করোনায় দেশের ৮৫ শতাংশ গৃহশ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে গৃহশ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা জোরদারের দাবি জানানো হয়েছে এক অনলাইন সেমিনারে।
‘আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস-২০২০’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবিনার) বক্তারা এই দাবি জানান। সুনীতি প্রকল্পের উদ্যোগে ও দৈনিক সমকালের সহযোগিতায় এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান এবং আইনি স্বীকৃতির মাধ্যমে গৃহশ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে তাদের সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করার জন্য নীতিনির্ধারক ও সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠন এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
সেমিনারে নারী মৈত্রী’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে তিনি করোনাকালে ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, বাড্ডা ও মিরপুর এলাকার মোট ৮৩ জন গৃহশ্রমিকের ওপর পরিচালিত এপ্রিল মাসের জরিপ তুলে ধরেন।
শাহীন আক্তার ডলি বলেন, ‘গৃহশ্রমিকদের ৮০ শতাংশের রয়েছে শিশুসন্তান, ৩০ শতাংশ শ্রমিকের বাসায় রয়েছেন বয়স্ক মানুষ। এসব এলাকার গৃহকর্মীদের কেউই করোনায় আক্রান্ত হননি। তবে তারা ঝুঁকিতে রয়েছেন। কোভিডের সময় কাজে যাচ্ছেন মাত্র ৫ শতাংশ গৃহশ্রমিক। বেতন পাননি ২৫ শতাংশ। ৩৫ শতাংশের ক্ষেত্রে নিয়োগ কর্তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এসব গৃহশ্রমিক সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ পেয়েছেন মাত্র দুই-তিন দিন চলার মতো। শতকরা ৯৯ জন গৃহশ্রমিকই করোনার বিষয়ে সচেতন। জরুরি যোগাযোগ রক্ষা করার বিষয়ে সচেতন ৬৫ শতাংশ। পূর্ববর্তী কাজের জায়গায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে ৫০ শতাংশের এবং গৃহে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৫ শতাংশ।’
সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘গৃহশ্রমিক নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে না পারলে গৃহশ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এর জন্য একটি আইনি কাঠামো প্রয়োজন। আইনি কাঠামো না করলে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা কঠিন। উপযুক্ত কারিকুলাম উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গৃহশ্রমিকদের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) মাধ্যমে সনদ দিতে হবে। গৃহশ্রমিকের পেশাগত মানোন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি নিয়োগকারীদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।’
সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, ‘করোনায় দেশের ৮৫ শতাংশ গৃহশ্রমিক কর্মহীন। শ্রমিকরা খুবই দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। গৃহশ্রমিকরা অনেকেই খণ্ডকালীন কাজ করতেন। এদের সিংহভাগই এখন কাজ হারিয়েছেন। সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল বাড়িয়ে গৃহশ্রমিকদের এর আওতায় আনতে হবে।’
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করতে হবে। কাজের দক্ষতা উল্লেখ করে গৃহশ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া গৃহশ্রমিকদের জন্য একটি মজুরি মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে।’
বিলস চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান সিরাজের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও যুক্ত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. ইসরাফিল আলম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজ আহমেদ, অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন, অভিনেত্রী ও সুনীতি প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর দীপা খন্দকার।
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে প্রতিবছর ১৬ জুন ‘আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস’ পালিত হয়ে থাকে।