X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০১ জুলাই ২০১৯, ১৫:০৩আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৯, ১৬:০৫

শ্রদ্ধা জানানোর জন্য খুলে দেওয়া হয় হলি আর্টিজান বেকারি হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন দেশি-বিদেশি নাগরিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। ভয়াবহ জঙ্গি হামলার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার (১ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর হলি আর্টিজান বেকারির এই ভবনটি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেখানে ফুলে ফুলে নিহতদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর বলেন, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছি। সারাবিশ্বেই জঙ্গি হামলা হচ্ছে। শুধু ২০১৮ সালেই ইউরোপজুড়ে ১২৯টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে বোঝা যায়, জঙ্গিরা বৈশ্বিকভাবে নিশ্চিহ্ন হয়নি।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, তিন বছর আগে আজকের এই দিনে হলি আর্টিজানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়। এই হামলার সঙ্গে নব্য জেএমবি'র যারা জড়িত ছিল তারা সকলেই নিহত হয়েছে। অনেকে অভিযানে নিহত হয়েছে। কেউ জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ হামলার দ্রুত বিচারকাজ শেষ হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে নিহতের পরিবার তাদের অপূরণীয় ক্ষতির ক্ষেত্রে একটু হলেও সান্ত্বনা পাবে। তিনি বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার মতো আর কোনও ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে লক্ষ্যে পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কাজ করছে।
এদিকে সকাল ১০টার আগেই হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সেলিমা রহমান বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর সরকার কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
ফুলে ফুলে শ্রদ্ধা ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাস করেন ইতালিয়ান নাগরিক ফাদার রিকার্দো তোবানিল্লি। ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে ফুল দিতে এসেছিলেন তিনি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয়। অল্প কিছু মানুষ অসুবিধা করছে। এজন্য কিছু চিন্তা আছে, সতর্কতাও আছে। তবে ভয়ের কারণ নেই। আমরা নিরাপদেই আছি। রিকার্দো জানান, নিহত ৯ ইতালিয়ান নাগরিকের মধ্যে ছয় জনই তার পরিচিত ছিল। ঘটনার দুদিন আগেও ক্রিস্টিয়ানার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভাবতেই পারেননি দুদিন পরেই তার এমন মৃত্যু হবে।
৪৬ বছর ধরে এ দেশে বসবাস করছেন ফাদার আতিলিও। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর সবাই সচেতন হয়েছে। বিপদ যেকোনও সময় আসতে পারে। আর কোনও সর্বনাশ যাতে না হয়। এই ঘটনায় সবাই শিক্ষা পেয়েছে, সচেতন হয়েছে। আমি ৪৬ বছর ধরে আছি। ভয় কিংবা বিপদ কোনোটাই বোধ করি না।
আনেজি বারেলো নামে আরেক ইতালিয়ান নাগরিক বলেন, হলি আর্টিজানের এই একটি ঘটনা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করে না। বাংলাদেশের মানুষ অনেক শান্তিপ্রিয়। বাংলাদেশের মানুষ এসব পছন্দ করে না। একটি ছোট গ্রুপ এ কাজ করেছে। সেই রাতের ঘটনা মনে করে তিনি বলেন, আমি সেদিন ইতালিয়ান অ্যাম্বাসেডরের বাসায় ডিনার করছিলাম। হঠাৎ এই খবর পাই। আমরা খুব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। আমার পরিচিত বন্ধুরা হলি আর্টিজান বেকারিতে ছিল। বন্ধু ক্লাউডিয়ার সঙ্গে কথা হয় ভোর ৪টায়। সে অনেক কষ্টে বেঁচে গিয়েছিল। সে ইতালি ফিরে গেলেও আবার বাংলাদেশে এসেছে। সে এখনও বাংলাদেশেই কাজ করে। আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। উল্লেখ্য আনেজি বারেলো প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর স্ত্রী।

এছাড়া সকাল সাতটায় ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং বেলা ১১টায় ইতালির রাষ্ট্রদূত হলি আর্টিজান বেকারিতে এসে নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  

শাওনের ছবি হাতে মায়ের কান্না
বেলা ১১টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে আসেন এই হামলায় নিহত জাকিরুল হাসান শাওনের মা মাসুদা বেগম। দুই হাতে শাওনের ছবি। একটি রক্তাক্ত। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার বিচার আমি পেলাম না। আমার ছেলেটাকে র‌্যাব, পুলিশ নির্যাতন কইরা মারছে। ওরে জঙ্গি মনে করছিল। কিন্তু দুই বছর পর ঠিকই প্রমাণ হইছে ও জঙ্গি ছিল না। মাসুদা বেগম বলেন, আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না। মালিক মাসে মাসে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়। ওতে কোনোরকম চলি। আমা গো দেখনের কেউ নাই।

 

/এনএল/ওআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গুলিস্তানে কমিউনিটি পুলিশ সদস্যের মৃত্যু, সন্দেহ ‘হিট স্ট্রোক’  
গুলিস্তানে কমিউনিটি পুলিশ সদস্যের মৃত্যু, সন্দেহ ‘হিট স্ট্রোক’  
গরমে অসুস্থ হয়ে প্রার্থীর মৃত্যু, নিবার্চন স্থগিত
গোপালপুর উপজেলা পরিষদগরমে অসুস্থ হয়ে প্রার্থীর মৃত্যু, নিবার্চন স্থগিত
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
কোরবানির জন্য পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই সরকারের
কোরবানির জন্য পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই সরকারের
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে