এতদিনেও নিরসন হয়নি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে রাজধানীর যাত্রীদের সঙ্গে চালক-হেলপারের বাগবিতণ্ডা লেগেই আছে। সব বাসে লাগানো হয়নি ভাড়ার তালিকা। পরিবহন মালিক সমিতির নির্দেশের পরও চলছে ওয়েবিল সিস্টেমে। সরেজমিন জানা গেছে এসব তথ্য।
পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে ওয়েবিল সিস্টেমে কোনও গণপরিবহন চালানো যাবে না, সিটিং সার্ভিস চলবে না—এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল পরিবহন মালিক সমিতি। সময়ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। সমিতির দেওয়া সময় শেষ হয়েছে গত ১৩ নভেম্বর। তবু কার্যকর হয়নি সেই সিদ্ধান্ত।
২৪ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন রুট ঘুরে দেখা গেছে, ডিজেলচালিত বাসের পাশাপাশি সিএনজিচালিত বাসগুলোও ভাড়া বাড়িয়েছে ৪০-৪৫ শতাংশ। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া পড়ছে দুই টাকারও বেশি। কোথাও আবার তা সাড়ে তিন থেকে চার টাকা।
মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সড়কে মোবাইল কোর্টের অস্তিত্ব তেমন চোখে না পড়ায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বলছেন, সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর এমন হুঁশিয়ারি নতুন কিছু নয়। হুঁশিয়ারিই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
অথচ সরকারিভাবে শহরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আন্তজেলা বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ। নতুন ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি বাস কর্তৃপক্ষেরই দাবি তাদের গাড়ি গ্যাসে নয়, ডিজেলে চলে। কিছু গাড়িতে আবার গ্যাসের মিটারও খুলে রাখা হয়েছে।
রাস্তায় দেখা গেছে, রজনীগন্ধা, লাব্বায়েক, মৌমিতা, ঠিকানা, লাভলী, সালসাবিল, ট্রান্স সিলভা, বাহন, মনজিল এসব পরিবহনের গাড়ি এখনও চলছে ওয়েবিল সিস্টেমে। কারও কথার বা সিদ্ধান্তের গুরুত্ব নেই এসব পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের কাছে।
রাস্তার এই নৈরাজ্যময় পরিস্থিতি বিআরটিএ মনিটরিং করছে, তবে সংখ্যায় কম হওয়ায়, এর সুফল যাত্রীরা পাচ্ছেন না। এই অভিযান বা মনিটরিং বাস মালিক বা শ্রমিকদের কাছে কোনও গুরুত্বও পাচ্ছে না। বিআরটিএ মনিটরিং করছে দাবি করলেও প্রয়োজনের তুলনায় সে মনিটরিং অনেক কম।
গত ১০ নভেম্বর ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সিটিং সার্ভিস এবং গেটলক থাকবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্যাহ। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, রাজধানীতে চলবে না ওয়েবিল সিস্টেমও।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। পরদিন থেকেই দাম কমানোর দাবি বাদ দিয়ে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। সড়ক পথে তিন দিন এবং নৌপথে দুদিন ধর্মঘটের পর সরকারিভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ নভেম্বর থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে বাস ও লঞ্চ মালিক সমিতি। নৈরাজ্যের শুরু সেদিন থেকেই।
এ প্রসঙ্গে বাস মালিকদের সংগঠন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানিয়েছেন, এখনও যারা গেটলক, ওয়েবিল ও সিটিং সার্ভিস চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।