাতত মেনশন নয়, আপিল বিভাগে সিরিয়াল অনুযায়ী চলবে মামলার শুনানি
আপাতত মেনশন নয়, আপিল বিভাগে সিরিয়াল অনুযায়ী চলবে মামলার শুনানি
ধূসর ছবির ঝকঝকে প্রিন্ট!
ধূসর ছবির ঝকঝকে প্রিন্ট!
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?