X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে দরকার পরিকল্পনা

জাকিয়া আহমেদ
০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৫৯আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:৩১

লিভার সিরোসিসও একটি অসংক্রামক রোগ

দেশে দিন দিন অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। অতিরিক্ত তেল-চর্বি, চিনিযুক্ত খাবার, ধূমপান, দূষণ ও মানসিক চাপ এর অন্যতম কারণ। এছাড়া, কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম না করা, সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়াও এই রোগের বড় কারণ। ফলে অজান্তেই আমাদের শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার সিরোসিসসহ নানা অসংক্রামক রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার। 

পরিসংখ্যান বলছে, অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি দুই সেকেন্ডে একজন মারা যাচ্ছে। কেবল হৃদরোগেই মারা যাচ্ছে প্রতি তিন জনে একজন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে যেমন বহুমাত্রিক পরিকল্পনা নিতে হবে, তেমনি প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর-বি) করা ২০১৬ সালের এক গবেষণা দেখা যায়, প্রতি চার জনের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং তা অনিয়ন্ত্রিত। প্রতি চার জনের একজন ভুগছেন ডায়াবেটিসে এবং প্রতি পাঁচ জনের একজন স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন। এছাড়া, প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন।

মুন্সীগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের চার হাজার ৪৪২ জন মানুষের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছিল। এদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত ‘স্টেপস’ জরিপের তথ্য বলছে, অসংক্রামক রোগে ২০১২ সালে মৃত্যুর হার ছিল ৫২ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের অসংক্রামক রোগের কারণে অকালমৃত্যু ২৫ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে। আর এজন্য অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধের দিকেও নজর দিতে হবে।

আইসিডিডিআর’বি এর ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস-এর প্রধান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আলিয়া নাহিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ বাংলাদেশে দ্রুততম হারে বাড়ছে, যা এতদিন মূলত ধনী দেশের অবস্থাপন্ন মানুষের রোগ হিসেবে বিবেচিত হতো। এ কারণে বাংলাদেশের অতি দরিদ্র, অপুষ্টিতে ভোগা, সংক্রামক রোগে জর্জরিত এই বিশাল জনগোষ্ঠী কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি এই অসুখে ব্যাপকহারে আক্রান্ত হচ্ছে, এর কারণ দেখাসহ প্রতিকারের উপায় খুঁজে বের করা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘আশঙ্কার কথা হলো, দেশে যত মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত আছে, তার চেয়েও বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, কায়িক পরিশ্রমসহ স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করার পরামর্শ দেন তিনি।

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, অসংক্রামক রোগের জন্য প্রধানত দায়ী বায়ুদূষণ, আর্সেনিকযুক্ত পানি, ভেজাল খাবার, বেশি মাত্রায় কেমিক্যালযুক্ত ও সংরক্ষিত খাবার।

তিনি জানান, আইসিডিডিআর’বি প্রতিবছর চাঁদপুরের মতলব এলাকাতে ২ লাখ মানুষের ওপর জরিপ করে। তাতে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে প্রতি ১০টি মৃত্যুর মধ্যে ৩টির কারণ ছিল অসংক্রামক রোগ, আর এখন প্রতি ১০টি মৃত্যুর মধ্যে তা ৭টির কারণ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রিজওয়ানুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১০ বছর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জরিপে দেখা যায়, উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিল ১৭ দশমিক ৯, আর ১০ বছর পরের জরিপে সেটা হয়েছে ২৫ দশমিক ২। একইসঙ্গে, ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার এখন ৮ দশমিক ৪।’

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যকে অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য কার্যক্রম কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। সেজন্য ২৬টি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের মতামত নিয়ে জাতীয় বহু খাতভিত্তিক অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে ২০১৮ সালে।’ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডব্লিউএইচও’র মতে, হৃদরোগ-ডায়াবেটিস-ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগের জন্য ধূমপানসহ যেকোনও ধরনের তামাক ও চুইং টোব্যাকো, কায়িক পরিশ্রম না করা, অ্যালকোহল এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য— প্রধান এই চারটির মধ্যে কোনটাতেই আমাদের দেশের অবস্থা ভালো না।’

তিনি বলেন, ‘এসবের জন্য নিজেদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। পার্কের ব্যবস্থা থাকা, ফুটপাত ভালো রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কারণ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসার বাড়ছে। আবহাওয়ার কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এসব মিলিয়ে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে।’ আধুনিকায়ন, শহরায়নের কারণে অসংক্রামক রোগ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তবে এজন্য আমাদের প্রাইমারি প্রিভেনশন না হয়ে সেকেন্ডারি প্রিভেনশন গুরুত্ব পাচ্ছে। হাসপাতাল বাড়ানো হচ্ছে, এটা ঠিক আছে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ধূমপান বন্ধ করা, কায়িক পরিশ্রম করার মতো উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’ এই বিশেষজ্ঞের মতে, ভালো খাবার যেন পাই, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এগুলোর জন্য আনুপাতিক হারে কোনও কার্যক্রম নেই।  তাই সবার আগে এসবের দিকে নজর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

/এইচআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু
টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু
যে সাফল্যে নতুন ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের মাসফিয়া আফরিন 
যে সাফল্যে নতুন ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের মাসফিয়া আফরিন 
সারা দেশে আবারও ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
সারা দেশে আবারও ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
গরমে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে ‘স্বপ্ন’
গরমে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে ‘স্বপ্ন’
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু